বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের রাতে প্রথম স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের রাতে প্রথম স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
নিহত গৃহবধুর নাম ফাতেমা বেগম(৩৫)।

২২ জানুয়ারি (সোমবার) উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মারুফ গোমস্তার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। ।

ফাতেমার স্বজনদের দাবী তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ধারণা সোমবার গভীর বা ভোর রাতে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। ফাতেমার স্বামভ আনোয়ার ও তার সদ্য বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রীকে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ আটক করার পর আবার ছেড়ে দিয়েছে।

সন্দ্বীপ থানার এস আই মো. জয়নুল বলেন, ‘হত্যা মামলা এখনো প্রমান হয়নি। মেডিকেল রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে লাশ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের স্বামী আনোয়ার হোসেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, নিহত ফাতেমা বেগম আড়াই বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। খুব মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন।’

জানা গেছে, ক্যান্সার রোগে অসুস্থ ফাতেমার সাথে তার স্বামীর দীর্ঘদিন ধরে বনিবনা হচ্ছিল না। এসব বিষয়ে থানা পুলিশের মাধ্যমে ২/৩ দিন আগে আপোষ সমঝোতাও হয়েছিল। কিন্তু রবিবার রাতে আনোয়ার নতুন আরেকটা বিয়ে করা স্ত্রী নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে এবং তার ছেলেমেয়েদের ঘর থেকে বের করে দেয়।

নিহত ফাতেমার ভাই পারভেজ এ প্রতিবেদককে জানান, আনোয়ার সোমবার সকাল ৮ টার দিকে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী কর্তৃক তার স্ত্রী খুন হয়েছে এবং তাকেও আটক করে রেখেছে এমন খবর তার ছেলেমেয়েদের মোবাইলে জানালে এলাকাবাসী গিয়ে ওই বাড়ী ঘেরাও করে।

নিহতের অন্যান্য স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি আরব প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রথম স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত ফাতেমা বেগমের মনোমালিন্য চলছিলো। তিনদিন আগে আনোয়ার হোসেন ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নিয়ে ফাতেমা বেগম ও তার বড় মেয়েকে মারধর করে বেঁধে রাখে। এ ঘটনায় পুলিশ ফাতেমা ও তার বড় মেয়েকে উদ্ধার করে আনোয়ার হোসেনকে থানায় এনে আবার ছেড়ে দেয়। এরপর আনোয়ার আরও বেপোরোয়া হয়ে ওঠে এবং প্রতিদিনই অসুস্থ ফাতেমা বেগমকে মারধর করতে শুরু করে। আজ সকালে আনোয়ার হোসেন তাদের ফোন করে জানান, ফাতেমা বেগম মারা গেছেন।
নিহত ফাতেমা বেগমের ছোট মেয়ে রিয়া বেগমের স্বামী ফজলুল করিম মিনহাজ অভিযোগ করে বলেন, ‘বড় মেয়ে আমার শ্বাশুরীকে দেখাশোনা করতো। গতকাল আনোয়ার হোসেনের ঘরে নতুন স্ত্রী আনার পর বড় মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধারনা আমার শ্বাশুরীকে হত্যা করা হয়েছে। সবসময় তাকে মারধর করা হতো। আমরা বাঁধা দিতাম বলে শ্বশুর বাড়িতে আমাদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো।’

নিহত ফাতেমা বেগমের বড় মেয়ে প্রিয়া বেগমের স্বামী হাসান বলেন, ‘কিছু সম্পত্তির দলিল ও স্বর্ণালঙ্কার ছিলো আমার শ্বাশুরীর কাছে। নতুন বউ আনার জন্য স্বর্ণালঙ্কারগুলো চেয়েছিল আনোয়ার। আমার শ্বাশুরী না দেওয়ায় তাকে ও আমার স্ত্রীকে তিনদিন আগে মারধর করে বেঁধে রাখা হয়েছিল।আমি এসে পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করি। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আবার ছেড়ে দেয়। এরপর সে আরও বেপোরোয়া হয়ে যায়।’

নিহতের বড় মেয়ে প্রিয়া বেগম, দুই ভাই ইউসুফ ও নজরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারে আমাদের মা ফাতেমা বেগমের সম্মতি ছিলো না। এসব বিষয় নিয়ে ওনাকে সবসময় মারধর করা হতো।’

সন্দ্বীপ থানার ওসি তদন্ত জাকির হোসেন জানান, ফাতেমা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, তাকে খুন করার মত কোন লক্ষণ দেখা যায়নি, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে প্রকৃত কারন জানা যাবে।

 

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর