স্ত্রীর চার তলা বাড়ি সাবেক এএসপি হাশেমের ‘অবৈধ আয়ে’। দৈনিক আজাদীর শিরোনাম এটি। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়- সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সাবেক এক এএসপি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। এতে বলা হয়েছে, মো. আবুল হাশেম নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে তার স্ত্রী চার তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধতা দিতে স্ত্রী তাহেরিনা বেগম নিজেকে বুটিক্স ব্যবসায়ী দাবি করেছেন। দুদক যাচাই করলে দেখা যায়, তার বুটিক্স ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্স বা কোনো রেকর্ডপত্র নেই । কোনো রেকর্ডপত্র তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। ব্যবসার প্রারম্ভিক মূলধন বাবদ প্রথম ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শিত ৯ লাখ টাকার উৎসেরও কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাছাড়া সম্পদ বিবরণী দাখিল ফরমেও অস্থাবর সম্পদের ছকে ব্যবসার মূলধন বাবদ কোনো টাকার ঘোষণা দেননি। অর্থাৎ, তার কোনো বুটিক্স ব্যবসা নেই। সে হিসাবে তার ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো আয় গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া তিনি ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ (সম্পদ বিবরণী দাখিল পর্যন্ত) ব্যবসার সাথে টিউশনি বাবদ মোট ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা আয় দেখিয়েছেন। যাচাই করলে দেখা যায়, টিউশনি আয়ের সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম- ১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ। দুই মামলার মধ্যে একটিতে শুধু পুলিশ কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেমকে ও অপর মামলায় পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। কার্যালয়-২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলা তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আমলে নেওয়া হবে।
আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর এ দম্পতি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে আবুল হাশেম ১ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৬১২ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাই করলে তার নামে পাওয়া গেছে ১ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৪ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য। এছাড়া ৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণার বিপরীতে দেখা গেছে, তার নামে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি চার লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। সম্পদ বিবরণীতে কোনো সঞ্চয়পত্রের ঘোষণা না দিলেও তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক ১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের তথ্য পাওয়া গেছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে বলা হয়, আবুল হাশেম ১৯৮৮ সালে এসআই পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। ১৯৮৮- ৮৯ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর (সম্পদ বিবরণী দাখিল) পর্যন্ত বেতন ভাতাদি ও তার প্রবাসী ভাই থেকে উপহার বাবদ রেমিট্যান্স, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয়, ব্যাংক সুদ ও অন্যান্য আয় বাবদ সর্বমোট ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা আয় করেছেন। তার দায় রয়েছে ৩১ লাখ ৮ হাজার ৩৪১ টাকা। এটি বাদ দিলে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৯ টাকা। একই সময়ে তিনি ১৭ লাখ ১৯ হাজার ১৬১ টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। সেই হিসাবে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখা যায়, ১ কোটি ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা। সেখান থেকে গ্রহণযোগ্য ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা বাদ দিলে বাকী ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ। অর্থাৎ তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন । যা দুদক আইনের ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে (আবুল হাশেমকেও আসামি করা হয়) করা পৃথক মামলার এজাহারে বলা হয়, তাহেরিনা বেগমের বাড়ি ভাড়া, ভাইদের থেকে উপহার বাবদ নগদ অর্থ, ব্যাংক সুদ, টিউশনি ও অন্যান্য আয় বাবদ গ্রহণযোগ্য আয় ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৮ টাকা। তিনি ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত সান মেরন স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ (সম্পদ বিবরণী ফরম দাখিল পর্যন্ত) পর্যন্ত বুটিক্স ব্যবসার আয় বাবদ ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায়, তার বুটিক্স ব্যবসা সংক্রান্ত লাইসেন্স বা কোনো রেকর্ডপত্র নেই। কোনো রেকর্ডপত্র তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। ব্যবসার প্রারম্ভিক মূলধন বাবদ প্রথম ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শিত ৯ লাখ টাকার উৎসেরও কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাছাড়া সম্পদ বিবরণী দাখিল ফরমেও অস্থাবর সম্পদের ছকে ব্যবসার মূলধন বাবদ কোনো টাকার ঘোষণা দেননি। অর্থাৎ, তার কোনো বুটিক্স ব্যবসা নেই। সে হিসাবে তার ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো আয় গ্রহণযোগ্য নয় । তিনি ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ (সম্পদ বিবরণী দাখিল পর্যন্ত) ব্যবসার সাথে টিউশনি বাবদ মোট ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা আয় দেখিয়েছেন যাচাই করলে দেখা যায়, টিউশনি আয়ের সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। তবুও তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শিত টিউশন ফি বাবদ আয় গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়, নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন পলিটেকনিক্যাল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে যে চার তলা ভবন তার ও তার স্বামীর যৌথ নামে নির্মাণ করা হয়েছে তখন তাতে বিনিয়োগ করার মত তার যথেষ্ট বৈধ আয়ের কোনো উৎস ছিল না। স্বামী আবুল হাশেম পুলিশে চাকরিরত অবস্থায় যে অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন সে অর্থের সহযোগিতায় বা তা ব্যবহার করেই তাহেরিনা বেগম তার ও তার স্বামীর যৌথ নামে চার তলা ভবন নির্মাণের ব্যয়ভার বহন করেছেন। চাকরিরত অবস্থায় স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের নামে সম্পদ অর্জন এবং উক্ত সম্পদ স্ত্রীর ভোগ দখলে রাখতে সহযোগিতা করে আবুল হাশেম দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজাহারে এও বলা হয়, তাহেরিনা বেগম ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য
অপরাধ করেছেন।
নিলামে তোলা হচ্ছে আপেল-কমলা খেজুরসহ কয়েক কোটি টাকার পণ্য দৈনিক আজাদীর শিরোনাম এটি। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়- চট্টগ্রাম কাস্টমসে আগামী সোমবার (৮ জুলাই) থেকে তিনদিনব্যাপী আপেল- কমলা- মেন্ডারিন ও খেজুরের প্রকাশ্য নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। নিলাম উপলক্ষে নগরীর ফলমণ্ডিসহ দুই কিলোমিটার এলাকায় মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টমসে তিনদিনব্যাপী চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশ্য নিলাম শুরু প্রকাশ্য নিলাম শুরু ৮ জুলাই
আগামী সোমবার প্রকাশ্য নিলামে তোলা হচ্ছে ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৪ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টিন কমলা, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭
টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৪০ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৪ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন কমলা এবং ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৬ টাকা সাড়ে ৪৭ টন আপেল। এছাড়া তারপরদিন মঙ্গলবার ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯০ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৬ টন মেন্ডারিন, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ১ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ১৬৫ টাকা মূল্যের সাড়ে ৮৭ টন মেন্ডারিন, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল এবং ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৯২ টাকা মূল্যের প্রায় ২২ টন মেন্ডারিন। অন্যদিকে মঙ্গলবার নিলামে তোলা হবে ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৫ টন মেন্ডারিন, ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৪ টাকা মূল্যের প্রায় ২৫ টন কমলা, ৪১ লাখ ২০ হাজার ৯০৭ টাকা মূল্যের সাড়ে ২৩ টন আপেল, ৮৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৬ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৭ টন
আপেল এবং ১ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার ৯২৪ টাকা মূল্যের ২৫ টন খেজুর। জানা গেছে, পচনশীল পণ্যের দ্রুত নিলাম আয়োজনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থায়ী আদেশ জারি করে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের
কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে সেই আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বিগত সময়ে অনেক খাদ্যপণ্য পচে যাওয়ায় তা
মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পাওয়া দূরে থাক, উল্টো পণ্য ধ্বংসে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান জানান, আমরা পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলাম সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে । আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না ।
ঘুরে দাঁড়াতেই হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা সবজি রপ্তানি। দৈনিক পূর্বকোনের শিরোনাম এটি। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়-করোনায় মুখ থুবড়ে পড়া সবজি রপ্তানি খাত সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে এরমধ্যেই দুঃসংবাদ পেলেন এই খাতের রপ্তানিকারকরা। গেল মাসের শেষদিনে এই খাতের প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শাতংশ করা হয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এতেই করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠার শুরুতে এই খাত ফের হোঁচট খেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। পরের অর্থবছরে করোনার ধাক্কায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমে ১১৮ দশমিক ৭৩ মি- লিয়ন ডলারে নামে রপ্তানি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে করোনার সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে আরো প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায় সবজি রপ্তানি। ওই বছর দেশীয় রপ্তানিকারকরা মোট ৯৯ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলারের সবজি রপ্তানি করেন বিদেশে। পরের বছরও সবজি রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। প্রায় ৩৯ শতাংশ কমে ওই বছর রপ্তানি নেমে আসে ৬১ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলারে। তবে সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাই দিয়েছে এই খাত। ২০২৩-২০১৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সবজি রপ্তানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই অর্থবছরের সর্বশেষ মাসের হিসেব যুক্ত হলে শত মিলিয়ন ছড়িয়ে যেতে পারে সবজি রপ্তানির অংক।
তবে অর্থবছরের একেবারে শেষ দিনে অনেকটা দুঃসংবাদই পেলেন রপ্তানিকারকরা। ভর্তুকির লাগাম টানতে ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাকি ৪২ খাতের সঙ্গে ১৫ শাতংশ থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শাতংশ করা হয় সবজি খাতের প্রণোদনা। আবার সবজি দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় রপ্তানি করা হয় উড়োজাহাজে, এরমধ্যে বাড়ছে উড়োজাহাজের ভাড়া। সব মিলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে ফের এই খাতের হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ সবজি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রচ্যে। সেখানে চাহিদাও প্রচুর । তাজা সবজি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা গেলে সতেজ থাকবে দীর্ঘদিন। এতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ থেকেও সহজে সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানি শুরু হলে বাড়বে রপ্তানির পরিমাণ। তা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ পর্যন্তও বাড়তে পারে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবল এন্ড ফ্রুটস এক্সপ্রোটার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান উদ্দিন বলেন, এখন তো প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উড়োজাহাজের ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে এখন অবস্থা খারাপ। পাশাপাশি আমাদের দেশে তাজা সবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি খুব বেশি উন্নত না। অথচ বাহির থেকে আমদানি করা আপেল-কমলার মতো পচনশীল ফলও দীর্ঘদিন তাজা থাকে। সবজিও এভাবে সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের দেশে তাজা সবজি সংরক্ষণ পদ্ধতি উন্নত না হওয়ায় উড়োজাহাজেই বেশি ভাড়া দিয়ে সবজি রপ্তানি করতে হয়। এই রপ্তানিকারক আরও বলেন, ভারত-শ্রীলঙ্কা তাজা সবজি উন্নত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে সমুদ্র পথে রপ্তানি করে। এটা বাংলাদেশ থেকেও সম্ভব। তবে এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জড়িত সব স্তরের লোকজনকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত পদ্ধতিতে সবজি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। এতে রপ্তানি দ্বিগুণের বেশি- এমনকি কয়েক গুণ বাড়বে। কারণ সমুদ্র পথে রপ্তানি হলে খরচ কমবে, নতুন নতুন বিনিয়োগ আসবে এই খাতে।
রেমিট্যান্স আসা জেলাগুলোর প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে চট্টগ্রাম। দৈনিক পূর্বকোনের শিরোনাম এটি। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়-
সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের ৬৪ জেলা মিলিয়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ১০.৬৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসা জেলাগুলোর মধ্যে প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেমিট্যান্স আয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। ২০২৪ অর্থবছরে এই জেলা রেমিট্যান্স পেয়েছে ২.৩৭বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরে চট্টগ্রামের বাসিন্দারা ১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। সে হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে প্রায় ৭৫৭ মিলিয়ন ডলার।
এ অর্থবছরে দেশের ৬৪ জেলা মিলিয়ে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ১০.৬৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “জেলাভিত্তিক এসব পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের মাঝে প্রশ্ন আছে। বর্তমানে মার্কেট কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। ফলে, এসব ডেটা দেখে জেলার আসল চিত্র বোঝা যায় না।” জেলায় ২০২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এছাড়া, শীর্ষ ৬ জেলার বাকিগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেটি ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। বিশেষ করে, বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যায় ২০২৩ অর্থবছরে শীর্ষস্থানে থাকা কুমিল্লা জেলায় রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশের মতো।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানের মতোই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের তথ্যে কোনো কোনো দেশ অনেক ভালো পারফর্ম করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের রেমিট্যান্স আয়ের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থান থেকে ২০২৪ অর্থবছরে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে দুবাই এবং আবুধাবির মতো ৭টি আমিরাত নিয়ে গঠিত দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দেশটি থেকে রেমিট্যান্স আয় ৫২ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য ২০২৩ অর্থবছরেও ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল দেশটির রেমিটাররা। ২০২৩ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় ৭৭,০০০ কর্মী গিয়েছন। এছাড়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্স আয়েও ৪০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি, ৩.৯১ লাখ কর্মী যাওয়া সৌদি আরব থেকে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১১.৯৬ লাখের রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে- যা ২০২৩ অর্থবরের ১১.৩৭ লাখের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, “আমাদের ধারণা পাচার হওয়া কিছু টাকা রেমিট্যান্স চ্যানেলে ব্যাংকে ঢুকছে। এর অন্যতম কারণ, ডলারের রেট বেড়ে যাওয়া।”
তিনি বলেন, “২ বছর আগে টাকা পাচার করার ক্ষেত্রে ডলারের রেট পেয়েছিল ৮৭-৮৮ টাকা। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তারাই টাকা ফেরত নিয়ে আসলে সরকারি প্রণোদনাসহ ১২০-১২১ রেট পাচ্ছে। অর্থাৎ, পাচারের টাকা দেশে ফেরালে একদিকে রেমিট্যান্সের কারণে টাকাগুলো হোয়াইট (সাদা) হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে ডলারের রেট বাড়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে।” অবশ্য পাচার হওয়া খুব বেশি টাকা রেমিট্যান্সের আকারে দেশে ঢুকছে না মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “টাকা তখনই ফেরত আসে, যখন নতুন বিনিয়োগ করা হয়। ফলে কেউ যদি টাকা নিয়ে আসে, সে হয়তো কোথাও বিনিয়োগ করার জন্যই নিয়ে আসে। এখন এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম।”
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স কেন বাড়ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বড় রেমিট্যান্স হাউজগুলো এজেন্ট নিয়োগ করে থাকে। বিদেশের অনেক কর্মী সরাসরি দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে এসব এজেন্টদের মাধ্যমে পাঠান। আর এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ হওয়া ফরেন কারেন্সি বেশকিছু হাউজ দুবাই বা সিঙ্গাপুর থেকে একসঙ্গে রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠায়। তাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্সের গ্রোথ এতো বেশি দেখাচ্ছে।”
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব রেমিট্যান্স হাউজ ছোট ছোট এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেন, তাদেরকে এগ্রিগেটর বলা হয় । এসব হাউজ ব্যাংকগুলোর কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রির রেট নিয়ে দেনদরবার করে। যে ব্যাংক বেশি রেট অফার করে, এগ্রিগেটররা তাদের কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রি করেন। এসব কারণে দুবাই মার্কেট থেকে সেসব রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে বেশি খরচ করতে হয়। সূত্র: টিবিএস
চাটগাঁর চোখ/ এইচডি