আনোয়ারায় শুকনো মওসুম আসলেই শুর হয় তিন ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। আর এসব মাটি দিয়েই চলে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে লোকালয়ের মাঝে গড়ে উঠা অনুমোদনহীন দুটি ইটভাটা।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার তুলাতলী ও বারশত মৌজার বেশ কিছু তিন ফসলের আবাদযোগ্য কৃষি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিণত করে দিয়েছে মাটিকাটা সিন্ডিকেট।
রাতের আঁধারে স্থানীয় কিছু অসাধু মানুষের নেতৃত্বে গড়ে উঠা মওসুমী সিন্ডিকেটের তত্বাবধানে এসব মাটি যাচ্ছে এমবিএম ব্রীকস্ ও কেবিডব্লিউ ব্রীকস নামের দুই ইটভাটার জটরে।
বটতলী ইউনিয়নের আওতাভুক্ত তুলাতলী ও বারশত মৌজার একাধিক কৃষকের অভিযোগ, গভীর রাতে বটতলীর পরীরবিল ও দক্ষিণের বিল থেকে অন্তত ৬টি মাটিকাটার যন্ত্র (স্কেভেটর)দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয় এমবিএম ও কেবিডব্লিউ নামের ওই দুটি ইটভাটায়,মাটি পরিবহনের কাজে প্রতিরাতে ব্যবহার হয় অন্তত ৫০ টি ড্যাম্প ট্রাক। লোকালয়ের মাঝখানে সরু পথে চলাচলকারি এসব গাড়ির শব্দে ঠিকমত ঘুমাতেও পারছেন না অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার দুই সচেতন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি সভা সমাবেশ সহ যে কোন সরকারী মিটিংয়ে প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন দেশের খাদ্য সঙ্কট এড়াতে এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদি না থাকে,কোন কৃষিজমির শ্রেণি যেন পরিবর্তন না করা হয়।
তাছাড়া এ সংক্রান্তে ভূমি আইনেও বিধি নিষেধ আছে।
তথাপিও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এসব অন্যায় কাজ কিভাবে চলে তা তাদের বোধগম্য নয়।
এসবের পেছনে স্থানীয় রাজৈনতিক প্রভাবশালী মহল এবং প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
এলাকার সুন্দর সব কৃষিজমির মাটি কেটে জমিকে খুন করা হচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,উল্লেখিত দুই ইটভাটার মধ্যে এমবিএম ব্রিকসের মালিক স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি। সংশ্লিষ্ট দপ্তেরর কোন ছাড়পত্র এবং অনুমোদন ছাড়াই অর্থ আর ক্ষমতার জোরে সে দির্ঘদিন ধরে লোকালয়ের মাঝখানে ইটভাটাটি চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ইতিপূর্বে দু’একবার পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালিত হতে দেখা গেলেও অদৃশ্য কারনে বন্ধ হচ্ছেনা এই অবৈধ ইটভাটা।
ইটভাটা দুটির দুই কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের মালিক স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটে। মাটি না কাটলে ইট কিভাবে বানাবো। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি পুকুর সমান গভীর হয়ে আছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যেসব জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে তার পাশের জমিগুলোতেও কয়েক বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। আমরা এই দুই ইটভাটার মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বরাবরের মতোই বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না,খবর নিয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব, নিচ্ছি, এই ধরণের গতানুগতিক উত্তর পাওয়া যায় প্রশাসনের কাছ থেকে।