বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

বিএনপি ক্রমেই উচ্চকণ্ঠ

নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ ও জামায়াত আমিরের এক সুর

বিশেষ প্রতিনিধি

অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে ক্রমেই উচ্চকণ্ঠ হচ্ছে বিএনপি। সেই সাথে সমমনা দল বিএনপির সাথে এক সুরে। বিএনপির বক্তব্য হলো- তাদের ভাষায় সংস্কারের নামে নির্বাচন আয়োজন যত দেরি হবে ততই ষড়যন্ত্র ও জটিলতা বাড়বে। নির্বাচিত সরকারই প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নেবে।

ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা কবে নির্বাচন হতে পার এ সংক্রান্ত একটি বক্তব্যও দিয়েছেন।ঘোষিত সময় প্রয়োজন বলে উপদেষ্টরাও বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন। বিএনপির চাপোদ্যত এ সময়টা নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে জামায়াত আমীর ও একজন উপদেষ্টা কথা বলেছেন প্রায় একই সুরে। অন্যদিকে বিএনপি নেতা ইশরাকও দিলেন হুঁশিয়ারি।

নির্বাচন বিলম্বের পরিণাম হবে ভয়াবহ : ইশরাক

দলের অন্যান্য নেতাদের মত বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই নির্বাচনে যেতে হবে সরকারকে। তার আগে করলে ‘নির্বাচন’ এর বদলে খুনি হাসিনার ভোট ডাকাতির প্রহসন হবে। এ ব্যাপারে সব দল ও সর্বসাধারণ একমত। তবে এই অজুহাতে নির্বাচন বিলম্ব করার গোপন উদ্দেশ্য থাকলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ ও আত্মঘাতী।
আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পোস্টে ইশরাক বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ১৬ বছর ধরে লড়াই সংগ্রাম করেছে তাদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের অনুপস্থিতির কারণে যে ভয়াবহ জুলুম, নির্যাতন, বৈষম্য, ভারতীয় আগ্রাসন ও মানব স্বাধীনতা হরণের ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে তিল তিল করে রক্ত ঝরিয়ে ও অকাতরে জীবন বিলিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছেছে ছাত্র-জনতা-সিপাহির সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। লক্ষ্য একটাই হাসিনা খেদাও তথা গণতন্ত্র মুক্ত করো।
তিনি আরও বলেন, এই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও নির্বাচনের প্রশ্নে এক চুল ছাড় দেওয়া হবে না। আমার হাজার হাজার ভাইবোনেরা গণতন্ত্রের জন্যেই জীবন দিয়েছে। সেটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা প্রতিটি হত্যা ও প্রতি ফোটা রক্তের প্রতিশোধ নিবো।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো গোষ্ঠীর যদি হাসিনার মত অন্য চিন্তা থাকে তাহলে সতর্ক হয়ে যান। প্রয়োজনে যুদ্ধে হবে আরেকবার। এক আবু সাইদের ত্যাগের দৃষ্টান্তে এইবার কয়েক হাজার আবু সাঈদরা বুক পাতার জন্যে অপেক্ষা করছে। নির্বাচন বিলম্বিত করে কেও ভিন্ন উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন করতে চাইলে তারাই সবার আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

সংস্কারের জন্য সময় দেয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

বিএনপির একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিপরীত লাইনে অবস্থান করছে। তাদের মতে, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বুধবার ঢাকার আইডিইবি ভবনে ফোরাম অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এই মত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কার চায়। যাতে এই সংস্কারের মধ্যে দিয়ে আগামীতে আবার কোনো স্বৈরতন্ত্র কায়েমের সুযোগ না থাকে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য তিন মাস কিংবা পাঁচ বছর, এমন কোনো সময় আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেঁধে দেইনি। আমরা সংস্কারের যৌক্তিক সময় বলেছি। উপদেষ্টারা বিবেকবান মানুষ, তারা বুঝতে পারেন কতটুকু সময় প্রয়োজন।
ডা. শফিক বলেন, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সত্যিকারে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করতে পারে সে কারণে আমরা তাদেরকে যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলেছিলাম। তিনি বলেন, শুধুমাত্র স্বার্থপরতার কারণে দেশ পিছিয়ে আছে। রাজনীতিতে আমরা স্লোগান দেই– আমার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। প্রাকটিস হলো– দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে আমি বড়।

শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয় নাই : উপদেষ্টা আসিফ

এদিকে নির্বাচন নিয়ে জামায়াত আমিরের সুরে মিল পাওয়া যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কথায়। তিনি বলেন, শুধুমাত্র একটি নির্বাচন বা ভোটের জন্য এত এত মানুষ জীবন দেয় নাই।
আজ বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ হলরুমে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি শহীদ ও ২০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। শহীদ পরিবার ও আহতরা সংস্কারের কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গণঅভ্যুত্থানের এক দফা ছিল শেখ হাসিনার পতন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ বলতে আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্যাসিজমের পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করে রেখে যাওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই জায়গা থেকে এক দফা বাস্তবায়নের জন্য সংস্কার কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সরকারের ক্লিয়ার ম্যান্ডেট হচ্ছে আমরা সংস্কার কার্যক্রমগুলো করবো।
সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দিবে জানিয়ে তিনি বলেন, তারপর সবার সাথে আলাপ করে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, ৫ আগস্টের পর রাষ্ট্র সংস্কার একটি অনিবার্য অঙ্গীকার। সংস্কার সম্পন্ন না করে নির্বাচনকে একটি নষ্ট ও প্রত্যাখ্যাত কাঠামোতে নিয়ে যাওয়াতে কোনো সুফল নেই। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ও ঐকমত্য বিঘ্নিত হলে পতিতদের সুযোগ ও চক্রান্তই বাড়বে।

এনইউ/ জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর