আওয়ামী লীগের একাংশ চাইছে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা সেদেশে ‘নির্বাসিত সরকার’ গঠন করুক। ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তবে কাউকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফোনে কথা বললেও তাঁর লোকেশন জানা সম্ভব নয়।
একাধিক নেতা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, ভারতে নির্বাসিত সরকার গঠন করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে জনমত গঠন করুক তিনি। ড. ইউনুসের সরকার তাঁর ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট বাতিল করলেও ভারত তাঁকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করায় তিনি বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন।
ভারতে ১৯৫৯ থেকে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। ওই বছর থেকেই কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসন বা নির্বাসিত তিব্বতি সরকার হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ওই সরকার ও ভারতে থাকা তিব্বতিরা ভারত সরকারের দেওয়া ট্রাভেল ডক্যুমেন্টস নিয়ে গোটা বিশ্ব সফর করেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিব্বতি সরকার জাতিসংঘের আনরিপ্রেজেন্টেড নেশনস অ্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, ইউনুস সরকারের আড়াই মাসের শাসনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। সেনার অসহযোগিতার কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। ভারতে নির্বাসিত সরকার গঠন করে তিনি গোটা বিশ্বকে নিজের কথা জানাতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও মনে করছেন, আজ কিংবা কাল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটবে ইউনুস সরকার। নিষিদ্ধ যদি নাও করে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেবে না জানিয়ে দিয়েছেন ইউনুসের বিশেষ সহায়ক মাহফুজ আলম। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে সজীব রাখা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে এই কৌশল নেওয়া যেতে পারে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ার বৈদ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল। পরে সেই সরকার কলকাতার শেকসপিয়ার সরণির অরবিন্দ ভবন থেকে নির্বাসিত সরকার হিসাবে পরিচালিত হত।
হাসিনার নেতৃত্বে ভারতে নির্বাসিত সরকার গঠনের জন্য দলনেত্রীকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কানে গিয়েছে বলে খবর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লায় এক জনসভায় বলেছেন ভারত থেকে আওয়ামী লীগকে চালনা করতে প্রবাসী সরকার গঠনের চেষ্টা হচ্ছে।
কুমিল্লার সভায় ছাত্র নেতৃত্ব আরও বলেন, হাসিনা যে কোনও দিন আগরতলায় সভা করবেন। দিন কয়েকদিন আগে হাসিনার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, আমি দেশের কাছাকাছি আছি। যাতে যে কোনও দিন দেশে ঢুকে পড়তে পারি। অনেকেই মনে করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দুয়ে দুয়ে চার করে হাসিনার আগরতলায় জনসভা করার কথা প্রচার করছেন। এমন কোনও সভার খবর ঠিক নয়।
হাসিনার নেতৃত্বে ভারতে আওয়ামী লিগের নির্বাসিত সরকারের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, এমন কোনও প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে নেই। প্রস্তাব এলে তখন ভেবে দেখা হবে। শেখ হাসিনা ভারতের অতিথি। তিনি তাঁর মতো করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন। তবে নির্বাসিত কিংবা প্রবাসী, যে সরকারই বলা হোক না কেন, এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক ভাবনাচিন্তার বিষয়। তাছাড়া শেখ হাসিনা এমন কোনও সরকার গঠন করতে চান কিনা সে ব্যাপারে ভারত সরকার অবহিত নয়।
সূত্র: দ্য ওয়াল
এনইউ/জই