শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢাকার তীব্র নিন্দা, দিল্লির দুঃখ প্রকাশ

আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাঙচুর-পতাকা অবমাননা

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

ভারতের সেভেন সিস্টারর্সভুক্ত ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর আগরতলার কুঞ্জবনে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। ভারতের ডানপপন্থী সংস্থা ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র সমর্থকরা আজ সোমবার দুপুরে এ হামলা চালায়। বাংলাদেশ এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করতে আহ্বান জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, দুঃখজনকভাবে হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য উপস্থিত স্থানীয় পুলিশ সদস্যদেরকে শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাদের উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার খুঁটি ভেঙে ফেলেছেন, পতাকাকে অসম্মান করেছেন এবং প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরীণ সম্পত্তি ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’র উদ্যোগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক মিশনের ওপর এ জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি ধারাবাহিক প্যাটার্নের অংশ। এ ঘটনা ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশনসের সরাসরি লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

‘বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে, ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করতে এবং ভবিষ্যতে ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে এমন সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি, কূটনীতিক ও অ-কূটনৈতিক কর্মী এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

এর আগে এ ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা জানায়, আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা ও এর সংলগ্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ–মিছিল করা হচ্ছিল। আজ দুপুরে তাঁরা সার্কিট হাউসের মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে তারা হঠাৎ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। এসময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড ভেঙে পতাকা খুলে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া হাইকমিশনের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে। ঘটনার পরপরই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায়। পশ্চিম ত্রিপুরার এসপি ড. কিরান কুমার এবং ডিজিপি অনুরাগ ধানকার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর