বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

পড়ালেখার চাপে আত্মহত্যা করেছে ১৪.২% শিক্ষার্থী!

দেশে গত এক বছরে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহননের চিত্র উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। এরমধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ালেখার চাপে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

দেশে গত এক বছরে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহননের চিত্র উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। এরমধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ালেখার চাপে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের করা সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালের আত্মহননের এই চিত্র তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী। তিনি বলেন, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর হার সবচেয়ে বেশি, ৬১ শতাংশ। ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার শূন্য দশমিক শতাংশ।

সংগঠনটি বলছে, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। যার হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে।

এছাড়া প্রেমের সম্পর্কের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে মানসিক অস্থিরতার কারণে।

সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা স্কুলগামীদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে এই হার ২৩ দশমিক ২ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬-১২ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩-১৯ বছর বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০-২৫ বছর বয়সী ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর শিক্ষার স্তর অনুযায়ী আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ও স্নাতক পর্যায়ের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিপ্লোমা পর্যায়ের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

২০২৪ সালে ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহননের চিত্র উঠে এলেও ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহনন করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সে তুলনায় গেল বছর আত্মহননের ঘটনা কম ঘটার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আঁচল ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যা সম্পর্কিত রিপোর্ট মিডিয়ায় কম এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।


পাইপলাইনে তেল যাবে ২৯ জানুয়ারি থেকে

নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের বেশি সময় পর অবশেষে আগামী ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা অঞ্চলে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের বেশি সময় পর অবশেষে আগামী ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা অঞ্চলে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে জ্বালানি তেল পরিবহন খাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বছরে প্রায় দুইশ টাকা সাশ্রয় হবে।

দেশে এই প্রথম অত্যাধুনিক এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অটোমেশন সুবিধায় তেল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার জ্বালানি তেল অপচয়, চুরিসহ নানা অনিয়ম ঠেকানো সম্ভব হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে নির্মিত এই পাইপলাইনে বর্তমানে অন্তত ৩০ লাখ টন তেল যাবে কুমিল্লার বরুড়া এবং নারায়ণগঞ্জের গুদনাইল-ফতুল্লা ডিপোতে।

সূত্র জানায়, পুরো দেশে বর্তমানে বছরে গড়ে ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টন জ্বালানি ব্যবহৃত হয় ঢাকা বিভাগে। এই তেলের প্রায় পুরোটাই পতেঙ্গার গুপ্তাখাল প্রধান ডিপো থেকে অন্তত ২০০টি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুর ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে পরিবহন করা হয়। রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমেও দেশে কিছু জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জ্বালানি পরিবহনের সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়সহ দ্রুততম সময়ে তেল পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার ফতুল্লা পর্যন্ত আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।.

‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৬ সালের অক্টোবরে একনেকের অনুমোদন লাভ করে। কথা ছিল, ২০২০ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মাঝে পড়তে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটিকে।

পরবর্তীতে সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এর ফলে পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে তেল কুমিল্লা ও ঢাকা অঞ্চলে যাওয়ার কথা ছিল। পরে প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। খরচও বেড়ে যায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলক তেল সরবরাহ করা হয়েছে।

অবশেষে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে তেল সরবরাহ শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া এবং নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ৭টি স্টেশনসহ ২৪১.২৮ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণ, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত দুটি স্টেশনসহ ৮.২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২২টি নদী ও খালের তলদেশ দিয়ে অন্তত ৯ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইনে ৯টি পাম্প রয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় কুমিল্লার বরুড়ায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নতুন একটি ডিপো স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রয়োজনীয় সব ডিজেলের যোগান দেওয়া হবে। বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে বর্তমানে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং আশুগঞ্জ ডিপো থেকে সড়ক পথে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এটা সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে অপচয় ও সিস্টেম লস হয়ে থাকে।

অটোমেশন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বরুড়া ডিপো চালু হওয়ার পর বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের তেলের যোগান চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে হবে। চাঁদপুর ডিপো তখন কেবল পেট্রোল এবং অকটেন বিক্রি করবে। চাঁদপুরের প্রয়োজনীয় ডিজেলও বরুড়া থেকে সরবরাহ দেওয়া হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই ডিপো থেকে চাঁদপুর এবং আশুগঞ্জসহ বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ডিজেল সরবরাহ করা হবে।

বিপিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা একুইজিশন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রামের ডেসপ্যাচ টার্মিনালের স্ক্যাডা মাস্টার কন্ট্রোল স্টেশন থেকেই ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা হবে। স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন এবং লিক ডিটেকশন করতে এই পাইপলাইনের সাথে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লাইন সংযুক্ত থাকবে। এতে জ্বালানি তেলের সিস্টেম লসসহ সব ধরনের অনিয়ম ঠেকানো সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি তেল সরবরাহের অত্যাধুনিক একটি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে শুধু সময় নয়, কোটি কোটি টাকাও সাশ্রয় হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই পাইপলাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর