বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি শুরু করেছেন নৌযান শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হওয়া নৌযানের শ্রমিকদের এই কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। শত শত লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। আমদানিকৃত পণ্য লাইটারিং বন্ধ হওয়ায় বহির্নোঙরে অলস বসে আছে ২০টির মতো বিদেশি মাদার ভ্যাসেলও। গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া বা আলোচনার কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্র বলেছে, এমভি আল বাখেরা জাহাজে মাস্টারসহ ৭ শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও হত্যাকারীদের শনাক্তসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে।
এতে করে সারা দেশের নদী পথে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে কর্মবিরতির বাইরে রাখা হয়েছে।

এদিকে লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের তথ্য অনুযায়ী, নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের ৪৫টি ঘাটে ৭৩৮টি জাহাজে আটকা পড়েছে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাহাজ আটকা পড়েছে যশোরের নোয়াপাড়া ঘাট, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ঘাট, মেঘনা ঘাট ও সিরাজগঞ্জের ঘোড়াশাল ঘাটে।

কর্ণফুলী নদী এবং ঘাটেও বিপুল সংখ্যক লাইটারেজ জাহাজ পণ্য নিয়ে অলস ভাসছে। এছাড়া বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ৩৫টি জাহাজে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নেয়ার জন্য বোঝাই করা হয়েছিল ৫০ হাজার টনের বেশি পণ্য। জাহাজগুলো আটকে আছে।

আবার বন্দরের বহির্নোঙরে ২০টি মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। এসব জাহাজে অন্তত ৫ লাখ টন পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির প্রথম দিনেই কার্যত অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর। যা জাহাজজট সৃষ্টিসহ আমদানি বাণিজ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সাত খুনের ঘটনার পরপরই প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নে ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল নৌযান ফেডারেশন। এই চার দফা দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলেন, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। যতদিন পর্যন্ত হত্যার বিষয়ে সঠিক বিচার না হবে ততদিন এই কর্মবিরতি চলবে বলেও তারা জানান।

বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নবী আলম সাংবাদিকদের জানান, দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। এ কারণে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।


ভেন্টিলেটর দিয়ে বন্দি ও স্বজনের ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষাৎ

চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় থাকা মহানগর হাজতখানার বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে কথা বলার চেষ্টার চিত্র যেন একটি নিয়মিত দৃশ্যই। ঝুঁকি নিয়ে এমন সাক্ষাতের ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গত নভেম্বরে এমন এক সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে এক আসামির আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় থাকা মহানগর হাজতখানার বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে কথা বলার চেষ্টার চিত্র যেন একটি নিয়মিত দৃশ্যই। ঝুঁকি নিয়ে এমন সাক্ষাতের ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

গত নভেম্বরে এমন এক সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে এক আসামির আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা পর্যন্ত দিতে হয়েছিল। কিন্তু রোগ রোগই রয়ে গেলে। হাজতখানার দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে আসামি-স্বজনের এ সাক্ষাৎ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেয়ালের সাথে ঝুলে থেকে ভেন্টিলেটর দিয়ে আসামি- স্বজনের এ সাক্ষাৎ অমানবিক। আসামি মানেই অপরাধী না। আর অপরাধী হলেও কারো সাথে অমানবিক কাজ করতে হবে সেটা তো না। আদালতের মতো মানবিক জায়গায় চলমান এ অমানবিক কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কারাগারে আসামির সাথে স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা রয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী সেটি হয়ে থাকে। আদালতের হাজতখানাতেও সাক্ষাতের সুযোগ থাকা উচিৎ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, হাজতখানায় অন্যায়ভাবে সাক্ষাতের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বৈধভাবে এটির ব্যবস্থা নেই। বৈধভাবে রেশনিং করে আসামি-স্বজনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কোনো খাবার-দাবার দেওয়া যাবে না। খাবার-দাবারের বিষয়টি আবার নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটাতে পারে। আসামির সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেয়ালের সাথে ঝুলে থেকে আসামির সাথে স্বজনরা সাক্ষাৎ করবে এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ কাজ সম্পূর্ণভাবে অমানবিক।

নিঃস্ব, গরীব স্বজনরা তো অন্যভাবে হাজতখানায় প্রবেশ করে আসামির সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে হাজতখানার দেয়ালের সাথে ঝুলে সেখানে থাকা ভেন্টিলেটর দিয়ে ছিল্লাছিল্লি এবং ইশারায় কথা বলেন। হাজতখানার দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে আসামি-স্বজনের কথোপকথন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাজতখানার সামনে দিয়ে চলাফেরার সময় প্রায়ই এ ঘটনা চোখে পড়ছে। এ পন্থায় সাক্ষাতে ঝুঁকি রয়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নজরে নেবেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর হাজতখানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহিন আলম। তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। তার স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন বিকাশ চন্দ্ৰ সাহা । গত বৃহস্পতিবার বিকাশ চন্দ্র সাহা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ওসি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমিও নতুন। দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে আসামি-স্বজনের সাক্ষাতের বিষয়টি নজরে রয়েছে আমাদের। আমরা বিষয়টির সুরাহা করব। আমরা হাজতখানার সামনে দুজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করব। যাতে করে দেয়ালের সাথে ঝুলে ভেন্টিলেটর দিয়ে আসামি-স্বজনের সাক্ষাৎ না ঘটে । আশা করছি, আর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।

উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাজতখানায় এক আসামির আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তার নাম মোহাম্মদ রানা। জয়নাল নামের অপর একজন আসামিকে লাথি মারতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। দুজনই নগরীর কোতোয়ালী থানার পৃথক দুটি মামলার আসামি। আদালতে হাজিরা দিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদেরকে হাজতখানায় আনা হয়েছিল। এ বিষয়ে তখন নগর পুলিশের প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছিল, আদালতের হাজতখানায় থাকা জানালা বা ভেন্টিলেটর দিয়ে স্বজনদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন জয়নাল। এতে রানার ডিস্টার্ব হচ্ছিল। এ জন্য তিনি জয়নালকে লাথি মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু জয়নাল সরে পড়লে রানার লাথি গিয়ে দেয়াল বা অন্যত্র পড়ে। এতে রানা আহত হয়েছেন। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর