দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ষড়যন্ত্র রুখতে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। একই সাথে দেশের বিরুদ্ধে চলা অপপ্রচার রোধে সমাবেশ করার প্রস্তাব এবং দেশের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয় বলে রাজনৈতিক দলের নেতারা একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, আমরা গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। এ জন্য আমরা সবাই মিলে একটি সমাবেশ করতে পারি কি না, এমনকি নিরাপত্তার কাউন্সিল করতে পারি কি না- এই প্রস্তাব বৈঠকে আনা হয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল আজ উপস্থিত ছিল। এই বৈঠকে সবাই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে আমরা সাহসী, অটুট ও ঐক্যবদ্ধ থাকব। ভবিষতে যে কোনো ধরনের উসকানি এলে আমরা আমাদের ঐক্য আরও বেগবান দেখানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। আসিফ নজরুল বলেন, এই সভার মূল সুর ছিল আমাদের মধ্যে মত, পদ, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে; কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে আমরা সবাই এক। সবার ওপরে দেশ এবং এটা থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হবো না।
এর আগে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার যড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধে এই যড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই বিরাট অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা একে মুছে দিতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।’
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদেরকে আমরা বার বার বলছি, আপনারা আসেন, দেখেন। এখানে কোনো বাধা নেই। এখানে কী বলার বধা আছে? দেখার বাধা আছে?। কিন্তু না, তারা কল্প-কাহিনী বানিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে পাইনি, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদেরকে বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেই জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’ তিনি বলেন, কীভাবে তুলে ধরব, সে ব্যাপারে পরামর্শ জানতে চাই। সবাই মিলে যেন কাজটি করতে পারি।
সরকারের আহ্বানে সংলাপে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা কেনো জানি যড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে পারলাম, এ নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে এটাকে উল্টে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
যড়যন্ত্রকারীদের উদ্বৃত করে অধ্যাাপক ইউনূস বলেন, তারা গণঅভ্যুত্থানকে একটা ভয়ঙ্কর কাণ্ড হিসেবে দেখাতে চাইছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে, সেই ভয়ংকর কাণ্ড থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে চায়। তাদের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাস্তবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে।
তিনি বলেন, এখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। আমরা মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, সেটাকে তারা মুছে দিতে চায়। তারা আগেরটাতে ফিরে যেতে চায়। আগেরটা কীভাবে তারা নিয়ে আসবে? তারা একটা কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি করে রাখতে চায়। তাদের শক্তি অনেক বেশি। অর্থশক্তি এবং আয়োজনের শক্তি এত বেশি ক্রমে ক্রমে তারা মানুষকে বোঝাতে নতুন নতুন কল্প-কাহিনী তৈরি করছে, সেটাতে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
বিকাল ৪টা থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন; জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমার ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ চারজন; ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ; গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; খেলাফত মজলিসের আমির আব্দুল বাসিদ আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম; জমিয়তে উলামে ইসলামের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ইউসুফি ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেনদি প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যমুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।কাল অবৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এনইউ/জই