মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি নতুন প্রায় সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এলেও দুটি শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এর মধ্যে সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যায় ‘লাখো’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ শ্রেণির একই বইয়ে শহীদের বিষয়টি উল্লেখই করা হয়নি। চলতি বছর পরিমার্জন শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বই বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি প্রথম শিক্ষার্থীদের হাতে ওঠে ২০১২ সালে। এরপর তিনবার পরিমার্জন হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের পরিমার্জন করা বইটি ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘…শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ আর বৈষম্যের অবসান ঘটায় বাঙালি। ফলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’
তবে নতুন শিক্ষাক্রম এলে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি বাদ দিয়ে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ নামে বই যুক্ত করা হয়। তাতেও শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরিমার্জনের পর চলতি বছরের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ‘বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম’ অধ্যায়ের শেষ দিকে উল্লেখ রয়েছে, ‘…শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জনযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’ একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়েও সুনির্দিষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা উল্লেখ নেই। পুরোনো শিক্ষাক্রমের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ কিংবা নতুন শিক্ষাক্রমের ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ৩০ লাখ শহীদের তথ্যটি উল্লেখ ছিল। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বিষয়টি বড় ইস্যু হিসেবে দেখতে রাজি নন। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পাঠ্যবইয়ের এমন বর্ণনা ‘আগুনে ঘি ঢালার মতো’ অবস্থা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন ইতিহাস ও শিক্ষাবিদরা।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটির সর্বশেষ পরিমার্জনের কাজ কারা করেছেন, বইয়ে তার উল্লেখ নেই। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়ের কাজ করার জন্য বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা পরিমার্জনের কাজ করেছেন। কোথাও যদি কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তার সংশোধনী দেওয়া হবে। দ্রুত কাজ করতে গিয়েও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখব।’
লেখক ও গবেষক এস এম নাদিম মাহমুদ পাঠ্যবইয়ে শহীদের সংখ্যা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন, যার শেষাংশে তিনি লিখেছেন, ‘…দুনিয়ার যে কোনো যুদ্ধেই শহীদের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া মুশকিল। ইতিহাসবিদরা জনশুমারি ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে যে ৩০ লাখ শহীদের কথা বলে আসছেন, তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি প্রতিষ্ঠিত সংখ্যা এবং জাতীয়ভাবে গৃহীত। এখন এ সংখ্যাটি যারা বিতর্কিত করতে চান, তারা সময় সুযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধটাকেই গিলে ফেলবেন।’
সূত্র : কালবেলা।
এনইউ/জই
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ষষ্ঠ-সপ্তমের পাঠ্যবই থেকে বাদ
চাটগাঁর চোখ ডেস্ক