বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

হাসিনার প্রত্যার্পণ

অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা, আগ্রহ নেই ভারতের

বিশেষ প্রতিনিধি

অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলে সম্প্রতি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন ইঙ্গিত দিয়েছে।

তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে যতটা দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে আইনগত প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যাপার আছে। আমরা বারবার বলছি- শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। আশা করছি, উনাকে দ্রুত দেশে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব হবে।

এর আগে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ভারত আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তাকে ফেরত এনে বিচারের আওতায় আনতে ভূ-রাজনৈতিক কারণ এবং দ্বিপাক্ষিক প্রত্যার্পণ চুক্তির বিধান উল্লেখ করে সম্প্রতি নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

কিন্তু ওই চিঠি পেলেও শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না ভারত। দেশটির প্রধান মিত্র হিসাবে পরিচিত শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময় ধরে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।

ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তার প্রত্যার্পণ নয়াদিল্লির জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দমন থেকে শুরু করে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ ধরনের বিশ্বস্ত একজন মিত্রকে ত্যাগ করা একটি কৌশলগত ভুল হবে। তাই এ ধরনের ঝুঁকি নেবে না ভারত।

ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় দুদেশের অপরাধীদের তারা পরষ্পরের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা এই চুক্তির আওতায় পড়বে না।
দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, দু’দেশের প্রত্যার্পণ চুক্তিতেই পরিষ্কার বলা আছে, রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা যাবে না। ফলে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় সেই যুক্তিই প্রযোজ্য হবে।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ঢাকার দাবি মেনে নিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠালে এই অঞ্চলে ভারতীয় মিত্রদের কাছে একটি নেতিবাচক সংকেত পৌঁছাবে এবং দেশটির সঙ্গে অন্যান্য মিত্রদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কর্মকর্তারা ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ নিশ্চিত করতে দিল্লিকে চাপ দিচ্ছে। ভারত এ ধরনের অনুরোধ সতর্কতার সঙ্গেই যাচাই করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে কারণে এই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ফলে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা তাঁর জন্য এবারই প্রথম নয়।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর