বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

তিন মামলা, গ্রেপ্তার ২৭

বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সংঘাতের ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ১ হাজার ৪৭৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সংঘাতের ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ১ হাজার ৪৭৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৯ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে।

বাকি ১৪শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আসামিদের সকলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ গতকাল আজাদীকে তিনটি মামলা রেকর্ডের কথা নিশ্চিত করেছেন । পুলিশ বলেছে, আদালত এলাকায় সংঘাতের ঘটনায় ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ জন পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং ৭ জন আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িত।

পুলিশের উপর হামলা এবং গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় রুজুকৃত তিনটি মামলায় গতকাল ২৭ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে আদালত চত্ত্বরে হামলার ঘটনায় ১১ জন এবং রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে এবং কোতোয়ালী মোড়ের ঘটনায় ৮ জন করে আসামি। আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই আসামিদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আলিফ হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ৭ আসামিও রয়েছেন সিসিটিভি এবং ছবি দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। উক্ত ২৭ বলে গতকাল পুলিশ নিশ্চিত করেছে। যাদেরকে ভিডিও, জনের বাইরে গতরাতে ডিবি পুলিশ রাজীব ভট্টাচার্য প্রকাশ সুমন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। সে ফটিকছড়ির উত্তর সর্তার আবদুল্লাহপুরের সুনীল ভট্টাচার্যের পুত্র। বর্তমানে সে নগরীর পাথরঘাটার বান্ডেল রোডের ম্যানকা স্কুলের পেছনে মিয়া সাহেবের বিল্ডিং এর ৩ নম্বর রুমের ভাড়াটিয়া।

পুলিশ সূত্রে বলা হয়, আদালত চত্বরে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় রুজুকৃত মামলায় এজাহারনামীয় গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হচ্ছে জয় নাথ (১৯), পিতা-স্বপন নাথ, পাথরঘাটা, ইকবাল রোড; রুমিত দাশ (৩২), পিতা-মৃত মানুয়া মেথর, মেথরপট্টি, নয়ন দাশ (২৮), পিতা-মৃত বালাম দাশ, মেথরপট্টি, গগন দাস (৩৪), পিতা-মৃত উমাচরণ দাস, মেথরপট্টি, সুমিত দাস (২০), পিতা-খোকন মেথর, মেথরপট্টি, আমান দাস (৩০), পিতা-মৃত চান্দা দাস, মেথরপট্টি, বিশাল দাস (২৬), পিতা-বাদল দাস, মেথরপট্টি, সনু দাস মেথর (২৪), পিতা-মনু দাস, মেথরপট্টি, সুমন দাশ (২২), পিতা-রতন দাশ, কেলিশহর, সাজু বৈদ্যু (৩৯), পিতা-মধুসুদুন বৈদ্য, গুর্খা ডাক্তার লেইন, পাথরঘাটা ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী (২৮), পিতা-গুনচন্দ্র সূত্রধর, ব্যাটারী গলি।
রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে রুজুকৃত মামলায় গ্রেপ্তারকৃ ত আসামীরা হলো পার্থ চক্রবর্তী (৩৭), পিতা-মৃত দুলাল চক্রবর্তী, খাজা রোড, কসাইপাড়া, অপূর্ব শীল (২১), পিতা-রতন শীল, দেওয়ানহাট, উজ্জল দাশ জনি (২৭), পিতা- মৃত অর্ধীর দাশ, চাকতাই, অপু চন্দ্র সাহা (৫৫), পিতা-মৃত সুভাস চন্দ্র সাহা, বাইন্যাপট্টি, নিলয় দাশ (২৪), পিতা-রনজিত কুমার দাশ, বহিাট, কাজী অফিস বিল্ডিং, ধ্রুব দাশ (১৯), পিতা-মিলন দাশ, সেবক কলোনী, মোঃ দেলোয়ার হোসেন (২১), পিতা- মোঃ মজিবুর রহমান, মাস্টারপুল, বউ বাজার ও মোঃ নুরু (১৯), পিতা-মোঃ জাহের মিয়া, বর্তমানে মাস্টারপুর, বউ বাজার।

কোতোয়ালী থানার সামনে মহিমু দাশ রোডের মুখে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে ইমন চক্রবর্তী (২৪), পিতা-প্রবীর চক্রবর্তী, পরৈইকোড়া, আনোয়ারা, বর্তমানে সাধু মিষ্টি ভান্ডার, সুজন চন্দ্র দাশ (৩৪), পিতা-যুগল চন্দ্র দাশ, হেয়ার কার্টিং এর কর্মচারী, মৌলভীরহাট, সৌরভ দাশ (২৪), পিতা-মৃত সঞ্জীব দাশ, হেমসেন লেইন, মোঃ রাকিব (২৩), পিতা-আমির হোসেন ডবলমুরিং, সুমন দাস (৪০), পিতা-নারায়ন দাস, পশ্চিম মাদারবাড়ী, রুপন দাশ (২৫), পিতা-শ্যাম দাশ, চকবাজার, আহমদ হোসেন (২৫), পিতা-মৃত আঃ মালেক, শিকলবাহা ও মোঃ সাকিবুল আলম (১৯), পিতা-মোঃ ফেরদৌস আলম, উত্তর নালপাড়া।

পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশকে ঘিরে মঙ্গলবার ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে।

এর আগে ওইদিন বিকালে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ১২ জন সদস্য আহত হন। এছাড়া ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়িও।.

কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল এবং কোতোয়ালী মোড় এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উক্ত তিনটি পৃথক ঘটনায় পৃথকভাবে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় রুজু হওয়া মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত আরো ৬শ থেকে ৭শ জনকে আসামি করা হয়েছে। রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে হামলার ঘটনায় ১৪ জনের নামোল্লেখ করে, অজ্ঞাত ৩শ থেকে ৪শ জনকে আসামি করা হয়। কোতোয়ালী মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত আড়াইশ থেকে ৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে।


ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামজুড়ে মিছিল আর মিছিল। এতে দাবি উঠেছে ইসকন নিষিদ্ধের। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে মহাসড়কে ইসকন নিষেদ্ধের দাবিতে ক্ষোভ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি দৈনিক পূর্বদেশের খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

চট্টগ্রামজুড়ে মিছিল আর মিছিল। এতে দাবি উঠেছে ইসকন নিষিদ্ধের। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে মহাসড়কে ইসকন নিষেদ্ধের দাবিতে ক্ষোভ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার নগরের টাইগারপাস এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। তার আগে মঙ্গলবার নগরের প্রায় প্রতিটি এলাকায় ইসকন নিষেদ্ধের দাবি নিয়ে প্রতিবাদি স্লোগানে মিছিল করেছে স্থানীয় লোকজন।

টাইগারপাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে অংশ নেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ হাজারো ছাত্র-জনতা। সেখানে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে ইসকন। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্ট দাড়িওয়ালা- টুপিওয়ালারা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। তবুও উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে হত্যা করেছে।

ভারতে বসেই স্বৈরাচার হাসিনা যত ষড়যন্ত্র করুন না কেন, আমরা রুখে দিব। বাংলাদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদীতার এখানে ঠাঁই নেই। ইসকনের বর্বরতা আইয়ামে জাহিলিয়াতকে হার মানিয়েছে। তাই অবিলম্বে ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে।

ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের হতবাক করেছে। দেশের সাধারণ সনাতনীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে আমরা বেঁচে থাকতে তা কোনভাবেই হতে দেবো না। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের রুখে দিতে জুলাই-আগস্টের মতো আবারও মাঠে থাকবে ছাত্রজনতা।’

সমাবেশে বক্তারা যারা যারা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের দ্রুতসময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

এদিকে নিহত এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে উপস্থিত লোকজন বিক্ষোভ করেন। সেখানেও ইসকন নিষেদ্ধের দাবি জানানো হয়। জানাজা শেষে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে লোকজন বিক্ষোভ করেন। তখন আবেগাপ্লুত ছাত্র-জনতা নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন।

অন্যদিকে বুধবার সকালে চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুলের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আইনজীবী, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। নামাজে জানাজার পরে দ্রুতসময়ের মাঝে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে স্থানীয় জনতা বিক্ষোভে জড়ো হন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর