কাদের উপর আস্থা রাখবে দলের হাই কমান্ড? কারা আসছেন নেতৃত্বে? গতকাল দিনভর এসব প্রশ্নই ছিল দলটির তৃণমূলে। কারণ গত রোববার বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলা বিএনপি‘র সাংগঠনিক কমিটি। যে কোনো মুহূর্তেই ঘোষণা হতে পারে নতুন কমিটি। তাই স্বাভাবিকভাবে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দলের তৃণমূলে আছে নানা আলোচনা। এটি দৈনিক আজাদীর খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
নেতৃত্ব শূন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির হাল ধরছেন কারা? কাদের উপর আস্থা রাখবে দলের হাই কমান্ড? কারা আসছেন নেতৃত্বে? গতকাল দিনভর এসব প্রশ্নই ছিল দলটির তৃণমূলে। কারণ গত রোববার বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক কমিটি। যে কোনো মুহূর্তেই ঘোষণা হতে পারে নতুন কমিটি। তাই স্বাভাবিকভাবে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দলের তৃণমূলে আছে নানা আলোচনা। আছে গুঞ্জনও।
এসব গুঞ্জনের ভিড়ে পদ প্রত্যাশীরা ছুটছেন কেন্দ্রে। পদ পেতে ধর্না দিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের কাছে। চেষ্টা করছেন দলের হাই কমান্ডের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে।
সম্ভাব্য কমিটিতে পদ পেতে তদবির করছেন এমন ১৮ জন নেতার তথ্য এসছে আজাদীর কাছে। এর মধ্যে সভাপতি বা আহবায়ক পদে ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে ৪ জন এগিয়ে আছেন। সম্ভাব্য কমিটির নেতৃত্ব আসতে পারে এদের মধ্য থেকে।
এদিকে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি থেকে সরে এসে চার বছর ১১ মাস আগে নগর বিএনপি’র তৎকালীন সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করা হয় দক্ষিণ জেলায়। দীর্ঘদিন নগরে রাজনীতি করেন তিনি। আবার তার বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। দক্ষিণের স্থায়ী বাসিন্দা নেতৃত্ব না আসায় ক্ষোভ ছিল তৃণমূলের। এরপরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেন সবাই । কিন্তু রাতের আঁধারে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত রোববার সদস্য পদ হারান তিনি। একইদিন বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলার কমিটিও।
এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে দক্ষিণে রাজনীতি করেছেন এমন কাউকেই চান তারা। এছাড়া দলটির তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা, দলের বিগত ‘আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তারাই নেতৃত্বে আসুক ।
এগিয়ে আছেন যারা : সভাপতি বা আহবায়ক পদে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব আলী আব্বাস, সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ইদ্রীস মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন।
সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম- আহবায়ক লেয়াকত আলী, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন ।
বিএনপি’র স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে একজন সময়ের আলোচিত এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। এছাড়া সাবেক সাংসদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্টতার অভিযোগ আছে এক সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে।
লবিং করছেন যারা : সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল এবং সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামও সভাপতি হওয়ার জন্য লবিং করছেন বলে দলটির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে এই দুইজন নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ আছে ।
এ তালিকায় আছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শাখাওয়াত জামান দুলাল। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী আশফাক. পটিয়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম, আনোয়ারারা মো. মনজুর তদবির করছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাও লবিং করছেন বলে জানা গেছে।
কপাল পুড়ল এনামের : বিএনপি’র কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গত জুন মাসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর গুঞ্জন ওঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপিও বিলুপ্ত করা হবে। ওই সময় নতুন করে কমিটি করলে এনামুল হক এনামকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হবে জোর প্রচারণা ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এমন ইঙ্গিত দেন। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কমিটি বিলুপ্তি ও গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে কেন্দ্র। কিন্তু এস আলমের গাড়ি পার করে দেয়ার ঘটনায় প্রাথমিক সদস্য পদও হারান তিনি। এর মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য কমিটির পদ পাওয়ার সম্ভবনাও থাকল না।
যে নেতৃত্বের প্রত্যাশা : শেখ মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, এমন নেতৃত্ব আসুক যারা সাবেক ছাত্রনেতা। সেই ১/১১ সময় থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মেয়াদকাল পর্যন্ত দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন এবং এ সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। একইসঙ্গে হাইব্রিড’কে মূল পদে না রেখে তৃণমূলকে সম্পৃক্ত রেখে কমিটি দিলে সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য হবে। যারা নির্লোভ এবং দলের প্রতি আনুগত্যশীল তাদের নেতৃত্বে আনলে দলের যে চাওয়া সেটা পূরণ হবে। বিগত সময়ে এমন লোককে নেতৃত্বে আনা হয় যিনি রাজনীতি করেছেন নগরে, আবার তার বাড়িও চট্টগ্রাম জেলা নয় । এমন কেউ যেন আর নেতৃত্বে না আসে সেটাই সবার প্রত্যাশা ।
কামরুল ইসলাম হোসাইনী আজাদীকে বলেন, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিতর্কিত নন, যারা স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারী এবং দলের জন্য যাদের ত্যাগ আছে তাদের নিয়ে কমিটি হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করলে আগের অবস্থা হবে এবং সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
মজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, মাঠে-ময়দানে সক্রিয় আছেন, যারা আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। বিগত সময়ে যারা মামলার শিকার হয়নি তাদের বিএনপি করারও অধিকার নেই । কারণ আন্দোলন থাকলেই মামলার শিকার হতেন তারা। আমি নিজেও ৩৪ মামলার আসামী। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালেও মামলা হয়েছে। আশা করছি দল মূল্যায়ন করবেন।
সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে : ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদনও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো পুর্নগঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সহ-সভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেয়া হয়।
একইবছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি’র তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় । আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়, গঠিত কমিটির মেয়াদ হবে তিন মাস । তারা এই তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন শেষে দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল আয়োজন করবেন। কিন্তু চার বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেও কাউন্সিল করতে পারেনি।
বস্তাপ্রতি ১০০–২০০ টাকা বেড়েছে চালের দাম
বন্যা পরবর্তী সময়ে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এরমধ্যে বন্যায় ত্রাণ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম।
দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ খবরে বলা হয়…
বাড়তি দামের মধ্যে আবারও বাড়ল চালের দাম। বন্যা পরবর্তী সময়ে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। এরমধ্যে বন্যায় ত্রাণ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশকিছু ধানের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকদিন পর ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের, কিন্তু আউশ ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাতে দাম বেড়েছে ধানের। এর প্রভাব পড়েছে চালেও।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে আউশ ধান খুব বেশি চাষ হয় না, তাও আউশ ধান ঘরে তোলার কথা মাস খানেক পর, তাই এখনই ধান নষ্টের প্রভাব চালের দামে পড়ার কথা না।
অবশ্য ভোক্তাদের দাবি, চট্টগ্রাম ও আশেপাশে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে বিতরণের কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা চালসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে চার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গতকাল নগরীর চাক্তাই চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা মোটা চাল ২১শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও প্রতি বস্তা ১৯শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিআর আটাশ চাল ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ৩১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই চাল তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়েছে নাজিরশাইল, মিনিকেট ও স্বর্ণা চালেরও।
৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট ৩৪শ টাকা, ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা নাজিরশাইল ১৫৩০ থেকে ১৬৫০ টাকা এবং ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা স্বর্ণা ১৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের শেষ সময় পর্যন্ত কেজিতে ২-৩ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল এসব চাল।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘মূলত ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া ত্রাণে মোটা চালের চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে। তবে ধানের দাম এখন কমতির দিকে, চালের দামও কমে যাবে।’
চাক্তাই রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বন্যায় মাঠে বেশকিছু ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ধানের দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি ধানের দাম মানভেদে দেড় থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে চালের দাম বাড়তি।
তবে এখনই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ধানের প্রভাব বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আউশ-আমন মিলে বীজতলাসহ রোপা ধান ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৯৫৮ হেক্টর জমির ধান পুরো-পুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ১৫ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমির ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আউশ ধান দেশে বেশি চাষ হয় না। আর আমন ধান ঘরে আসার কথা ডিসেম্বরে। ধানের ক্ষতির প্রভাব এখনই বাজারে পড়ার সম্ভাবনা নেই। আর যেসব কৃষকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।
১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ
বেক্সিমকো গ্রুপ ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে সেই রপ্তানি মূল্য ফেরত না এনে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এটি দৈনিক পূর্বকোণের খবর।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়…
সালমান এফ রহমান পাচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। বেক্সিমকো গ্রুপ ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে সেই রপ্তানি মূল্য ফেরত না এনে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
ডিআইজি-অর্গানাইজড ক্রাইম (অতিরিক্ত আই- জিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কুসুম দেওয়ান বলেন, সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট বেক্সিমকোর এই অসঙ্গতিগুলোকে ‘বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
সিআইডির ডেটাবেজ অনুসারে, এপোলো এপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার এন্ড এপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে।
এর সবগুলোই বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রুপটি পণ্য রপ্তানির জন্য ক্রেডিট লেটার খুলে ৮০ শতাংশ মূল্যের বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়েছে। এরপর আর রপ্তানির অর্থ ফেরত আনেনি এবং ঋণগুলোও পরিশোধ করেনি। তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ এভাবে অর্থপাচার করেছে।
সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের আরেক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন যে সালমান এফ রহমান পচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।
সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান সৌদি আরবে একটি বড় ওষুধ কোম্পানি খুলেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তা। সৌদি আরবের ওই কোম্পানির বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে বলেও জানান তিনি। কুসুম দেওয়ান বলেন, প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা হবে। প্রাথমিক তদন্তে সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট জানতে পেরেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ঋণের মধ্যে ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে, যার চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান নিজেই। তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীক গ্রুপটি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে অন্তত ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
সিআইডির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকো ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি টাকা; সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আর্থিক অপরাধ ইউনিট তাদের ডেটাবেজ সংগ্রহের জন্য সাতটি ব্যাংকে টিম পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির স্পেশাল সুপারেন্টেন্ড মোহাম্মদ বসির উদ্দিন।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে বিদেশে ঋণের অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত তিন বছরে মার্কেট থেকে দৃশ্যমানভাবে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একটি দোকান কর্মচারীকে হত্যার মামলায় গত ১৩ আগস্ট থেকে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন সালমান এফ রহমান।
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক