পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১১ বছর আগে প্রথমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখনো বন্ধ হচ্ছে না প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১১ বছর আগে প্রথমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন জারির পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখনো বন্ধ হচ্ছে না প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার। প্রজ্ঞাপনে সরকার মূলত ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়।
পরে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আরো দুইবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে ১৯টি পণ্য পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তদারকির অভাবে এখনো পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। বাজারে তাই এখনো প্লাস্টিক বস্তার ছড়াছড়ি।
খাতুনগঞ্জের আটা-ময়দার এক ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটা-ময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায় আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ মিশে যায়। অনেক সময় ধুলোবালু বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটা-ময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটা-ময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটা-ময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের বস্তার ছড়াছড়ি। তবে উত্তরাঞ্চলেও কয়েকটি অঞ্চল থেকে ১০ শতাংশ মতো পাটের বস্তায় চাল আসছে। শুধু ধান-চাল নয়, দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশ পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে একটি পাটের বস্তার দাম পড়ছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, পক্ষান্তরে একটি প্লাস্টিক বস্তার দাম পড়ে ১৫-২০ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরাও পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, পণ্য পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার হচ্ছে ২০ শতাংশের মতো। এছাড়া বাকি ৮০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তা। আসলে মূল ব্যাপার হচ্ছে, মিলাররা আড়তদারদের যেভাবে চাল পাঠাচ্ছেন আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। তাই প্রশাসনের উচিত আড়তগুলোতে অভিযান না চালিয়ে ধান-চালের মোকামগুলোতে নজরদারি বাড়ানো।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, অনেক ক্রেতাই পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য নিতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ পাটের বস্তার চেয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া প্লাস্টিক বস্তার দাম পাটের বস্তার তুলনায় কম। এতেও অনেক ব্যবসায়ী প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ-খুদ-কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
৪ মাসেও হদিস মেলেনি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের
নগরীতে দুই মাসের ব্যবধানে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে হাটহাজারীর সাজ্জাদ হোসেন ও তার সহযোগীরা। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে গত বছরের ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গুলি করা হত্যা করা হয় আনিছ ও তার বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
নগরীতে দুই মাসের ব্যবধানে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে হাটহাজারীর সাজ্জাদ হোসেন ও তার সহযোগীরা। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে গত বছরের ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গুলি করা হত্যা করা হয় আনিছ ও তার বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে। এ ঘটনার ২১ দিনের মাথায় একই কায়দায় চান্দগাঁও শমসের পাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয় আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামে আরো এক যুবককে।
তিন খুনের ঘটনায় বায়েজিদ, হাটহাজারী ও চান্দগাঁও থানায় তিনটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু প্রধান আসামি সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের নাগাল পায়নি পুলিশ।
তাহসীন হত্যা:
গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়ার উর্দুপাড়া এলাকায় তাহসীন তার ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মজুতের জন্য এক ট্রাক বালু আনা হয়। এ কারণে তাহসীন সেখানে আসেন।
কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোহা মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে তাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাহানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। তারা তাহসীনের উরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। আশপাশে লোকজন থাকলেও তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেননি।
তাহসীন হত্যায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার বাবা মো. মুছা। মামলায় পাঁচজনকে এজাহা রভুক্ত আসামি করা হয়। তারা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন, মো. হাসান, মোহাম্মদ, খোরশেদ প্রকাশ খালাতো ভাই খোরশেদ ও মো. হেলাল। এদের মধ্যে হেলাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও বাকি চারজনের হদিস পায়নি পুলিশ।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুই খুন:
গত বছরের ২৯ আগস্ট কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুইজনকে গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ ও তার অনুসারীরা। নিহতরা হলেন, হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশ গ্রামের মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. আনিস ও তার বন্ধু মাসুদ কায়সার।
আনিস হত্যায় নগরীর বায়েজিদ থানায় গত বছরের ৩০ আগস্ট মামলা দায়ের করেন আনিসের স্ত্রী শামিম আকতার মনি । মাসুদ হত্যায়ও হাটহাজারী থানায় একই দিনে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত মাসুদের ভাই মো. আরিফ। দুটি মামলায় সুনির্দিষ্ট চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, মো. আরমান বাচ্চু (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর (৪০), সাজ্জাদ হোসেন (২৫) ও মো. হাসান (৩৫)। জোড়ী খুনের ঘটনার চার মাস পার হতে চললেও চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জানা গেছে, আনিছ ইট-বালির ব্যবসা করেন। গত ২৯ আগস্ট সকাল আনুমানিক ১০টার সময় বন্ধু মাসুদ কায়ছারকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে তিনি কুয়াইশ মোড়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় আনিছকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মাসুদ তখন পার্শ্ববর্তী বিল দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মাসুদ তার পরনের কাপড় পাল্টাতে বাসায় যাবার পথে হাটহাজারী পশ্চিম কুয়াইশ ফারুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সাবেরের দোকানের সামনে পৌঁছালে আনিছকে গুলি করা যুবকরা মাসুদকেও গুলি করে হত্যা করে।
পুলিশের অভিযানে গুলি :
গত ৫ ডিসেম্বর ভোর চারটায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করতে অক্সিজেন মোড়ের জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে ৭ তলা ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সাজ্জাদ। গোলাগুলির এক পর্যায়ে পাশের ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এ সময় কাজল কান্তি দে (৩৬) ও মো. জাবেদ (৩৪) নামে দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন । তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
পুলিশ যা বলছে :
বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, সাজ্জাদের দুই সহযোগীকে আমরা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি। ঘটনার পর থেকে সাজ্জাদ আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে ধরতে আমরা চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত- বিদেশে পলাতক বহদ্দারহাট ৮ হত্যা মামলার আসামি ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে এই সাজ্জাদ অপরাধজগতে পা রাখেন। এরপর দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৪টি মামলা রয়েছে। শেষ গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন ।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরীর চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান সাজ্জাদ।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক