মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ড.ইউনূসের ৬ মাসের সাজা

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা।

১ জানুয়ারি (সোমবার) বেলা তিনটার দিকে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল শর্তে জামিন চাইলে আদালত ১ মাসের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। ৫ হাজার টাকার বন্ডে সেটি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যে দোষ করিনি, সে দোষে শাস্তি পেলাম। এটিকে যদি ন্যায়বিচার বলতে চান, বলুন।

রায়ের শুরুতেই মামলা চলাকালীন সাক্ষীর জালিয়াতি নিয়ে ড. ইউনূসের করা ২টি আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। একই প্রসঙ্গে আদালত জানায়, ড. ইউনূসকে নোবেল বিজয়ী হিসেবে নয়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের যেসব ধারায় ড. ইউনূস-সহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সেসব ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমে বলেছেন, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ রায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রায়ের জন্য অপেক্ষা করলাম, বন্ধু-বান্ধব মিলে সবাই একসঙ্গে ছিলাম। যে দোষ আমি করিনি, সেই দোষের ওপর শাস্তি দিল। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল। আমরা সেটা গ্রহণ করলাম।

ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। মামলায় গত বছরের ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল করার দাবিতে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যান্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেয়।

এরপর গত বছরের ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা গত ৯ নভেম্বর শেষ হয়। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। গত ২৪ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন (১ জানুয়ারি) ধার্য করেছিলেন আদালত।মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক।

তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছিল, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

একই দিনে গ্রামীন টেলিকমের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে এই মামলায় ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আরো তিন জন হলেন – গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

 

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর