একটি সিআর মামলার অভিযোগ শুনানির সময় বিচারকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বাদী পক্ষের আইনজীবী । মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এটি দৈনিক সুপ্রভাতের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
একটি সিআর মামলার অভিযোগ শুনানির সময় বিচারকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান বাদী পক্ষের আইনজীবী । মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সব বিচারকরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভও করছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে একদল আইনজীবী একটি সিআর মামলা অভিযোগ জমা দেন। নির্ধারিত সময়ে ওই মামলার শুনানি হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা আইনজীবী সমি- তির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী।
শুনানিতে আইনজীবীরা মামলাটি সরাসরি এফআইআর অর্থাৎ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য বিচারককে চাপ দেন। বিচারক মামলার অভিযোগ সংক্রান্ত নানা বিষয় এবং আসামিদের বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু বাদী বিচারকের সব উত্তর যথাযথ দিতে পারেননি। কিন্তু তারপরও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে আইনজীবী এবং বিচারকের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বিব্রত হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ এজলাস ছেড়ে নেমে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্যান্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ন কবীর বলেন, সিআর মামলার শুনানিতে একজন বিচারকের সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয় । যতটুকু শুনেছি বিচারক বাদীকে অভিযোগ ও আসামিদের বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন। কিন্তু বাদী সদুত্তর দিতে পারেননি। তারপরও আই- নজীবীরা মামলাটি এফআইআর আদেশ দেওয়ার জন্য দাবি জানান। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে যান এবং পরে সব মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান। ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ১৭ জুলাই মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়েব ইমরানের একটি মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে যাই।
বাদীর পিঠে এখনো গুলির ক্ষত আছে। সব জানিয়ে মামলাটি যাতে থানায় এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়, সেই আদেশ চেয়েছিলাম। এরপর নিয়ম অনুসারে বাদী শপথ নিয়ে আদালতকে ১২-১৪ জন আসামির নাম বলেন।
কিন্তু বিচারক বাদীর কাছে সকল আসামির নাম জানতে চান। জেলা পিপি আশরাফ বলেন, তখন আমি বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। এরপর আবারও আদেশ চাই।
এরপর বিচারক বলেন, আমার কাজ আমাকে করতে দেন। তারপর তিনি মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না’ । তখন আমি বলি, জোর কোথায় খাটালাম?
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বলেন, এরপর এজলাস থেকে নেমে তিনি সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) মহোদয়ের কাছে গেছেন। তারপর সিএমএম আদালতের সব বিচারক নেমে গেছেন। আশরাফ চৌধুরী আরও বলেন, ওনার (ম্যাজিস্ট্রেট) বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা ওনার আদালত বর্জন করলাম। সিএমএম মহোদয়কে দুদিন আগেও টেলিফোনে আমি জানিয়েছি, এই ম্যাজিস্ট্রেট মিসবিহেভ করেন। এই সপ্তাহর মধ্যে উনাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আমরা আদালত বর্জন করব।
বেলা পৌনে ২টায় বিক্ষোভরত আইনজীবীরা মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলমের খাস কামরায় আলোচনায় বসেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মহানগর হাকিম অলি উল্লাহর আদালতে মামলার বাদীর আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনায় মহানগর হাকিমকে ‘আপাতত’ ছুটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। তাৎক্ষণিকভাবে তারা বিচারককে বদলির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন এবং পরে মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলম এবং মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আমাদের সেক্রেটারির সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তাতে আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা বলেছি, আপাতত ওনাকে ছুটিতে পাঠাতে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন দেখা যাবে । আজ থেকে (বুধবার) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। কোনো সমস্যা হবে না আর।’
এদিকে মহানগর দায়রা জজ ও মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির সভার পর গতকাল বিকেলে আবার বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেন মহানগর হাকিমরা।
৫ অগাস্টের ছাত্র অভ্যুত্থানের পর ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের আগের পিপি-এপিপিদের বাদ দিয়ে নতুন ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় । তখনই জেলা পিপির দায়িত্ব পান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী।
পাওনা পৌনে তিন কোটি টাকা
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আবারও পাওনা টাকা আত্মসাৎ করে এক ব্যবসায়ীর উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আবারও পাওনা টাকা আত্মসাৎ করে এক ব্যবসায়ীর উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এজাজ মার্কেটের মরিয়ম ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ৪১ ব্যবসায়ীর ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮২ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। গত সোমবার থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে।
জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়ার সোনাইমুড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মূলত মসলার ব্যবসা করতেন। বাকিতে মসলা কিনে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ না করে তিনি উধাও হয়ে যানন বলে অভিযোগ। গতকাল পর্যন্ত তার কাছে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা পাওনার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও প্রকৃতপক্ষে সেটির পরিমাণ ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বুধবার (আজ) পরিদর্শনে যাবে পুলিশ।
জানা গেছে, মাসুদ আলমের কাছে এজাজ মার্কেটের মেসার্স গুলিস্থান ট্রেডিংয়ের পাওনা রয়েছে ৫৬ হাজার ৯৯ লাখ ৭১৫ টাকা, মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স এন আর ট্রেডার্সের পাওনা ২৪ লাখ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স এইচ. এইচ এন্টারপ্রাইজের পাওনা ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মেসার্স রামপুর সিন্ডিকেটের পাওনা ২০ লাখ ৭২ হাজার ২০০ টাকা, এজাজ মার্কেটের মেসার্স এস এম এন্টারপ্রাইজের পাওনা ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩১৬ টাকা, মেসার্স আজিজিয়া ট্রেডার্সের পাওনা ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, আসাদগঞ্জের ওসমানিয়া লেইনের মেসার্স নাজমা ট্রেডিংয়ের পাওনা ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৫ টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের মেসার্স আরাফাত ট্রেডিংয়ের পাওনা ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫০ টাকা, খাতুনগঞ্জের আহমদিয়া মার্কেটের মেসার্স এ কে ট্রেডিংয়ের পাওনা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭২ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স হক ট্রেডিংয়ের পাওনা ৬ লাখ ১০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের মেসার্স কামাল স্টোরের পাওনা ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের ইলিয়াস মার্কেটের মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজের পাওনা ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা, খাতুনগঞ্জের গ্লোবাল প্রাইম এজেন্সির পাওনা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৮ টাকা, শাহ ফতেহ আলী বাণিজ্যালয়ের পাওনা ৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৩২ টাকা, মেসার্স যুথিকা ট্রেডার্সের পাওনা ৪ লাখ ৩৩ হাজার ১২ টাকা, ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস যীশু’র পাওনা ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের বি.পি এন্টারপ্রাইজের পাওনা ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ টাকা, খাতুনগঞ্জের হাজী মার্কেটের মেসার্স আব্দুল হাকিম সওদাগরের পাওনা ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৭ টাকা, মধ্যম চাক্তাইয়ের মেসার্স লিজা ফুড প্রোডাক্টের পাওনা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, খাতুনগঞ্জের নবী মার্কেটের জাহেদ এন্ড ব্রাদার্সের পাওনা ৩ লাখ ১ হাজার ৫৩৫ টাকা। এছাড়া ২৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকার কাছাকাছি পর্যন্ত আরো অনেক পাওনাদার রয়েছেন।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্বাসই খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথাই চলে আসছিল। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা চেকের বিনিময়ে বাকিতে দৈনিক ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে এই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। গত তিন দশকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অন্তত শতাধিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শুরুটা হয় ১৯৮৬ সালে। সর্বশেষ সংযোজন হলো মরিয়ম ট্রেডার্স। এর আগে গত জুনে এলাচ বিক্রির অর্ধশত কোটির বেশি টাকা আত্মসাত করে লাপাত্তা হয়ে যান খাতুনগঞ্জের সোনামিয়া মার্কেটের নুর ট্রেডিংয়ের মো. নাজিম উদ্দিন। এভাবে একের পর এক ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে উধাও হয়ে যাওয়ার প্রবণতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জের এজাজ মার্কেটের মরিয়ম ট্রেডার্সের মাসুদ আলম নামে যে ব্যবসায়ী উধাও হয়ে গেছেন, তার কাছে আমার প্রতিষ্ঠান রামপুর সিন্ডিকেটেরও পাওনা রয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আমাদের সমিতির নেতাদের শরাণাপন্ন হয়েছেন। আমরা তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৪১ জন ব্যবসায়ীর পাওনা সংক্রান্ত কাগজসহ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা হিসেব করে দেখেছি, মাসুদ আলম এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ২ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮২ টাকা আত্মসাত করেছেন। এর বাইরে আরো অনেকে মৌখিকভাবে টাকা পাওয়ার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমরা ওইসব ব্যবসায়ীদের পাওনা সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার কথা বলেছি। আমাদের ধারণা–মাসুদ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ৪ থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত আত্মসাত করেছেন।
আগামী দুই একদিনের মধ্যে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবো। এ ঘটনায় আমরা কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী আরো সংস্থাকেও অভিযোগ দেয়া হচ্ছে।
লন্ডনের রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেল জাবেদকে
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে পলাতক আছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। কেউ কেউ আবার দেশ ছেড়ে | পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। এটি দৈনিক পূর্বদেশের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে পলাতক আছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। কেউ কেউ আবার দেশ ছেড়ে | পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশে। আওয়ামী সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে লন্ডনে মিলিয়ন ডলার পাচার ও বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাঁটার দৃশ্য কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার আই-ইউনিটের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। ওই সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে এখন লন্ডনেই অবস্থান করছেন তিনি । বাংলানিউজের খবর
আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট (আই- ইউনিট) এক প্রতিবেদনে জানায়, বর্তমানে লন্ডনে ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের বাড়িতে বসবাস করছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আল-জাজিরার অনুসন্ধান ইউনিটের সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ও উইল থর্ন এ প্রতিবদেনটি করেছেন। সম্প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামানকে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের ব্লকের পাশ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে । জানা গেছে, লন্ডনে ৯০ লাখেরও বেশি ডলার মূল্যের ছয়টি বাড়ি আছে তার, যা সাবেক এ মন্ত্রীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছোট একটি অংশ।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামানের আরও কয়েকশ অ্যাপার্টমেন্ট আছে। বিশেষ করে দুবাইয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ধারণার চেয়েও বেশি। সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দের বিষয়ে দুদক ইতোমধ্যে আদালত থেকে আদেশ পেয়েছে। এর ফলে এই দম্পতির মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্টগুলো আদালতের আদেশের আওতায় পড়েছে।
সাইফুজ্জামানের আরও সম্পত্তির সন্ধান :
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার মিলিয়নস’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানায়, একাধিক দেশে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির আনুমানিক প্রায় মূল্য ৫০ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে সাবেক ওই মন্ত্রীকে গর্ব করে আলজাজিরার আন্ডারকভার সাংবাদিকদের বিভিন্ন দেশে তার সম্পদের বর্ণনা দিতে দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে তিনি শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। আলজাজিরার হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, দুবাইয়ে সাইফুজ্জামানের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিক ধারণার চেয়ে আরও বেশি।
২০২৩ সালে নতুন করে ফাঁস হওয়া সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক। এই সম্পত্তির মূল্য ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। রেকর্ডগুলোতে উঠে আসে যে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান, দুবাইতে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।
গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে সাইফুজ্জামান, দুবাইয়ের অভিজাত অপেরা এলাকায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করেছিলেন। জমির রেকর্ড যাচাই করে আল-জাজিরা নিশ্চিত হয়েছে, তিনি সেখানে বিলাসবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক, এর মূল্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি।
নতুন তথ্যে দেখা গেছে, সাবেক ওই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩শ’ টির বেশি উচ্চমূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছেন। আর সামগ্রিকভাবে ওই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৬শ’টির বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক। তাদের বিরুদ্ধেই বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলছে। বাংলাদেশের মুদ্রা আইনানুযায়ী, বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন নেই দেশের কোনো নাগরিকের। কিন্তু আল-জাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অফশোর সম্পদের বিবরণ ঘোষণা করেননি সাইফুজ্জামান। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কর আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশি বাংলাদেশ ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুদক।
এ অভিযোগের ব্যাপারে সাইফুজ্জামান আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বাইরে থাকা দীর্ঘদিনের বৈধ ব্যবসার অর্থ দিয়েই বিদেশি সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। তার দাবি, তিনি হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিকারে পরিণত হয়েছেন।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক