সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্পিন ছোবলে কাবু ইংল্যান্ড, সিরিজ জয় পাকিস্তানের

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হেরে পিছিয়ে পড়লেও প্রবল প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিতে নিল পাকিস্তান। নিজেদের মাঠে টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা। টার্নিং উইকেটে ম্যাচ শেষ তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগেই।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর অবশেষে আবার দেশের মাঠে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল তারা।

যথারীতি এই জয়ের কারিগর নোমান আলি ও সাজিদ খান। পাকিস্তানের দুই স্পিনার আবারও গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। দুজনের ঘূর্ণিতে ৪৬ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১২ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।

জয়ের জন্য ৩৬ রানের লক্ষ্যে ৩.১ ওভারেই পৌঁছে যায় পাকিস্তান। ৬ বলে ২৩ রানের ছোট্ট ঝড়ে কাজ শেষ করেন শান মাসুদ।

নোমান ও সাজিদ মিলেই শেষ করে দেন ইংল্যান্ডের ইনিংস। ইনিংসের প্রথম ওভারটি স্রেফ করেছিলেন সাইম আইয়ুব। এরপর দুই প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে গেছেন নোমান ও সাজিদ।

বাঁহাতি স্পিনে নোমান নিয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচে তার শিকার ৯ উইকেট।

প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকারি সাজিদের প্রাপ্তি এবার ৪ উইকেট। ১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।

দলে ফিরেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন গোটা সিরিজের চিত্র। সিরিজের প্রথম টেস্টে পাঁচশর বেশি রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে বিব্রতকর এক ইতিহাস গড়েছিল পাকিস্তান। চারপাশে তখন সমালোচনার ঝড়। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর এভাবে আরেকটি পরাজয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট পৌঁছে যায় তলানিতে।

মাথা তুলে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় তারা টার্নিং উইকেটের পথ বেছে নেয়। নোমান ও সাজিদকে ফেরানো হয় দলে। এরপর ভোজবাজির মতোই বদলে যায় সব কিছু।

স্পিন সহায়ক উইকেটে খাবি খায় ইংলিশ ব্যাটিং। দুই টেস্টে নোমান ও সাজিদ মিলিয়েই শিকার করেন ৩৯ উইকেট।

এই দুই টেস্টে একটি মাত্র উইকেট নিতে পারেন অন্য বোলার। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে জেমি স্মিথের উইকেট নেন লেগ স্পিনার জাহিদ মেহমুদ। টানা তিন ইনিংসে একটি বলও করতে পারেননি দলের একমাত্র পেসার আমের জামাল।

প্রথম দুই দিনেই পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন নোমান ও সাজিদ। বল হাতে তো দুজন অপ্রতিরোধ্য সিরিজজুড়েই, দ্বিতীয় দিনে ব্যাট হাতে নোমানের ৪৫ ও সাজিদের অপরাজিত ৪৮ রান বড় ভূমিকা রাখে পাকিস্তানকে লিড এনে দেওয়াতেও। এরপর নিজেদের আসল কাজেও ইংলিশদের পোড়াতে থাকেন দুজন।

৩ উইকেটে ২৪ রান নিয়ে দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট ও হ্যারি ব্রুক দলকে এগিয়ে নেন কিছুটা। লড়াইয়ের ইঙ্গিত ছিল দুজনের ব্যাটে। কিন্তু নোমান ও সাজিদকে আর কতক্ষণ নিষ্ক্রিয় রাখা যায়!

ব্রুককে ২৬ রানে ফিরিয়ে ৪৬ রানের জুট ভাঙেন নোমান। এরপর ইংল্যান্ডের ব্যাটিংও ভেঙে পড়ে দ্রুতই। নোমানের বল দৃষ্টিকটূভাবে ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হন বেন স্টোকস। প্রথম ইনিংসে পাল্টা আক্রমণে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা জেমি স্মিথ বোল্ড হন ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে।

লোয়ার অর্ডারে কেউ সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। এক প্রান্ত আগলে রাখা জো রুটকে ৩৩ রানে থামান নোমান। রেহান আহমেদকে বোল্ড করে ম্যাচে ১০ উইকেট পূর্ণ করেন সাজিদ। জ্যাক লিচকে বিদায় করে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করেন নোমান।

জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে এরপর একদমই সময় নেয়নি পাকিস্তান। ওপেনার সাইম আইয়ুবকে যদিও ফেরান জ্যাক লিচ। তবে ক্রিজে গিয়েই টানা চারটি বাউন্ডারি মারেন শান মাসুদ। পরের ওভারে প্রথম বলে শোয়েব বাশিরকে ছক্কায় পাকিস্তান অধিনায়ক শেষ করে দেন ম্যাচ।

এই জয় তার জন্যও বিশেষ কিছু। অধিনায়ক হওয়ার পর টানা ছয় ম্যাচ হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে এখন সিরিজ জয়ের স্বস্তি। পাকিস্তান অধিনায়ককে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে সাজিদ ও নোমানের প্রতি।

স্পিন স্বর্গেও ম্যাচের সেরা অবশ্য দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা সাউদ শাকিল। সিরিজে নোমানের উইকেট ২০টি। তবে ১৯ উইকেটের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রান করে সিরিজের সেরা সাজিদ।

পাকিস্তান এখন তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর