মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলা, অবৈধ পার্কিং, উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা জুড়ে খানাখন্দক মিলে এক ভয়াবহ রকমের নাজুক অবস্থায় পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক সিস্টেম। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলা, অবৈধ পার্কিং, উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা জুড়ে খানাখন্দক মিলে এক ভয়াবহ রকমের নাজুক অবস্থায় পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক সিস্টেম। শহরের প্রায় প্রতিটি মোড় ঘিরে দিনভর যানজট চলে। যানজট চলে রাতেও। যানজটে স্থবির হয়ে যাওয়া নগরজীবনে নয়া আপদ ‘উল্টো পথের গাড়ি’।
সবকিছু মিলে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু না করলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। নগর পুলিশ বলেছে, ট্রাফিক পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে যানজট পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তাগুলো ঠিকঠাক হয়ে গেলে নগরীর যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি আসতো বলেও পুলিশ দাবি করেছে।
গতকাল নগরীর বহদ্দার মোড়, মুরাদপুর মোড়, চকবাজার, চমেক হাসপাতালের সামনে, প্রবর্তক মোড়, গোলপাহাড় মোড়, জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, ওয়াসা মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড়, বড়পুল মোড়, নয়াবাজার মোড়, এ কে খান মোড়সহ বিস্তৃত এলাকা ঘুরে এক ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। প্রতিটি মোড়েই অগুনতি ব্যাটারি চালিত এবং প্যাডেল রিকশার দখলে।
রাস্তার একটি বড় অংশ দখল করে থাকা রিকশা এবং সিএনজি টে িপাশে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করছে বাস। রিকশা টেডি এবং বাসের এক একটি ভয়াল জটলার পেছনে আটকা পড়ে রয়েছে শত শত গাড়ি । এই দৃশ্য শুধু একটি মোড়ের নয়, শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়ের। শুধু মোড়গুলোকে অবৈধ জটলা মুক্ত রাখতে পারলে শহরের যানজট অর্ধেকে নেমে আসবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
শুধু মোডুগুলোই নয়, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, কমার্স কলেজ রোড, শহরের প্রতিটি নামী দামি স্কুলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে শত শত গাড়ি। শেখ মুজিব রোডের রাস্তার অর্ধেক দখল করে চলে গাড়ির যন্ত্রপাতি এবং সাজসজ্জা বিক্রির বেসাতি। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তাজুড়ে চলে হরেক পণ্যের বাণিজ্য। রাস্তার উপর এই অবৈধ দখলদারিত্ব নগরীর ট্রাফিক সিস্টেমে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জিইসি মোড়ের চারপাশে যেভাবে ফুটপাত থেকে রাস্তার বড় অংশ ‘ভাড়া নিয়ে’ ব্যবসা করা হয়। তাতে যান চলাচলে স্বাভাবিক গতি অকল্পনীয়।
শহরের নামি দামী এবং অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিরও নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে স্কুল চালু এবং ছুটির সময় যে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় তার রেশ চলে কয়েক ঘন্টা ধরে। স্কুলগুলোকে নিজস্ব বাস চালুর ব্যাপারে দফায় দফায় তাগাদা দেয়া হলে কেউ কথা শুনেনি। ফলে শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরণের সংকট অব্যাহত রয়েছে।
শহরের অলি গলি রাজপথ সর্বত্রই হাজার হাজার গর্ত, খানাখন্দক । শহরের একটি রাস্তাও আস্ত নেই।
সবগুলোরই পিঠের চামড়া ক্ষয়ে গেছে। কাটাকুটিতেও ক্ষতবিক্ষত এক একটি রাস্তা। এসব রাস্তায় ২০ কিলোমিটারের বেশি বেগে গাড়ি চালানো কঠিন। তাছাড়া একটু পর পর ব্রেক কষতে গিয়ে দিশেহারা চালক, যাত্রী। থেমে থেমে চলার কারণে শহরজুড়ে যানজটে নাকাল মানুষ।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কাটাকুটিও শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরণের সংকট সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার চলমান প্রকল্পের কাজের জন্য কাটাকুটি এবং লাওয়ারিশভাবে রাস্তাগুলো পড়ে থাকার কারণে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্র ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বন্দর থেকে হাজার হাজার গাড়ি প্রতিদিন নিমতলা থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত সড়কটিতে চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কে ওয়াসার একটি প্রকল্পের জন্য রাস্তার বড় অংশ টিনের ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতি শ্লথ গতির এসব কাজের দরুণ যান চলাচলে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
রাতে দিনে যানজট লেগে থাকে শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেক্টিং রোডে। যার জের ধরে শহরের অন্যান্য রাস্তায়ও যান চলাচলে গতিহীনতা তৈরি হয়েছে।
শহরে নতুন আপদ হিসেবে ‘উল্টো পথের গাড়ি’। শহরের বিভিন্ন রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে যান চলাচলের জন্য গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু শহরের বহু রাস্তাতেই মেডিয়ান গ্যাপ অনুসরণ না করে উল্টো পথে চলে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, সিএনজি টেডি এবং মোটর সাইকেলের মতো গাড়ি । বিভিন্ন সময় প্রাইভেট কার ও হিউম্যান হলারগুলোকে দেখা যায় উল্টো পথ ধরে সামনে এগুচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই চলাচলে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে দুর্ঘটনা ঘটলেও সবচেয়ে বেশি সংকট সৃষ্টি করছে গাড়ির গতিতে। থমকে থমকে চলতে হয় গাড়িগুলোকে। নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড, বাকলিয়া এক্সে, আগ্রাবাদ এড্সে রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোডসহ বিভিন্ন সড়কে উল্টো পথের গাড়ির সংখ্যাধিক্য আতংকের কারণ হয়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিভিন্ন ধরণের সমস্যা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে চালকদের আইন না মানার প্রবণতা। ট্রাফিক পুলিশকে পাত্তা না দেয়া, কিংবা ট্রাফিক পুলিশ আইন মানতে বাধ্য করাতে অনীহা পুরো শহরকে স্থবির করে দিচ্ছে। পুলিশ যদি ট্রাফিক আইন মানতে যানবাহন চালকদের বাধ্য করে তাহলে অন্যান্য অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে একটি গতিশীল নগরী তৈরি হবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
গতকাল একাধিক সড়ক বিশেষজ্ঞ দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেছেন, বন্দর নগরীর চট্টগ্রাম অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। মেগাসিটির কাছাকাছিতে পৌঁছে যাওয়ার এমন একটি শহরে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এলাকা রাস্তা থাকার কথা। অথচ চট্টগ্রাম মহানগরীতে রাস্তার পরিমান ৯ শতাংশেরও কম। রাস্তার পরিমান কমে যাওয়ার পাশাপাশি যানবাহনের বেপরোয়া সংখ্যা বৃদ্ধি এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। শহরের প্রধান সড়ক বলতে বুঝায় বিমানবন্দর থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটিকে। এশিয়ান হাইওয়ে খ্যাত এই রাস্তাটির কোথাও ছন্দপতন ঘটলে তার প্রভাব শুরু হয় নগর জুড়ে।
এছাড়া অলংকার মোড় থেকে ট্রাংক রোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে স্ট্যান্ড রোড, কাপাসগোলা রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোড এগারশ’ কিলোমিটারের মতো রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে ৬শ’ কিলোমিটারের মতো রাস্তা পিচঢালা। যেখানে শহরের বেশিরভাগ গাড়িই চলাচল করে। সেই পিচঢালা রাস্তায় খানাখন্দকে ভরে উঠায় শহরের যান চলাচলে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন। তারা রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার এবং যান চলাচল উপযোগী করার পাশাপাশি ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। শহরে দ্রুত অটো ট্রাফিক সিস্টেম চালু করার জন্যও তারা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।
চট্টগ্রাম মহানগরী ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা যানজটের কথা স্বীকার করে বলেন, সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনের পর আমাদের পুলিশ সদস্যদের প্রায় সকলেই কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তারা ফিরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। রাস্তায় দায়িত্বও পালন করছেন। কিন্তু এখনো সবকিছু পুরোপুরি ছন্দে ফিরে আসেনি। মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলা, অবৈধ পার্কিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
‘ওয়াসার’ ধনে পোদ্দারি ইউসুফের
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে ওয়াসার জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণের কাজ। “দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের’ ব্যানারে আগে ওয়াসার গুটিকয়েক কর্মচারী এসব অবৈধ দোকান নির্মাণে জড়িত থাকলেও এখন ওইকাজে নতুন করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে ওয়াসার জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণের কাজ। “দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের’ ব্যানারে আগে ওয়াসার গুটিকয়েক কর্মচারী এসব অবৈধ দোকান নির্মাণে জড়িত থাকলেও এখন ওইকাজে নতুন করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি নিজেকে ওই সংগঠনটির বর্তমানে নতুন সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিবিএ ও নন সিবিএ সংগঠনের বাইরে *দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার আরো একটি সংগঠন রয়েছে। রেজিস্টেশন নম্বর ৩১৮। ২০২৩ সালের শুরুতে এ যার সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ওয়াসার কর্মচারী রেজওয়ান হোসেন দুলাল ও মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃ ত্বে গুটিকয়েক কর্মচারী চান্দগাঁও থানাধীন খাজা রোডের খালাসি পুকুর পাড় এলাকায় ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করে। সেখানে তারা ৭টি দোকান ঘর নির্মাণ করে। এরপর দরজায় শাটার লাগানো থেকে শুরু করে দোকানের সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলে। পরে প্রতিটি দোকানের জন্য নেওয়া হয় অগ্রিম সেলামিও।
এ নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে একাধিক সংবাদ পরিবেশন করা হলে থেমে যায় দোকান চালুর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর কোণঠাসা হয়ে পড়েন একসময়ে ওয়াসার প্রতাপশালী কর্মচারী রেজওয়ান হোসেন। দুলাল, মোহাম্মদ জাকারিয়া, রুহুল আমিন, মোহাম্মদ এসকান্দর, জমির খান মিয়াজী, আব্দুল মোমিন সরকারসহ আরো অনেকে। পরবর্তীতে এদের কয়েকজনকে বদলিও করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তাতে ঝিমিয়ে পড়ে ‘দি ওয়াসা এমপ্লয়িজ কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে’র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এ অবস্থায় কো-অপারেটিভের হাল ধরেন ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি ওয়াসার কালুরঘাট আয়রণ রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট এন্ড বুস্টারের নির্বাহী প্রকৌশলী। এর বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মোহরা পানি শোধনাগারের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবেও। নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফের আগে ওয়াসার জায়গায় অবৈধ দোকান নির্মাণকারীদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারই আলোকে গত ২০ অক্টোবর সকালে পাঁচ থেকে ছয়জন নির্মাণ শ্রমিক খাজা রোডের খালাসি পুকুর পাড় এলাকায় ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গায় পাকা দোকান ঘর নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তাতে অবস্থা বেগতিক দেখে নির্মাণ শ্রমিকরা সরে পড়েন। এদিকে ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের জায়গায় অবৈধভাবে পাকা দোকান ঘর নির্মাণের খবর পেয়ে গত ২০ অক্টোবর সকালে ঘটনাস্থলে যান ওয়াসার মড-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে ওইদিনই ওয়াসার সম্পত্তি কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, ওয়াসার ১৬নং পাম্পহাউজের (বলির হাট) জায়গায় পাম্প স্টেশনের এইচটি বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং ট্রান্সফর্মারের পোল ঘেঁষে বিপদজনকভাবে অবৈধভাবে দোকান ঘর নির্মাণের কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২০ অক্টোবর সকালে একই জায়গায় বহিরাগত লোকজন পুনরায় দোকানের কাজ করতে আসে। তাই ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাম্প স্টেশনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ঝুঁকিমুক্ত করতে ওয়াসার সম্পত্তি শাখাকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’ ওয়াসার এস্টেট অফিসার মো. বাবুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ওয়াসার ১৬ নং পাম্পহাইজের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ওখানে ৭টি দোকানের মধ্যে কে বা কারা ৫টির দরজার স্প্রিং খুলে নিয়ে গেছে। অপর একটির তালা ভেঙে কিছু কতিপয় যুবক সন্ধ্যায় ইয়াবা সেবন করে। মূলত দোকানের স্প্রিং এবং তালা লাগাতে শ্রমিকরা ওখানে গিয়েছিল। আগের কমিটি অবৈধভাবে এসব দোকান নির্মাণ করেছিল। ওয়াসা থেকে অনুমোদন নিয়ে আমি এসব দোকান বৈধ করার চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগে এ সংগঠনের সভায় ১২জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় আগের সভাপতি রেজওয়ান হোসেন দুলাল পদত্যাগ করলে সভাপতি হিসেবে আমাকে কোঅপ্ট করা হয়।’ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘অবৈধ দোকান নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হবে।’
এদিকে খাজা রোডে ওয়াসার ১৬ নং পাম্পহাউজে ভূমি প্রদানকারী আলী আহমদ এর নাতি নুরুল আজিম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৯৬৫ সালে আমার দাদা পাম্পহাউজ নির্মাণের জন্য ওয়াসাকে ২৪ শতক জমি দান করেন। কিন্তু বর্তমানে পাম্পহাউজের আড়ালে সেখানে পাকা দোকান তৈরি করা হচ্ছে। আমার দাদা জমি দান করেছিলেন ওয়াসার পাম্পহাউজের জন্য, ওয়াসার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর ব্যবসার জন্য নয়। তাই পাম্পহাইজের বাইরে অবশিষ্ট জমি ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেছি।’
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির বর্তমানে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমন কোন দিন নেই, রোহিঙ্গা শিবিরে দু’একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে না। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দৈনিক সুপ্রভাতের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির বর্তমানে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমন কোন দিন নেই, রোহিঙ্গা শিবিরে দু’একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে না। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসা, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ধর-পাকড় অব্যাহত রাখলেও তা কোনমতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা ও আরএসওসহ দু’একটি সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে এ ঘটনা বেশি ঘটছে বলে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা গেছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নতুন করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে আরসা প্রায় সময় আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। সংঘর্ষে দু’পক্ষই ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে গোলাগুলি করছে ক্যাম্পে। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গতকাল সোমবার ভোরে উখিয়া ১৭ নম্বও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন । নিহতরা হলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প-১৭ এক্স ব্লকের বাসিন্দা আহাম্মদ হোসেন (৬৫), তার ছেলে সৈয়দুল আমিন (২৮) ও মেয়ে আসমা বেগম (১৫)। উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভোররাতে ঘরে ঢুকে একই পরিবারের তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটি এখনও জানা যায়নি। ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. ইকবাল বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ক্যাম্প- ১৭ এক্স ব্লকে প্রবেশ করে আহমদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে। ঘটনাস্থলে আহমদ হোসেন ও তার ছেলে সৈয়দুল আমিন নিহত হয়। আহত অবস্থায় আহমদ হোসেনের মেয়ে আসমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যায়।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত রোহিঙ্গা সৈয়দুল আমিন আরসার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হত্যা করে। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা লাল পাহাড়ের এস- ৪, বি-৭ ব্লক দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, বুধবার (২ অক্টোবর) বেলা পৌনে ৪টার দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর এবং জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পের মাঝামাঝি এলাকায় ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা ও আরএসও- এর মধ্যে গোলাগুলিতে আব্দুর রহমান (১৯) নামে এক যুবক নিহত হন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আব্দুর রহমান উখিয়া উপজেলার হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে। আহতরা হলেন, উখিয়ার হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের সিদ্দিক আহমেদের ছেলে নুর মোহাম্মদ, সুলতান আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ জোবায়ের, রশিদ উল্লাহর ছেলে মো. শাফায়েত, দিল ে মোহাম্মদের ছেলে নুর আলম এবং জামতলী ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাল মিয়ার স্ত্রী নেসারা।
স্থানীয়দের বরাতে এপিবিএন অধিনায়ক বলেন, ওইদিন বিকেলে উখিয়ার হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর এবং জামতলী ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝামাঝি এলাকায় আরসা এবং আরএসও এর সন্ত্রাসীরা অতর্কিত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয়পক্ষ ২০/২৫টি গুলি ছুঁড়ে। এতে ছয়জন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জামতলীতে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আব্দুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অপরদিকে, ১৭ অক্টোবর দিনভর উখিয়ার ১৪ ও ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক বাংলাদেশিসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন । এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন- উখিয়ার পালংখালীর মোহাম্মদ বেলাল (৩৯), উখিয়ার জামতলী ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকের বাসিন্দা হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩০), একই ক্যাম্পের বি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের ছেলে মো. ইউনুস (২৫), উখিয়ার ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-২ ব্লকের বাসিন্দা মো. আলসের ছেলে আবদুল্লাহ (১৮) ও একই ক্যাম্পের আবদুল গনির মেয়ে হামিদা (৫০)। এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। বর্তমানে তারা উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এছাড়া ২০ অক্টোবর ভোরে উখিয়া উপজেলার ১৫ নম্বও রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও অ্যামোনেশনসহ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন হোসাইন জোহর (৩২) নামে আরসার গ্রুপ কমান্ডার। তিনি থাই- ংখালী ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ /৭ ব্লকের বাসিন্দা মৃত মো. দুলু- মিয়ার ছেলে।
আমির জাফর জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মো. হাসাইন জোহরকে তার বাসা থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড অ্যামোনেশন এবং চার রাউন্ড খালি খোসাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও জানান, সে মিয়ানমারের নাগরিক এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত। সে আরএসও কমান্ডার খায়রুল আমিন হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে, ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়া পালংখালী ক্যাম্প-১৩ থেকে একটি জি থ্রি রাইফেল ও ১০টি গুলিসহ নুরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরসা কমান্ডার বলে জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। নুরুল ইসলাম ১৩ নম্বর ক্যাম্পের গুলা হোসেনের ছেলে । তিনি দীর্ঘদিন ধরে আরসার কমান্ডার হিসাবে ক্যাম্পে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
এদিকে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানান, ক্যাম্পে গোলাগুলিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা নিত্যদিনের রোহিঙ্গারা গ্রেফতার হয় তবে তারা আইনের ফাঁকে বের হয়ে যায়। যার কারণে অপরাধ দমন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা যেন জেল থেকে ছাড়া না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই কিছুটা অপরাধ রোধ হতে পারে।
উখিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন জানান, প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছে রোহিঙ্গা শিবিরে। অনেক অপরাধী এখনও জেলে আছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা শিবিরে যেন অপরাধ সংঘটন বন্ধ হয়ে যায়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা যেন সীমানা প্রাচীর বেধ করে বের হতে না পারে আমরা প্রশাসনকে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে বলেছি। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক