মিয়ানমারে আরকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উপর ট্যাক্স আরোপ ও তাদের জমিজমা রাখাইনদের মাঝে বিতরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, এর মাধ্যমে আরকানে অবস্থান করা ও পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা তাদের ভূমি হারাবেন এবং তারা সেখানে আর ফিরতে পারবেন না।
ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহমান, মোহাম্মদ হাসান ও আবদুশ শুক্কুর প্রতিবেদককে জানান, মিয়ানমারের আরকান তথা রাখাইন প্রদেশে গত ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে। এ সময় কয়েক দফায় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এরপর থেকে ২০২৪ সালের শেষ দিন নাগাদ অন্তত আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এদের সাথে যোগ হয়। ১৯টির অধিক আশ্রয় শিবিরে তারা অবস্থান করছেন বর্তমানে। যারা এখন নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে প্রস্তুত থাকলেও নানা তালবাহনায় ফিরতে পারছেন না।
অন্যদিকে রাখাইন প্রদেশে থাকা বাকি রোহিঙ্গারাও সুখে নেই। জান্তা সরকারের সেনা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাতে বিষিয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। যা অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াইয়ের মত। জান্তা ও আরাকান আর্মি- উভয়েই রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করে।
তারা আরো জানান, এ পরিস্থিতিতে স্বশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরকান আর্মি মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে ঘোষণা দেন, আরকানে থাকা রোহিঙ্গারা বহিরাগত নাগরিক হিসেবে থাকবেন। আর যারা বাংলাদেশসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তাদের এই মুহূর্তে ফেরত আনবে কিনা তাও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।
এ পরিস্থিতিতে আরকান রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা দখলে নেয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরকান আর্মির কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমি ও ভিটাবাড়ি সার্ভে করে সেখানে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ের মাঝে বণ্টন শুরু করেছে ।
উল্লেখ্য গত ১৩ নভেম্বর ২০২৩ সাল থেকে রাখাইন প্রদেশে সরকার ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির (AA) মাঝে সশস্ত্র যুদ্ধে সরকারকে উৎখাত করে প্রায় ১৪টি টাউনশিপ গ্রাম তারা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এদিকে রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গারা বহিরাগত নাগরিক হিসাবে থাকবে এবং মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আরকান আর্মির ( AA) নিজস্ব আইন কানুন মেনে চলতে হবে বলে ঘোষণা দেন। আর প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে নির্ধারিত ট্যাক্স পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা জারি করেছে বলে সূত্র জানায় ।
এছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ( AA) কর্তৃক রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনকে তাদের কাছে বরাদ্দকৃত জমিতে চাষাবাদ ও পশুপালনসহ ব্যবসা বাণিজ্য করার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেন
একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র মতে, গত দুই বছরে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা বিদ্রোহী আরকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণে নেয়। ফলে সীমান্তে চোরাচালান বৃদ্ধি পায়। অবশ্য বিজিবি বলছে, তারা সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
এনইউ/জই