জিলাপি তো কমবেশি সবাই খায়। জিলাপির প্যাচ নিয়ে নিয়েও আছে নানা কথা।গ্রামীন জনপদে এমন জিলাপিও আছে যে জিলাপির প্যাচ বেশি,স্বাদও বেশি।, চালের জিলাপি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঐতিহ্যের এ জিলাপি চালের গুঁড়া ও গুড়ের তৈরি। এ শীতে গ্রামের সবার পছন্দের খাবাররএটি। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। এই জিলাপির মিষ্টি সুগন্ধ আপনাকে সহজেই টেনে নিয়ে যাবে দোকানের কাছে।
মজার ব্যাপার হলো- এই চালের জিলাপি পাওয়া যায় শুধুমাত্র শীতকালে। অনেক বছর ধরে তৈরি হয়ে আসা এই মজাদার খাবারের খ্যাতি এখানকার সাধারণের মানুষ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে।
উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সরকারহাট এলাকায় মূলত এই চালের জিলাপি বানানো শুরু হলেও পরে ধীরে ধীরে তা হাটহাজারীর অন্যান্য মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বিক্রয়ের জন্য জনপ্রিয় হয়ে পড়ে এই চালের জিলাপি। এখন হাটহাজারীর সরকারহাট, মনিয়াপুকুর পাড়, কাটিরহাট বাজার, নাজিরহাট, হাটহাজারী বাজার, চৌধুরীহাট ইত্যাদি এলাকার ব্যবসায়ীরা এই চালের জিলাপি বানিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। এই শীত মৌসুমে বিভিন্ন গ্রামীণ
ছোট – বড় মেলা, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল, ওরশ, মহোৎসব উপলক্ষেও ভাসমান দোকানে তরতাজা চালের জিলাপি বানিয়ে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে এই জিলাপি বানানোর ফলে এই জিলাপি খেতে বেশ মচমচে সুস্বাদুও বটে। এই চালের জিলাপির আরেক নাম “শাহী জিলাপি”।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডের জিলাপি তৈরির কারিগর ও বিক্রেতা আবদুর শুক্কুর এর সাথে। তিনি বলেন দৈনিক প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয় হাতের তৈরি এই চালের জিলাপি। কেজি প্রতি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করেন। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই জিলাপির দাম বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
জিলাপি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু মাত্র চালের গুঁড়া ও চিনির মিক্সার দিয়ে এই জিলাপি বানানো হয় এবং পরে চিনি কিংবা লাল গুড়ের সিরাপে ডুবানো হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষের কাছে অতিথি আপ্যায়নের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এই বিশেষ জিলাপি। বিয়ে-গায়ে হলুদ ইত্যাদির মতো অনুষ্ঠানেও স্থানীয়রা এই জিলাপি পরিবেশন করে থাকেন। এখানকার মানুষের সকাল বা বিকালের নাস্তা কিংবা শীতকালীন আড্ডায় স্থান করে নেয় চালের জিলাপি।
পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি, রাউজানসহ বিভিন্ন উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চালের গুঁড়ার জিলাপি খেতে এখানে আসেন অনেকেই এবং পরিবার পরিজনদের জন্য ক্রয় করে নিয়ে যান।
বিক্রেতারা জানান, মূলত পুরো শীতকাল জুড়ে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখেই তারা এই কাজ করেন। এতে করে মানুষের চাহিদা যেমন পুরণ হচ্ছে তেমনি যারা জিলাপী তৈরি করে তারা ও পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছেন।
শীতকালে মুখরোচক এ খাবার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ছোট-বড় সকলের কাছেই মজাদার এই চালের জিলাপির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই মচমচে সুস্বাদু চালের জিলাপির সুখ্যাতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরো ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন বিক্রেতাসহ এই এলাকার মানুষজন।
এমএ/জই