সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দূতাবাসে হামলা ও মমতার মন্তব্যে দেশজুড়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ

বিশেষ প্রতিনিধি

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও মমতা ব্যানার্জির একটি মন্তব্যের জেরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও শ্লোগানে উত্তাল সারাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষার্থীরা এসব বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ : সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বক্তব্য দেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভারত বাংলাদেশে তার আধিপত্যবাদ বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত তার আধিপত্যবাদের শেকড় অনেক গভীরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ভারতীয় আধিপত্যবাদ উপড়ে ফেলেছে। আমরা অতীতে সীমান্তে ফেলানী হত্যা, স্বর্ণা দাসকে হত্যা করার ঘটনা দেখেছি। ভারতবিরোধী কথা বলায় আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগ নৃশংসভাবে খুন করেছিল। ইসকনের সন্ত্রাসীরা আইনজীবী আলিফকে খুন করেছে।’

ঢাকায় বিক্ষোভ: রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইনকিলাব মঞ্চ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের টিএসসি, মলচত্বর ও ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বিভিন্ন ছাত্রনেতা বক্তব্য রাখেন।

এসময় তারা বলেন, ‘ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে খেলা হবে সমানে সমানে। আমরা রাজা-প্রজা হয়ে থাকব না। আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে; যদি ভারত আমাদের বিষয়ে নাক না গলায়।’ তারা আরো বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে কথা হবে চোখে চোখ রেখে। আমরা দিল্লির দাদাগিরি করার জন্য অভ্যূত্থান করি নাই। বাংলাদেশের সকল মানুষের নিরাপত্তা দিতে বাংলাদেশের সরকার যথেষ্ট। দিল্লির এক্ষেত্রে নাক গলানোর দরকার নেই। আপনাদের দেশে মুসলমানদের কী অবস্থা?’ বাংলাদেশের মানুষ শরীরে রক্ত থাকতে ভারতের আধিপত্য মেনে নেবে না বলেও বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন।

খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাই হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ : ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় খুলনায় বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার রাতে খুলনা ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভ হয়।

এর আগে সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর জাতিসংঘ পার্ক থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি নগরীর শামসুর রহমান রোডে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

মমতার বক্তব্য সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি- বিএনপি:
বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ মন্তব্য করে অবিলম্বে এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে দলের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, সকালে কয়েকটি পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখলাম যে, ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দোপাধ্যায়) যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশে শান্তি বাহিনী প্রেরণের, এটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকিস্বরূপ এবং আমরা মনে করি এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেতৃবর্গের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য তার অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। এ ধরনের কোনো চিন্তাও তাদের মধ্যে উচিত হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে এবং সম্প্রতি একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। এ দেশের মানুষ যে কোনো মূল্যে এ ধরনের চক্রান্ত রুখে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশের জনগণ দাদাগিরি পছন্দ করে না-জামায়াত : বাংলাদেশের জনগণ তাদের মাথার ওপর কারো দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জামায়াত আমির তার পোস্টে ভারতের সমালোচনা করে লিখেন, ভারত নিজের দেশে তার প্রতিবেশি দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ। সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার তাদের থাকতে পারে না।বাংলাদেশের জনগণকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যই তার কার্যকর ঔষধ।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি : সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি এ ঘটনার জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে দায়ী করেছেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সাইফুল হক এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশবিরোধী উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ওই হামলার পেছনে যুক্ত। একই সঙ্গে তিনি বেনাপোল সীমান্তে বিজিপির সাম্প্রদায়িক মহড়া ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যকে চরম উসকানিমূলক ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বলে আখ্যা দিয়েছেন। সাইফুল হক বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সামিল।’

ছাত্রশিবিরের প্রতিবাদ: বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।সোমবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

এতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। একটি কূটনৈতিক মিশন আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সুরক্ষিত। সেখানে এই ধরনের হামলা কেবল আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য হুমকি নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ঘটনা কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করবে না; বরং উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিস্তারকেও উৎসাহিত করবে।’

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর