সরবরাহ বাড়ায় নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির দাম কমলেও চাল ও তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসেনি। পাশাপাশি ব্রয়লারসহ মাছ-মাংসের দামও বাড়তি রয়েছে। এটি দৈনিক সুপ্রভাতের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
সরবরাহ বাড়ায় নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির দাম কমলেও চাল ও তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসেনি। পাশাপাশি ব্রয়লারসহ মাছ-মাংসের দামও বাড়তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। যা ২৫ কেজি বস্তায় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়েছে।
মুদি ব্যবসায়ী মো. আলী সওদাগর বলেন, ‘সবজির দাম কমে আসলেও ভোজ্যতেল, চাল, ডালের দাম না কমায় স্বস্তি প্রকাশ করছে না ক্রেতারা। চাল কিনতে আসা ক্রেতারা আমাদেরকে দোষারোপ করছে। এসব চালের দাম বাড়াচ্ছে চাক্তাই- খাতুনগঞ্জের চালের আড়তদার ও মিল মালিকরা।’
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইজাম, লতা ও আটাশ জাতের মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়। আর স্বর্ণা, চায়না ও ইরি মানের মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। এসব চাল গত বছর এদিনে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরশাইল ও মিনিকেট মানের চালের দাম না বাড়লেও বছরের ব্যবধানে বেশ বেড়েছে। বাজারে এসব মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত বছর যা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে সরু চালের দামে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানি হওয়া স্বত্ত্বেও চালের বাজারে লাগামহীন থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে হা-হুতাশ বেড়েছে। বকসিরহাট বাজারে আসা ক্রেতা মো. জাফর বলেন, ‘সবজির দাম প্রতিবছর মৌসুমে কমে যায়। এসব সবজি পচন ধরে বলেই ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করতে পারছে না, তাই দাম কমছে। বর্তমান চালের কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা। বাজার তদারকি নেই বললেই চলে।’
চালের বাজার নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোরবানিগঞ্জের রিকশাচালক মো. আলম বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালিয়ে চাল কেনার টাকা জোগাড় হয় না। মোটা চালের কেজি ৭০ টাকা।’
চাক্তাইয়ের আড়তদার মো. জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমদানি করা চাল নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা যেসব চাল দিনাজপুর, বগুড়া থেকে এনেছি তা খরচ বেশি পড়েছে। যার কারণে এসপ্তাহে বস্তাপ্রতি প্রায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।’
আজিম অটোরাইচ মিলের মালিক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এবছর ধানের দাম বাড়তি । তার মধ্যে আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যার কারণে চালের দাম ব্যবসায়ীরা কমাচ্ছে না।’
নির্ধারিত মূল্যের বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল
বাজারে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন । এসব সয়াবিন আগেই মজুদ করেছেন বলেও জানা যায়। বাজারে বর্তমান খোলা সয়াবিন বিক্রি করছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায়, পাম তেল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকায়, পাম তেল সুপার ১৫৯ থেকে ১৬২ টাকায়। আর বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করার ঘোষণা থাকলেও পূর্বের মজুদকৃত বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বলা যায় প্রতিটা বোতলজাত সয়াবিনে গায়ের মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। আর পাম তেলে লিটারে বাড়তি বিক্রি করছে ১২ থেকে ১৫ টাকা।
বাড়তি দর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বকসিরহাটের মো. ফারুক সওদাগর বলেন, ‘ভোজ্যতেলের ডিলারেরা আমাদেরকে বাড়তি দরে বিক্রি করছে। যার কারণে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।’ একই কথা বলেন, নতুন চাক্তাইয়ের ‘তেলঘর’ নামে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারও।
বাড়তি মুরগি, মাংস ও মাছের দাম
গত দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তির দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও।
বাজারে সাইজভেদে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৯৫ থেকে ২০৫ টাকা, সোনালি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, লাল লেয়ার ২৮০ টাকা, পাকিস্থানি কক ৩১০ টাকা ও দেশী মুরগি ৫৪০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে। আর ডিম বিক্রি হয়েছে ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। বলা যায় আমিষজাত এসব খাবারে সপ্তাহের ব্যবধানে তেমন পরিবর্তন না আসলেও উর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ‘পেল্ট্রিখাতে উৎপাদন সংকট থাকায় বেড়েছে দাম।’
গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে আবারও চড়া মাছের বাজার। বাজারে সাইজভেদে প্রতি কেজি রুই ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের কৈ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এসব মাছ গত সপ্তাহে আরও কম দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরবরাহ বাড়ায় স্বস্তি সবজিতে
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির সরবরাহ আরও বাড়ায় দামও অনেকটা কমেছে । গত এক মাসের ব্যবধানে বাধাকপি, ফুলকপি, শিম, শালগমসহ প্রায়সব শীতকালীন সবজির দাম কেজি প্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। আর কাঁচামরিচের দাম কমে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দাম কমে পুরোনো আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায় আর মুন্সিগঞ্জের নতুন আলু ও লাল আলু মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।
দাম কমেছে শাকের বাজারেও। বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
সবজির দাম এভাবে কমাতে কৃষকরা বড় লোকসানে পড়তে পারেন বলে মন্তব্য করেন সবজির আড়তদারেরা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজির দাম অনেক কমতি। আর মাসের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আর এভাবে দাম কমাতেই পচনশীল পণ্য হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহ হারাবেন। তবে ক্রেতারা অনেকটা স্বস্তিতে সবজি কিনছে।’
ব্যাংক ঋণের চড়া সুদ, শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে স্থবিরতা
ব্যাংক ঋণের চড়া সুদ হারের কারণে দেশের বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন থমকে যাওয়ার শংকা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রচুর মুনাফা করলেও থেমে গেছে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন। ঋণের সুদের হার প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকায় দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কর্মসংস্থান ও আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
ব্যাংক ঋণের চড়া সুদ হারের কারণে দেশের বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন থমকে যাওয়ার শংকা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রচুর মুনাফা করলেও থেমে গেছে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন। ঋণের সুদের হার প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকায় দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কর্মসংস্থান ও আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি বেড়ে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। অথচ মূল্যস্ফীতি কমানোর দোহাই দিয়ে বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকের সুদের হার। বিদ্যমান পরিস্থিতি লাগাতার হলে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতার শংকাও প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশে ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে দফায় দফায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে। যার ফলে রেপো রেট বা নীতি সুদহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। এতে দেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বা কস্ট অব ডুইং বিজনেস অনেক বেড়ে গেছে। যা
প্রত্যক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, দেশে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে।
চড়া মূল্যস্ফীতিতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোয় দেশের সাধারণ মানুষের উল্লেখ করার মতো উপকার না হলেও ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের প্রবৃদ্ধি ৭০ শতাংশেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক বছর শেষে হিসেব নিকেশ কষে যেই হিসেব প্রকাশ করেছে তাতে ব্র্যাক ব্যাংক ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের পরেই রেকর্ড পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক। এই ব্যাংক সদ্য বিদায়ী বছরে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে রেকর্ড সৃষ্টি করে। আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সিটি ব্যাংক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিচালনা মুনাফা অর্জন করেছে গত বছর। ব্যাংকটি গত বছর ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করে। যা আগের বছরের তুলনায় ৬৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক গত বছর ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ ।
২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি ( আগের বছর ১,১৫৩ কোটি টাকা), ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা (আগের বছর ১,১৪৫ কোটি টাকা), প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি (আগের বছর ৯৩৭ কোটি টাকা), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা (আগের বছর ৭৩১ কোটি টাকা), শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা (আগের বছর ৮৮৮ কোটি টাকা), এড্ডি ব্যাংক ৯৭৫ কোটি (আগের বছর ৭৩৬ কোটি টাকা), প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি টাকা (আগের বছর এই ব্যাংক পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছিল ৯১৪ কোটি টাকা), ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি টাকা (আগের বছর ৩৬১ কোটি টাকা), মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি টাকা (আগের বছর ৫৫৮ কোটি টাকা) এবং মেঘনা ব্যাংক ২০৪ কোটি টাকা টাকা (আগের বছর ১৬০ কোটি টাকা) পরিচালন মুনাফা লাভ করেছে।
উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও বাকি সবক’টি ব্যাংক বিপুল পরিমাণে প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে।
একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন, ব্যাংকিং সেক্টরে বেশ সমস্যা বিরাজ করলেও গত বছর প্রচুর আয় হয়েছে। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে নির্ধারণ করা হয় পরিচালন মুনাফা।
পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করার পর যে অর্থ থাকে সেটিই একটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। পরিচালন মুনাফার একটি বড় অংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি এবং করে ব্যয় হয় উল্লেখ করে ব্যাংকাররা বলেন, এবছর প্রতিটি ব্যাংকেরই নিট মুনাফা আশাতীত থাকবে। তারা বলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাসে ২০২৪ সালের মতো বেহাল বছর আর কখনো ছিল না।
এই সেক্টরে গত ১৫ বছর ধরে যে পরিমাণ লুটপাট, মুদ্রা পাচার, ঋণ কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে অতীত বাংলাদেশে তার নজির নেই। এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি মানুষের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এই সময় বিভিন্ন দুর্বল ব্যাংক থেকে জামানত উঠিয়ে গ্রাহকেরা খুব সামান্য সুদে হলেও অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকগুলোতে রেখেছেন। যার সুফল পেয়েছে ভালো ব্যাংকগুলো। তারা স্বল্প সুদে যেমন প্রচুর জামানত পেয়েছে তা কাজে লাগিয়ে প্রচুর মুনাফাও করেছে। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর অনেকেই তেমন একটা মুনাফার মুখ দেখেনি বলেও তারা উল্লেখ করেন। অনেক ব্যাংক এখন পর্যন্ত হিসেবে নিষেই প্রকাশ করতে পারেনি।
সুদের হার বাড়ার ফলে ব্যাংকগুলো প্রচুর মুনাফা করলেও দেশের সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মঈনুল ইসলাম আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। এছাড়া সরকার নানাভাবে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সুদের হার বৃদ্ধি এবং ব্যাংকগুলোর বিপুল মুনাফার ব্যাপারে প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশের এলপিজি অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের কারণে শিল্প কারখানা স্থাপন এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যা দেশের কর্মসংস্থান, আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতিও মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন কিংবা ব্যবসা পরিচালনা কঠিন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার না করলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন।
রাউজানে যুবদল নেতাকে অপহরণ, দু’জনকে মারধর
রাউজানের গরীব উল্লাহ পাড়ায় প্রতিপক্ষের হাতে মো. আরফাত মামুন নামের এক যুবদল নেতা অপহরণ, ব্যাপক ফাঁকা গুলি বর্ষণ, ঘরে ঘরে তল্লাশি, স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়সহ কয়েকটি ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
রাউজানের গরীব উল্লাহ পাড়ায় প্রতিপক্ষের হাতে মো. আরফাত মামুন নামের এক যুবদল নেতা অপহরণ, ব্যাপক ফাঁকা গুলি বর্ষণ, ঘরে ঘরে তল্লাশি, স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়সহ কয়েকটি ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় মামুনসহ দু’জনকে বেধম মারধর করা হয়। এ নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক আতংক সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশের অভিযানে মাত্র একঘণ্টার ব্যবধানে যুবদল কর্মীকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ দাবি করেছেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয় পূর্ব গুজরা ও বাগোয়ানের গরীবউল্লাহ পাড়ায়। ওই সময় এলাকার সাধারণ নারী-শিশু ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ অনেকটা জিম্মি অবস্থায় ঘরের ভেতর অবস্থান নেয়।
এলাকার অনেকে বলেন ‘বৃহস্পতিবার (গতকাল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ১৫-২০টি সিএনজি ট্যাক্সি ও ২০-৩০টি মোটর সাইকেল নিয়ে আকস্মিকভাবে প্রায় শতাধিক লোক হঠাৎ গরীব উল্লাহ পাড়ায় ঘরে ঘরে ঢুকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলনের সদস্য, সাবেক সাংসদ গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী যুবদল নেতা আরফাতু মামুন, লোকমান, বাদশাসহ তার গ্রুপের নেতাকর্মীদের খোঁজতে থাকে।
হামলাকারীদের অনেকের হাতে ছিল বিভিন্ন রকমের অস্ত্র। এসময় তারা যুবদল নেতা আরফাত মামুনের স্থানীয় বিএনপির কার্যালয় এবং ঘর ভাঙ্গচুর করে। ওই সময় তারা ওই এলাকার তিন-চার বাড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে খোন্দকার গ্রুপের নেতাকর্মীদের খোঁজতে গিয়ে কয়েকটি ঘরের জানালা, দরজা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এসময় মামুনকে মারধর ও আরেকজন যুবদল কর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়।
একঘণ্টার বেশি এ তাণ্ডব চলাকালে অস্ত্রধারীরা ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে এলাকায় ব্যাপক আতংক সৃষ্টি করে। ঘটনার পর যুবদল নেতা আরফাত মামুন নিজেকে আগামী ইউপি নির্বাচনে বাগোয়ান ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী দাবি করে ফেসবুকে বিএনপি কার্যালয় ও তার ঘর ভাঙ্গচুরের ভিডিও দেন।
ভিডিওতে তিনি বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে সংঘটিত ঘটনার জন্য তার অনুসারী জসিম উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, মোশাররফ হোসেনসহ অনেককে দায়ী করেন। তিনি বলেন ‘হামলাকারীরা আমার বিএনপি কার্যালয় ও ঘর ভাংচুর এবং লুটপাট করে।’
থানার ওসি এ.কে.এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন ‘একদল দুর্বৃত্ত মামুন নামের একজনকে অপহরণ করে। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশের অভিযানে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে তারা মামুনকে ছেড়ে দেয়। তবে তাকে বেদম মারধর করে।’ ওসি জানান, হামলার ঘটনার জন্য কেউ মামলা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে এলাকার লোকজন জানান, ওই ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক আতংক দেখা দিয়েছে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক