মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্যাংক হিসাবের চেকে আ জ ম নাছিরের স্বাক্ষর আসে কীভাবে?

নগরের অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন- ভাতা পরিশোধ, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় নির্বাহ করা হয় দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মুরাদপুর শাখা এবং প্রাইম ব্যাংক প্রবর্তক শাখায় রয়েছে এ দুটি হিসাব। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

নগরের অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন- ভাতা পরিশোধ, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় নির্বাহ করা হয় দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক মুরাদপুর শাখা এবং প্রাইম ব্যাংক প্রবর্তক শাখায় রয়েছে এ দুটি হিসাব। এখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে চেকে যৌথ স্বাক্ষর করার ক্ষমতা আছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির।

এ ক্ষমতাবলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ম্যানেজিং কমিটির ‘সভাপতি’ হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন স্বাক্ষর করে আসছেন।

একইসঙ্গে চলতি বছর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া কবিতা চৌধুরী স্বাক্ষর করছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ‘আত্মগোপনে’ চলে যান আ জ ম নাছির। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। ফলে প্রকাশ্যে আসছেন না তিনি।

কিন্তু গত প্রায় ৩ মাস ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে ব্যাংক হিসাবের চেকে স্বাক্ষর রয়েছে তার। প্রশ্ন উঠেছে, কেউ কি আ জ ম নাছিরের স্বাক্ষর ‘জাল’ করছেন? নাকি বিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কেউ গোপনে তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে স্বাক্ষর নিয়ে আসছেন?

এদিকে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২ জুলাই আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষককে পদাধিকার বলে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত ৭ সদস্যের একটি ম্যানেজিং কমিটি ২ বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি ৬ মাসের জন্য অনুমোদন দেয় বোর্ড।

একই বছরের ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই অ্যাডহক কমিটির সভায় ‘শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, দৈনন্দিন ব্যয়, পরীক্ষা পরিচালনা ব্যয়, ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলআপ এবং উন্নয়ন ব্যয়সহ নানাবিধ খরচ নির্বাহের জন্য বিদ্যালয়ের নামে পরিচালিত হিসাবসমূহের ব্যাংক অপারেটরের নাম বা স্বাক্ষর পরিবর্তন’-এর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি।

বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোনো ম্যানেজিং কমিটি নেই। তাই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে আ জ ম নাছিরের স্বাক্ষর করারও সুযোগ নেই।

তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি, অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে রিট করেন আ জ ম নাছির। আদালত অ্যাডহক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কবিতা চৌধুরীর দাবি, গত ৩০ মে থেকে পূর্বের কমিটি (আ জ ম নাছিরকে সভাপতি করে গঠিত কমিটি) বহাল আছে।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলছেন, ২০১৯ সালে আ জ ম নাছিরকে সভাপতি করে ২ বছরের জন্য অনুমোদিত কমিটি ৫ বছর পরও বহাল থাকে কীভাবে? তাছাড়া সর্বশেষ অ্যাডহক কমিটির পর বোর্ড নতুন করে কোনো কমিটি অনুমোদন দেয়নি। ফলে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে কার্যত ম্যানেজিং কমিটিহীন আছে অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

মাসে খরচ কত : অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক আছেন ৫৬ জন। অন্যান্য কর্মচারীসহ এ সংখ্যা ৭৯। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। এছাড়া ৬০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল, ৫ হাজার টাকা পানির বিল খরচ হয়। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৩ হাজার ২০০ জন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন ফি বিদ্যালয়ের প্রধান আয়।

প্রাইম ব্যাংকে থাকা হিসাব দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। এছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংকের দুটো হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফি নেওয়া হয়। এছাড়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের নাসিরাবাদ শাখায় একটি হিসাব থাকলেও বর্তমানে তা সচল নেই।

কী বলছেন প্রধান শিক্ষক : অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কবিতা চৌধুরী গত বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে আজাদীকে বলেন, অ্যাকাউন্টস থেকে উনার (আ জ ম নাছির উদ্দীন) স্বাক্ষর সম্বলিত চেক আনলে আমি স্বাক্ষর করি। উনার স্বাক্ষর থাকলেই আমি করি, অন্যথায় করি না। ওরা (হিসাব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারী) কীভাবে আনে আমি জানি না। তবে ধারণা করছি উনার স্বাক্ষর করা চেক আছে । আমার সঙ্গে উনার (আ জ ম নাছির) যোগাযোগ নেই। আমি নিজেও উনার (আ জ ম নাছির) সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, পারিনি। উনি কোথায় আছেন আমি জানি না।

এর আগে একইদিন দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দপ্তরে তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। এখন পর্যন্ত কারো বেতন বকেয়া নেই গত মাসেও সবাই বেতন পেয়েছেন।

ওই সময় ‘৫ আগস্টের পর থেকে আ জ ম নাছির উদ্দীন আত্মগোপনে আছেন। বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের ক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে লেনদেন কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, এটা (বিদ্যালয়) সোসাইটির (দি চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি.) প্রতিষ্ঠান। সোসাইটির অফিস থেকে সবকিছু পরিচালিত হয়। তারা ভালো বলতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমি নিজে রিটায়ার করেছি। নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমাকে বলা হয়েছিল অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। পরে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়। ২ আগস্ট তিনি (আ জ ম নাছির উদ্দীন) স্কুলে আসেন এবং ইন্টারভিউও নিয়েছেন। নিয়োগটা হয়ে গেলে আমি বেঁচে যেতাম।

আ জ ম নাছিরের অনুপস্থিতিতে ব্যাংক হিসাবের লেনদেন প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস অফিসার ইমরান হোসাইন আজাদীকে বলেন, আমি যতদূর জানি একক স্বাক্ষরে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট আলংকারিক পোস্ট, মেম্বার সেক্রেটারি অল ইন অল।

অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে পরিচালিত হিসাবসমূহের ব্যাংক অপারেটরের নাম বা স্বাক্ষর পরিবর্তন না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, অ্যাডহক কমিটি হওয়ার তিন-চার দিনের মধ্যে স্টে (স্থগিত) হয়ে যায়, পূর্বের কমিটি দায়িত্ব পালন করে । তাই আর পরিবর্তন করতে হয়নি।

কী বলছেন সোসাইটির দায়িত্বশীলরা : দি চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি.-এর সঙ্গে অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আর্থিক পরিচালনার কোনো সম্পর্ক নেই বলে আজাদীর কাছে দাবি করেছেন সোসাইটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মামুন-অর-রশীদ। গত বুধবার দুপুরে সোসাইটি কার্যালয়ের নিজ দপ্তরে তিনি বলেন, বিদ্যালয় সোসাইটির প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও হিসাব-নিকাশ সব আলাদা। এর সঙ্গে সোসাইটির কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি দাবি করেন, সোসাইটির সভাপতি বা তার প্রতিনিধি অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে থাকেন। বর্তমানে সোসাইটির সভাপতি হচ্ছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে না থাকায় তার প্রতিনিধি হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এখানে সোসাইটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বোর্ডের বক্তব্য : চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী গত বুধবার আজাদীকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি না থাকায় আমাদের কাছে কেউ সমস্যার কথা বলেনি। তবে এর মধ্যে তো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারি সার্কুলার হয়েছে, কমিটির সভাপতি না থাকলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা স্বাক্ষর করবেন।

প্রকাশ্যে না থেকেও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনের স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওখানে তো কমিটির কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা কোনো কমিটির অনুমোদন দিইনি। কমিটি থাকলে আমরা অ্যাডহক কমিটি দিলাম কী করে ?
অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে রিট করলে পূর্বের কমিটিকে বহাল করার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ রকম কোনো আদেশের কপি তো আমার কাছে আসেনি।

অ্যাডহক কমিটি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে স্বাক্ষর প্রদানকারীর ক্ষমতা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আসলে আমরা ওখানে তদন্ত করার জন্য অনেক চিঠিপত্র দিয়েছি। অনিয়ম বা দুর্নীতি যদি কিছু থাকে তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছি । ওই রিপোর্ট এখনো পাইনি ।


পুকুরে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু

বিভিন্নস্থানে পুকুরে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চকরিয়ায় ২, লোহাগাড়া ১ ও বাঁশখালীতে ১ শিশুর মৃত্যু হয়। চকরিয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

বিভিন্নস্থানে পুকুরে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চকরিয়ায় ২, লোহাগাড়া ১ ও বাঁশখালীতে ১ শিশুর মৃত্যু হয়। চকরিয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড অলির বাপেরপাড়া জামে মসজিদের পুকুরে এ ঘটনা ঘটে।

দুই শিশু হল- সিকদারপাড়া জয়নাল আবেদীন দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শাহাদাত হোসেন সামির ও সাহারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. আল ফয়েজ মিশকাত।

অলির বাপের পাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নুরুল কাদের জানান, বেলা ১২টার দিকে দুই শিশু মসজিদের পুকুরে গোসল করতে নামে। পরে জোহরের আজান হলে মুসল্লিরা অজু করতে পুকুরে যায়। পুকুরের ঘাটে কাপড় দেখা গেলেও কাউকে দেখা না যাওয়ায় তাদের সন্দেহ হয়। পরে সোয়া ১টার দিকে শিশু সামিরের মাথা দেখতে পায় তারা। এ সময় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পরে আরও এক শিশুর সন্ধান না পাওয়ায়
পুকুরে জাল ফেলে দুপুর ২টায় মিশকাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফ- রিন মুন্না দুই শিশু মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

লোহাগাড়া : উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আমতলী এলাকার আইয়ুব সিকদার পাড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম তাজুয়াল ইসলাম। আড়াই বছর বয়স তার।

স্বজনেরা শিশুটিকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান পুকুরে ভাসমান শিশুটির মৃতদেহ। এরপর স্বজনেরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চি- কিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে।

বাঁশখালী : পুকুরে ডুবে মোসাম্মৎ নুসরাত (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ১টায় পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জলদী রঙ্গিয়া ঘোনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নুসরাত প্রবাসী আবু সালেকের কন্যা। নিহতের মামা আব্দুল খালেক বলেন, দুপুরে পরিবারের সদস্যরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পুকুরের পানি থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।


ডেইরি ফার্মের আড়ালে কাটা হচ্ছে পাহাড়

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড় কাটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ‘পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার’ সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র একের পর এক পাহাড় কাটছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।

পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…

চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড় কাটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ‘পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার’ সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র একের পর এক পাহাড় কাটছে।

গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে অন্তত ১২০টি পাহাড় কেটে ফেলেছে। বাকি যে পাহাড়গুলো আছে সেগুলোও কেটে চট্টগ্রামকে পাহাড়শূন্য করার তোড়জোড় চলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে বলেছে, লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় পাহাড়খেকোদের ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জালালাবাদ এলাকার পাশাপাশি ফয়’স লেকের লেকভিউ আবাসিক এলাকার পাশে সুউচ্চ একটি পাহাড় কেটে ফেলতে দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সামনে জনতা ডেইরি ফার্ম নামের একটি গরুর খামার করে পেছনে সুউচ্চ একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। স্থানীয় মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি পাহাড়টি কাটছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

আলতাফ হোসেন নিজেকে জনতা ডেইরি ফার্মের মালিক এবং লেকভিউ আবাসিক এলাকার সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে বলেন, পাহাড়টি ভেঙে পড়েছিল। আমি একটু ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। স্থানীয়রা একটি মাদ্রাসা করতে বলেছেন। তাই মাদ্রাসা করার জন্য কাজে হাত দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু লোকজন এসে বাধা দেওয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, তিনজন মানুষ দুদিন পাহাড় থেকে মাটি সরিয়েছিল। জালালাবাদে বিস্তৃত এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে।

ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের পাশের সুউচ্চ অনেক পাহাড় রাতে-দিনে কাটা হচ্ছে। সংববদ্ধ একটি চক্র বিশাল একটি এলাকা নিয়ে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটেছে জানিয়ে স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, ইতোপূর্বে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড়খেকোদের দমাতে পারেনি।

অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। মামলাকে দুর্বৃত্তরা পাত্তা দেয় না বলে মন্তব্য করে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড় কাটা নিয়ে একাধিক মামলা হলেও পাহাড়খেকোরা দমেনি।

একটি গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে নগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে ঠেকে। মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ফেলা হয়। এটি মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালী ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় অসংখ্য পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হয়েছে পাঁচলাইশ থানায়। এখানে প্রায় ৭৪ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়েছে। ত্রিশ বছর নগরীতে ১২০টির মতো পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। নগরীতে আগে ২০০টি পাহাড় ছিল।

ইতোমধ্যে ১২০টি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ৮০টির মতো পাহাড় টিকে আছে। এখনো অনেক পাহাড় কাটা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বায়েজিদ বোস্তামী ও খুলশীর জালালাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটা হচ্ছে ফয়’স লেকের লেকভিউ আবাসিক এলাকা এবং জঙ্গল সলিমপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পুলিশের তৎপরতায় ছন্দপতন ঘটে। ইতোমধ্যে পুলিশ কাজে যোগ দিলেও ছন্দ পুরোপুরি ফিরে আসেনি। এতে করে পাহাড়খেকোদের পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে রাতে- দিনে সমানতালে পাহাড় কাটা হচ্ছে নগরীতে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়খেকোরা বেপরোয়া। নানা কৌশলে তারা পাহাড় কাটে। এদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বহু অভিযান করেছে, মামলা করেছে। কিন্তু তারা ঠিকই রাতের আঁধারে পাহাড় কাটছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত ক্রাশ প্রোগ্রাম ছাড়া পাহাড়খেকোদের দমন করা যাবে না। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে ধরে তাৎক্ষণিকভাবেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। স্থাপনা গড়ে তুললে ভেঙে ফেলতে হবে। সিডিএ প্ল্যান দিলে সেগুলো বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ওয়াসার সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলেই কেবল এসব পাহাড়খেকোকে ঠেকানো যাবে।

তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন গিয়ে অভিযান করলাম। মামলা করলাম। কিন্তু আমরা ফিরে আসার পর আবার তারা পাহাড় কাটা শুরু করে। পাহাড় কাটা এত লাভজনক যে, এক কাঠা জায়গা বের করতে পারলে লাখ লাখ টাকা।

পাহাড়ের মাটি বিক্রি করেও কামানো হয় টাকা। কাঁচা টাকার এমন রমরমা অবস্থায় ঢাল তলোয়ারবিহীন কোনো উদ্যোগ কোনোদিনই সফল হবে না।

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর