দিন দিন পাহাড়শূন্য হয়ে পড়ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। যেখানে কয়েকদশক আগেও ২০০টির বেশি পাহাড়ের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে এগুলো অস্তিত্বশূন্য হয়ে এক তৃ তীয়াংশের নিচে নেমে এসেছে। তবুও কোনোভাবে পাহাড়ের প্রতি অত্যাচার থামছে না পাহাড়খেকোদের । এটি দৈনিক সুপ্রভাতের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
দিন দিন পাহাড়শূন্য হয়ে পড়ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। যেখানে কয়েকদশক আগেও ২০০টির বেশি পাহাড়ের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে এগুলো অস্তিত্বশূন্য হয়ে এক তৃ তীয়াংশের নিচে নেমে এসেছে। তবুও কোনোভাবে পাহাড়ের প্রতি অত্যাচার থামছে না পাহাড়খেকোদের । মাঝেমধ্যে পাহাড় কাটা শ্রমিকদের গ্রেফতার করার ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু এর নেপথ্যের কুশীলবেরা রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক আশির্বাদে বরাবরই রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পাহাড়ের অস্তিত্ব বিলোপ অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট- বায়েজিদ লিংক রোড বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে। অন্যদিকে, সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া পাহাড়গুলোকে ঘিরে কয়েকদশক ধরে অবৈধ বানিজ্য চালিয়ে আসছে প্রভাবশালীরা। শুধু এ রোড নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার পাহাড়গুলো আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’য়েকটা অভিযান হলেও অর্থদণ্ডেই তার সমাধান হয়ে যায়। ফলে প্রভাবশালী চক্রের
সদস্যরা প্রশাসনের এসব অভিযানকে তেমন পরোয়া করে না। ২৬ পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা বেড়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে সরকারি-বেসরকারি ২৬টি পাহাড়ে ছয় হাজার ৫৫৮টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি পাহাড়ে বসবাস করছে ছয় হাজার ১৭৫টির বেশি পরিবার। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩৮৩টি। রেলওয়ের মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ পরিবারের বসবাস নগরীর ফয়’স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিল পাহাড়ে। এখানে চার হাজার ৪৭৬টি পরিবার থাকে। এছাড়া মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল এলাকায় বসবাস ৪৩১টি পরিবারের। লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে বসবাস ২৮৮টি পরিবারের। রেলওয়ের মালিকানাধীন ষোলোশহর স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৭৪টি, নগরীর জাকির হোসেন সড়কে পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি, পলিটেকনিক হক স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি এবং ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাঁচটি পরিবারের বসবাস রয়েছে। সব মিলিয়ে ছয় হাজার ৫৫৮টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রেলওয়ের জমিতে রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩২টি স্থাপনা। রেলওয়ের পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে দিতে ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চেষ্টা করলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্য না পাওয়ায় সেই অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। সেই হিসেবে গত বছরের তুলনায় অবৈধ বসবাসকারীদের সংখ্যা চলতি বছর আরও বেড়েছে।
বিগত চার দশকে ১২০টির পাহাড় বিলুপ্ত
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত চার দশক আগে চট্টগ্রামে ২০০টির বেশি পাহাড় ছিল, বর্তমানে তার মধ্যে ১২০টির বেশি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মেসবাহুজ্জামানের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে টিকে থাকা পাহাড় রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন এক হয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। পাহাড় হচ্ছে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার খুঁটির মতো, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকূলের সুপেয় পানির আধার বলা যায়। ক্রমাগত পাহাড় ধ্বংস হয়ে গেলে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এছাড়া অতিরিক্ত পাহাড় বিলুপ্ত হওয়ায় ইট-কংক্রিটের সৃষ্ট উত্তাপ পরিশোধন করার বিকল্প না থাকায় নগরীর তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পাহাড় কেটে আর্থিকভাবে যতটা না লাভবান হবে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত দেড় দশকে ২০০ এর বেশি মানুষ মারা যায়
পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়লেও দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে বরাবরই পার পেয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালী পাহাড় দখলকারীরা। যার কারণে এক দিকে যেমন প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে ঠিক অন্যদিকে অসচেতনতায় মরছে মানুষ। গত দুই দশকে পাহাড় ধসে অন্তত ২০০- এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। সূত্রমতে, ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৯ জন মারা যাওয়ার পর শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । পাহাড় রক্ষায় বেলার দায়ের করা মামলায় ২০১২ সালের ১৯ মার্চ সুনির্দিষ্ট রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ে নির্মিত স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও নানা জটিলতায় অনেকটা বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্র মতে নগরীর ১৩টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবার বাস করছে। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হবে। ২০০৭ সালের ১১ জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২৯ জন, ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজার মতিঝর্ণা এলাকায় ১১ জন, ২০১১ সালে নগরীর বাটালী হিলে ১১ জন, এ ছাড়া ২০১২ সালের ১ জুলাই বাটালী হিল পাহাড়ের প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনসহ নগরী এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়চাপায় ২৪ জন, ২০১৭ সালের ১২ ও ১৪ জুন পাহাড় ধসে ৩৭ জনের পাশাপাশি হিসেব করলে বিগত দেড় দশকে প্রায় ২০০ এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছে।
বর্ষা এলেই শুরু হয় নানা নাটকীয়তা
২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন । সেই ভয়াল ঘটনার পর ‘জন্ম’ হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির। সেই পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ছিল বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া ৩৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- পাহাড় কাটা বন্ধ করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা। তবে অভিযোগ রয়েছে, ব্যবস্থাপনা কমিটি কেবল বর্ষা এলেই সভা করে কোনমতে দায় সারে। প্রতিবছর বর্ষার আগে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ ও পাহাড় কাটা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে কিছু কাজও হয় । কিন্তু এরপর যেন কুম্ভকর্ণের ঘুমে চলে যায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি! আর এই সুযোগে পাহাড়ে নতুন করে বসতি স্থাপন করে চলেন প্রভাবশালী পাহাড়খেকোরা। তিন সংস্থার আশির্বাদে পাহাড়ে পৌঁছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি এদিকে, একদিকে যেমন পাহাড়খেকোরা মাটি কেটে সমতল করছে, রাস্তা বানাচ্ছে। ঠিক অন্যদিকে সেই রাস্তায় পানি, আলো, গ্যাস পৌঁছানোর মতো ব্যবস্থা করে দেন সরকারি তিন সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কিছু অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী। ঘুষের বিনিময়ে পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনাকারীরা সহজে পেয়ে যান গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি । এসব পাহাড়গুলো বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন চসিক কাউন্সিলরসহ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা। ফলে, প্রশাসন চাইলেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরাতে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হন। জেলা প্রশাসনের ঝুঁকিতে দেড় ডজন পাহাড়
এদিকে জেলা প্রশাসনের ঝুঁকিতে থাকা ২০-এর অধিক পাহাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারপাস মোড়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম কোণের পাহাড়, সিআরবির পাদদেশ, টাইগার পাস-লালখানবাজার রোডসংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুলসংলগ্ন পাহাড় ও আকবর শাহ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়। সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালী হিলসংলগ্ন পাহাড়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকাধীন পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন পাহাড় ও লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকায় রয়েছে। বাকি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো হচ্ছে বন বিভাগের বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউটসংলগ্ন পাহাড়। ইস্পাহানি গ্রুপের ইস্পাহানি পাহাড়। জেলা প্রশাসনের ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড় মোড়সংলগ্ন পাহাড়, এ কে খান কোম্পানি পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনির পাহাড়, লালখানবাজার, চান্দমারী রোডের জামেয়াতুল উলুম ইসলামী মাদরাসাসংলগ্ন পাহাড়, সরকারি (এপি সম্পত্তি) নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাসংলগ্ন পাহাড়। চট্টগ্রামে পাহাড় দখলের প্রতিযোগিতায় আছে নামসর্বস্ব সংগঠন ও নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব পাহাড়গুলো দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরাও বাদ যাননি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। গত কয়েক বছরে পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে সমতল। সেই সমতলের ওপর রাতারাতি গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। এমনকি প্লট বানিজ্য করে রাতারাতি শত কোটির মালিক হয়েছেন প্রভাবশালীরা।
সক্রিয় বেলা
এদিকে পাহাড় কাটা বন্ধে সক্রিয় রয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে নতুন করে গজিয়ে ওঠা পাহাড়খেকোদের বিষয়ে নজরে আছেন বলে জানান সংগঠনটি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফিল্ড ফ্যাসিলিটর মুনিরা পারভিন সুপ্রভাতকে বলেন, “বেলা পরিবেশ নিয়ে সবসময় কাজ করছে। প্রশাসনের চাপে পড়ে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবারও পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে নগরীর আসকারদীঘির পাহাড় নিয়ে আদালতে মামলার বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে। এখন সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ আছে। মামলার শুনানির পর আমরা হয়তো ফলাফল পাবো। তাছাড়া আমরা অনেকটা জনগণ ও গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। কেউ এগিয়ে আসলে আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’
মামলা ও জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ পরিবেশ অধিদপ্তর
জানা যায়, বিগত একযুগ ধরে পাহাড় কাটা নিয়ে ৫৬০টি অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব অভিযানে সংস্থাটি ৮৫ কোটি ২ লাভ টাকা জরিমানা করেছে। ২০২২ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৩৭টি মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিবেশ কর্মকতা সিনিয়র রসায়নবিদ রুবাইয়াত তাহরিন সৌরভ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘পাহাড় কাটা নিয়ে আমরা মামলা দিচ্ছি। তবুও পাহাড়ে গড়ে উঠছে স্থাপনা। বর্তমানে আমরা পাহাড়ের খতিয়ান সংগ্রহে জোরদার করছি। যেন সহজে পাহাড়ের মালিকানা নিশ্চিত করা যায়। তার মধ্যে আইনগত মামলার বিষয় চলমান রয়েছে।
কঠোর অবস্থানে অন্তবর্তীকালীন সরকার অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিভাগ। এছাড়াও বিশ্বের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ো-ডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় পানি ও জমির ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করার জন্য আইন পাস করা হয়েছে। এসব বিবেচনা করে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও থানাগুলো পুরোপুরি সক্রিয় হতে সময় লাগায় কিছু দুষ্কৃতকারী চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে আবারও পুরোনো রুপে ফিরে এসেছে। যার মধ্যে অন্যতম এলাকা আকবরশাহ । গত ৩ সেপ্টেম্বরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড় কাটা এলাকা পরিদর্শন ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন । এসময় হাতেনাতে দুইজন ব্যক্তিকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে অনেক পাহাড় রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন। নগরী ও আশপাশের এলাকায় সরকারি- বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ২৮টি পাহাড় আছে। মূলত এগুলো ধীরে ধীরে কেটে সাফ করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহল সবকিছু ম্যানেজ করে পাহাড়গুলো কাটছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে ‘দানা
নবান্নের মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি আরও পশ্চিম- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়েছে। এটি দৈনিক পূর্বদেশের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
নবান্নের মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি আরও পশ্চিম- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, ঘূর্ণিঝড় দানা সমুদ্রে থাকাবস্থায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় এর শক্তি অর্জন করতে পারে। যা ঘণ্টায় একশ’ ২০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসতে পারে। এরই মধ্যে দেশের চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র যে গতিপ্রকৃতি, তাতে এর আছড়ে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা ভারতের উড়িষ্যার উপকূল। তবে তার প্রভাব পড়তে পারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোথায় আঘাত হানতে পারে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এবারের ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র নামকরণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। যার অর্থ মুক্ত বা স্বাধীন
ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গতকাল বুধবার প্রচারিত সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও পশ্চিম ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ছয়শ’ ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ, পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছয়শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছয়শ’ ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে পাঁচশ’ ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ, পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর, পশ্চিম দিকে এগোতে পারে এবং ঘণীভূত হতে পারে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটাররের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর থেকে বুধবার দুপুরে প্রচারিত বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি স্থানীয় সময় বেলা একটার দিকে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে পাঁচশ’ ৩০ কিলোমিটার আর পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ছয়শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত বা আগামীকাল শুক্রবার ভোরের কোনও এক সময়ে এটি উড়িষ্যার ভিতরকনিকা থেকে ধামারা বন্দর এলাকা অতিক্রম করতে পারে। অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘন্টায় একশ’ থেকে একশ’ ১০ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ একশ ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। সমুদ্রে দীর্ঘ সময় থাকায় ঝড়টি প্রাথমিক পূর্বাভাসের থেকে বেশি শক্তিশালী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি প্রায় ঘণ্টায় একশ’ ৩৫ কিলোমিটার ছুঁতে পারে। তেমন হলে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই শুরু হবে হাওয়ার দাপট। রাত যত বাড়বে তত বাড়বে ঝড়ের তাণ্ডব। শুধু তাই নয়, ঝড়ের শক্তিশালী দিকটি পশ্চিমবঙ্গের দিকে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে উপকূলবর্তী সমস্ত জেলা ও তার লাগোয়া জেলাগুলিতে ঘণ্টায় একশ’ ২০ কিলোমিটার বা তার বেশি বেগে হাওয়া বইতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় দানার যে গতিবিধি, তাতে এটি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলমুখী। ধামারা বন্দরের দিকেই এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশের উপকূল থেকে অনেকটা দূরে হলেও ‘দানা’র সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার যে এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের উপকূল ডান দিকে। আর ডান দিকে থাকার কারণে বাংলাদেশের উপকূলে এর প্রভাব থাকবে অপেক্ষাকৃত বেশি। বাম দিকে থাকলে সাধারণত কম থাকে।
এর আগে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করে। সে সময় এর গতিপথের ডান দিকেই ছিল বাংলাদেশের উপকূল। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় এর ওপরের বাতাসের গতিবেগ ও ভূ-পৃষ্ঠের গতির পার্থক্য বেশি থাকলে এর শক্তি কম হয়। তবে পার্থক্য কম থাকলে শক্তি বেশি হয়। ‘দানা’ যদি উপকূল অতিক্রম করার জন্য দীর্ঘ সময় নেয়, তবে এর প্রভাবও দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে। আবার বাতাসের গতিবেগ তখন কেমন আছে, তার ওপরও বাংলাদেশের উপকূলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নির্ভর করবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ সম্পর্কে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, জাপানের কৃ ত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যচিত্রে দেখা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে যে ঘূর্ণায়মান মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তার অগ্রবর্তী অংশে অবস্থিত একটি ভারি বৃষ্টিযুক্ত অংশ গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার পর থেকেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করেছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে- ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূলের ওপর দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টার পর থেকে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ছ’টার মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে স্থলভাগে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক