অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তাব এসেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায়। তবে এ বিষয়ে এখনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বেশিরভাগ মানুষের মতামত হচ্ছে, যেহেতু অন্তবর্তীকালীন সরকার আছে এবং কোনো পলিটিক্যাল বিষয়ে ইনফ্লুয়েন্স করার বিষয় থাকবে না, তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তাব এসেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায়। তবে এ বিষয়ে এখনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বেশিরভাগ মানুষের মতামত হচ্ছে, যেহেতু অন্তবর্তীকালীন সরকার আছে এবং কোনো পলিটিক্যাল বিষয়ে ইনফ্লুয়েন্স করার বিষয় থাকবে না, তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিনি। আমরা আরো দেখি।
আরো সময় আছে, আলোচনা হবে। পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর থেকেও মতামত আহ্বান করেছি। তারা কি মতামত দেন সেটাও আমাদের দেখতে হবে।
গতকাল রোববার নগরের জিইসি মোড়ের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা এবং সাবেক জনপ্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এতে বক্তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধ, নির্বাচনী খরচ কমাতে একদিনে সব নির্বাচন (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা) আয়োজন, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক মুক্ত রাখা, প্রকল্প বণ্টনে স্থানীয় সংসদের হস্তক্ষেপ বন্ধ, উপজেলা পরিষদ আইনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা পদ বাতিলসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি এবং চেয়ারম্যানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি রাখার প্রস্তাব করেন। সভায় দেশের শাসনব্যবস্থা সংসদীয় নাকি রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে সেটা নিয়েও মতামত এসেছে।
এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দিন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আব্দুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী ও তারিকুল ইসলাম। সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নানা ধরনের মতামত পেয়েছেন। সব মতামত পর্যালোচনা করে শিগগিরই তাদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হবে। কমিশন কবে প্রতিবেদন জমা দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অফিসিয়ালি আছে। আমরা চেষ্টা করব সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার।
নির্বাচনী ব্যয় কামিয়ে আনা হবে জানিয়ে বলেন, নির্বাচন আমাদের দেশে খুবই ব্যয়বহুল। এটা হচ্ছে এক প্রার্থীর জন্য আর সরকারের জন্য। বিগত সরকারের আমলে উপজেলা, ইউনিয়ন নির্বাচনে খরচ হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ১৯ লাখ লোক নিয়োগ করা হয়েছিল। ২২৫ দিন লেগেছে। এটা খুবই এপেনসিভ, সময়ক্ষেপণকারী নির্বাচন। এছাড়া একটি নির্বাচন দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। অনেক কাজ ব্যাহত হয়। সুতরাং আমরা যদি একে আইন বদল করে একসঙ্গে করতে পারি, খরচ হবে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। সময় লাগবে মাত্র ৪০ দিন। আরো কম লাগতে পারে। একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।
নির্বাচনী খরচ না কমলে ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে পারবেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটা কমন কথা আসছে যে, ভোট কেনাবেচা হবে। ভোটের মধ্যে টাকা খরচটাও শুধু সংসদীয় পদ্ধতিতে হচ্ছে তা তো নয়। একজন মেয়র হতে হলে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে খরচ করতে হচ্ছে। এই খরচের বহরটা কিন্তু কমাতে হবে নির্বাচন থেকে। না হলে ভালো মানুষ আসতে পারবে না নির্বাচনে।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা আছে, চাকরি করেন, অন্য পেশায় আছেন তাদের কাউন্সিলর বা মেম্বার হতে বাধা নেই। তারা মেম্বার বা কাউন্সিলর হতে পারে। কিন্তু ফুল টাইম একিউটিভ বডিতে থাকতে পারবেন না। চেয়ারম্যান বা মেয়র যিনি হবেন তিনি নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি এটা একা করবেন না। মন্ত্রিপরিষদের মতো কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে তিনি সেটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করবেন।
তিনি বলেন, আপনি কলকাতা বা লন্ডনে যদি গিয়ে দেখেন, সেখানে মেয়রস কাউন্সিল আছে। তারা কিন্তু ফুলটাইম। একজন ডেপুটি মেয়রও থাকেন। ঠিক একই ব্যবস্থাটি সিটি কর্পোরেশন থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। বিকল্প প্রস্তাবও আছে। এটাকে একেবারে পাঁচ বছরের জন্য না করে এ ব্যবস্থাটি দুই বছর বা এক বছর করা যায় কিনা, এসবও বিবেচনা করছি।
বর্তমানে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে যেভাবে সরাসরি নির্বাচন হচ্ছে, তা পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। তারপর তারা নিজেরা ভোট দিয়ে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে যে বাধা রয়েছে, তা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে বলেন, এই বাধা তুলে দেওয়া হলে অনেক যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা নির্বাচিত হলে পরিষদের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এটা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এটা করা যাবে না। কারণ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্ন না থাকে, তাহলে স্থানীয় নির্বাচনে সেটি আনা জটিল হবে। আমরা সবাই মিলে এ বিষয়ে আলোচনা করব। সব জায়গা থেকে একই মতামত পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটা ভোটারদের নির্ধারণ করতে হবে। এখানে যারা দাঁড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, কিন্তু নেতৃত্ব যোগ্যতায় ঘাটতি আছে, সেক্ষেত্রে কাকে নির্বাচন করব এ ব্যাপারে আমাদের ভোটারদের অনেক সচেতন হতে হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দলীয় প্রতীক থাকবে কিনা জানতে চাইলে তোফায়েল বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন কেউই চাচ্ছে না। কিন্তু দলীয় প্রতীক না থাকলেই দলের প্রভাবমুক্ত হবে, এটা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। দলের প্রভাব থাকবেই। যারা নির্বাচন করে তারা রাজনীতিও করে। কোনো অসুবিধা আমরা দেখছি না। এক দল থেকে একাধিক প্রার্থী দাঁড়াবে।
নির্বাচনে ‘না ভোট’ রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, না ভোটের বিষয়টি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিষয়। যেহেতু আমি সেখানকার সদস্য, আমি বলতে পারি। অনেক মানুষ না ভোটের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আমাদের কমিশনও চিন্তা করছে, না ভোটও রাখা যায়। কারণ এটি একটি চেকপয়েন্ট হবে। আমাদের দেশে এর আগে ইতিহাস আছে, ১৫১ থেকে ১৫২ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। না ভোটের বিধান থাকলে এ রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে জেতার সুযোগ চলে যাবে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে যাদের কোনো প্রার্থীই পছন্দ না। তারা আর ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। না, আপনি ভোটকেন্দ্রে আসুন। আপনার জন্য একটি অপশন থাকল ‘না’ ভোট দেওয়ার। ‘না’ ভোটের বিধানটি নির্বাচন সংস্কার কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রেখেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুই-চার দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে।
দেশের শাসনব্যবস্থা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সংসদীয় পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি এ দুইয়ের মধ্যে দোলাচল নিয়ে নানা বক্তব্য পাচ্ছি। মেম্বার, কাউন্সিলর ও সিভিল সোসাইটির বেশিরভাগ সদস্য সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে। অন্যদিকে চেয়ারম্যান ও মেয়ররা এটার বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এতদিন চেয়ারম্যান ছিলেন, এখন মেম্বারে দাঁড়াতে হবে কিংবা মেয়র থেকে কাউন্সিলরে দাঁড়াবেন। মেম্বারশিপকে চারদিক থেকে অবহেলা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
তিনি বলেন, কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করতে হলে মেম্বার কারা হবে, তাতেও অনেক পরিবর্তন করতে হবে। সংসদীয় পদ্ধতির দিকে জনমত সবচেয়ে বেশি। লিখিতভাবেও অনেক মতামত পাচ্ছি। আবার অসুবিধা কী আছে সেটাও মানুষ উল্লেখ করেছে। খুব সাধারণ একটি কথা এসেছে, ভোট কেনাবেচা হবে। ভোটের মধ্যে টাকা খরচ যে আবার শুধু সংসদীয় পদ্ধতিতে হচ্ছে, তাও না। মেয়র হতে গেলে প্রতিটি ওয়ার্ডের সব জায়গায় টাকা খরচ করতে হয়। তাহলে এ খরচের বহর কমাতে হবে নির্বাচন থেকে। না হলে ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে পারবে না।
সভায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাতে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হয়। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নগরের বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। একই ছাতার নিচে যাতে সব সেবা দেওয়া যায়, সেজন্য নগর সরকারের প্রয়োজন রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণের ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে থাকা দরকার। আর একই দিনে নির্বাচন হলে অর্থের অপচয় হবে না। সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া উচিত জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল বলেন, এলজিইডি মানে লোকাল গভর্নমেন্ট। কিন্তু এখানে সবকিছুই হয় সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে। স্থানীয় সেবাকে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করতে হবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয় সরকার নির্ভর। স্থানীয় সরকারকে সক্রিয় করার জন্য তাকে তার জুরিডিকশনে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ ছোট কোনো বাজেট বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হয়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে। দলীয় নির্বাচনের কারণে জনগণ তার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপে কাজ করা যায় না। প্রকল্প বণ্টনেও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপের কারণে ভাইস চেয়ারম্যানরা কোনো প্রকল্প পান না ।
সংশোধন ও ভোটার হতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তি
নগরের কোতোয়ালী থানার পাথারঘাটা এলাকার জনি দে। ভোটার হতে গিয়ে তার মাথায় ভাঁজ পড়েছে। মায়ের নাম বাংলা ও বাবার নামে ইংরেজি অক্ষরে ভুল রয়েছে। নিজে ভোটার হওয়ার চেয়ে এখন মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে গলদঘর্ম অবস্থা। ভোটার হতে গিয়ে একইভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন আরও তিনজন । ১০-১৫ দিন ধরে নির্বাচন অফিসে ঘুরছেন বলে জানান তারা। চকবাজার ওয়ার্ডের উর্দু গলি এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক ছেলের পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে পড়েছেন ঝামেলায়। তিন মাস ধরে ঘুরছেন স্ত্রীর এনআইডি সংশোধন করতে। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
নগরের কোতোয়ালী থানার পাথারঘাটা এলাকার জনি দে। ভোটার হতে গিয়ে তার মাথায় ভাঁজ পড়েছে। মায়ের নাম বাংলা ও বাবার নামে ইংরেজি অক্ষরে ভুল রয়েছে। নিজে ভোটার হওয়ার চেয়ে এখন মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে গলদঘর্ম অবস্থা। ভোটার হতে গিয়ে একইভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন আরও তিনজন । ১০-১৫ দিন ধরে নির্বাচন অফিসে ঘুরছেন বলে জানান তারা।
চকবাজার ওয়ার্ডের উর্দু গলি এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক ছেলের পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে পড়েছেন ঝামেলায়। তিন মাস ধরে ঘুরছেন স্ত্রীর এনআইডি সংশোধন করতে।
এখনও সংশোধন করতে না পারায় ছেলের পাসপোর্ট বানাতে পারছেন না তিনি। শুধু জনি দে বা আনোয়ারুল হক নন, ভোটার হতে গিয়ে দুর্ভোগ- ভোগান্তির কথা বললেন ১০-১২ জন। সম্প্রতি নগরীর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
জনি দে বললেন, স্কুল সনদে মায়ের নামের সঙ্গে এনআইডিতে ইংরেজি ‘I’ আর ‘E’ অক্ষরে অমিল রয়েছে। আবার বাবার এনআইডিতেও বাংলা অক্ষরে ভুল রয়েছে। এখন নিজে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে গিয়ে দুর্দশায় পড়েছি। মা-বাবার এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে নিজেই বেকায়দায় পড়েছি। চকবাজার এলাকার আনোয়ারুল আজিম বলেন, ছেলের স্কুল সনদে মো. আনোয়ারুল আজিম লেখা রয়েছে। কিন্তু আমার এনআইডিতে ‘মো.’ নেই। আর আমার স্ত্রীর নামে ‘বেগমের’ স্থলে ‘খাতুন’ হয়ে গেছে। এছাড়া ইংরেজি অক্ষরেও অমিল রয়েছে। ছেলে পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে তা নজরে পড়ে। ছোট সেই ভুলের সংশোধন করতে গিয়ে তিন মাস ধরে গলদঘর্ম অবস্থ। নগরের লাভ লেন এলাকায় অবস্থিত জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে কথা হয় ১০-১২ জনের সঙ্গে। কেউ মা- বাবার এনআইডি ভুলের জন্য, কারও স্কুল-কলেজের সনদে নিজে ও মা-বাবার নামে অমিল, কেউ জায়গা-জমির খতিয়ান না থাকা, কেউ বা সেবা সংস্থার কাগজপত্র দিতে না পারার কারণে ভোটার হতে দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকেই ২-৪ মাস ধরে ঘুরছেন নির্বাচন অফিসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, চার মাস আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেছিলাম। কর্মকর্তারা এই- ওই ডকুমেন্ট তলব করেন। অনেক হয়রানি-ভোগান্তির পরও সংশোধন করতে পারিনি। শেষে এক দালালের শরণাপন্ন হই। পাঁচ হাজার টাকায় বনিবনা হয় তার সঙ্গে। দফায় দফায় তিন হাজার টাকা দেই। এখনও সংশোধন করতে পারিনি।
দুর্দশায় প্রবাসীরা : সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। পাসপোর্ট নবায়ুনের সময় প্রতিনিয়ত দুর্দশায় পড়তে হয়। পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও কাতার প্রবাসী আবুল মনসুর মোবাইলফোনে বলেন, পাসপোর্ট ও এনআইডিতে নামে অমিল রয়েছে। অমিলের কারণে বাংলাদেশে পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি। এছাড়াও পুলিশ ভেরিফিকেশন ঝামেলাও রয়েছে। শেষমেশ কাতারে গিয়ে নবায়ন করেছেন। কীভাবে করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাসপোর্টের সঙ্গে মিল রেখে অনলাইন জন্মনিবন্ধন করেছি। সেই জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করেছি। বোয়ালখালীর মো. সাহেদ আকবর নামে এক প্রবাসী বলেন, এনআইডি ও পাসপোর্টে সাহেদ নামে ইংরেজি বানানে অক্ষরে ভুল ছিল। ছোট ভুলের কারণে পাসপোর্ট নবায়ন করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শেষে উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক দেন-দরবার ও বকশিশের বিনিময়ে এক অক্ষরের ভুল সংশোধন করেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুল সংশোধন ও ভোটার হতে আগ্রহীদের ভোগান্তিকে ঘিরে একটি দালালচক্র গড়ে উঠেছে। আউটসোর্সিং কর্মচারী, চাকরিচ্যুত কর্মচারী ও পুরনো দালাল মিলে এই চক্র কাজ করছে। তবে প্রকাশ্যে নয়, কৌশলে কাজ করেন তারা।
সূত্র জানায়, ভুল সংশোধনের কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার দোকানদারও দ্রুত কাজ করে দেওয়ার নামে দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আন্দরকিল্লা এলাকার কয়েকজন কম্পিউটার দোকানি এই কাজে জড়িত বলে জানা যায়।
রোহিঙ্গা সংকট : রোহিঙ্গা নাগরিকদের কারণে বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের নাগরিকেরা । চট্টগ্রাম জেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার হতে সাধারণত জন্মসনদ, জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদ, নিকটাত্মীয়ের এনআইডি, এসএসসি/সমমান অথবা অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/চৌকিদারি ট্যাক্স রশিদের ফটোকপিসহ পাঁচ ধরনের কাগজপত্র জমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসি। কিন্তু বিশেষ এলাকা হিসেবে ১৮ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এ নিয়ে জেলার বাসিন্দারা ভোটার হতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী পূর্বকোণকে বলেন, ভোটার হতে ইচ্ছুকদের পূর্বের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। তিন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
অনলাইন নিলামে তোলা হচ্ছে ফেব্রিক্সসহ ৪৭ লট পণ্য
চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্সসহ ৪৭ লট পণ্য অনলাইন নিলামে (ই অকশন) তোলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে অনলাইনে দরপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্সসহ ৪৭ লট পণ্য অনলাইন নিলামে (ই অকশন) তোলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে অনলাইনে দরপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামী ১২ জানুযারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এছাড়া আগ্রহী বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী) আজ ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সরাসরি পণ্য দেখার সুযোগ পাবেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, ৪৭ লট পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্স, প্লাস্টিক ম্যাটেরিয়াল, উড ফ্রি পেপার, ডুপ্লেক্স পেপার বোর্ড ওয়ান সাইড কোটেড উইথ গ্রে ব্যাক, পলিম্যাক্স পিপি পলিপ্রোপাইলিন, নিউ টায়ার উইথ টিউব, ফায়ার রেসিসটেন্ট ডাবল ডোর স্টিল, মার্বেল ব্লক, স্টিকার প্রিন্টেড, পেইন্টিং ফেব্রিক্স, ডেনিম ফেব্রিক্স কম্পোজিশন, সোডিয়াম সালফেট, ডার্ক গ্রিন রিফ্লেক্টিভ গ্লাস, উড ফ্রি পেপার, এনিম্যাল ফিড প্রিমিক্স, লিকুইড ফ্লো ম্যাজারিং ইন্সট্রুমেন্ট, শকস নিটিং মেশিন ও অ্যাডহেসিভ পেপার।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ১৬ লট বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিলামে তোলার মাধ্যমে ই-অকশনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৯ ও ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ২০ লট পেঁয়াজ নিলামে তোলা হয়। একই বছরের ৩ ও ৪ নভেম্বর কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল ১১২ লট গাড়ি তোলা হয়।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের ১২ ও ১৩ জুন কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা ১০৮টি গাড়ি পুনরায় নিলামে তুলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ৭৮ লট কার্নেট গাড়ি নিলামে তোলা হয়। এছাড়া ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন ধরনের ২৩ লট পণ্য এবং গত ৩১ ডিসেম্বর ১০৮ লট পণ্য ই-অকশনে তোলা হয়। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ধরনের ৭৯ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়। ১৬ মে নিলামে তোলা হয় ৯০ লট পণ্য। ২৬ জুন নিলামে তোলা হয় ৬২ লট পণ্য। ১৮ সেপ্টেম্বর তোলা হয় ৪৬ লট পণ্য, ৫ নভেম্বর তোলা হয়েছে ৪৫ লট পণ্য এবং সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর তোলা হয়েছে ৪৯ লট পণ্য।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক