বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শীঘ্রই দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেয়ার পর এমন খবর জানালেন মির্জা আব্বাস।
রোববার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, বিজয়ের প্রথম দিনে আপনাদের একটি সুখবর দিতে চাই। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আজ প্রকাশ পেয়েছে এবং তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, একটি ভুল, মিথ্যা ও সাজানো গল্পের ওপর মামলা তৈরি করে সাজা দেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বিদেশি শক্তি দ্বারা একটি পরিকল্পিত হামলা। এই হামলায় কখনোই বিএনপি যুক্ত ছিল না। একটা বিদেশি শক্তি এই অপকর্ম করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফাঁসাতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন খুব তাড়াতাড়ি। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন এবং খালাস দিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা ইউনূস সরকারকে ঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করছি। কিছু লোক দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ট্যাগ করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। এই কথা আমরা বারবার বলবো, বলতে হবে। কারণ বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সঠিক ইতিহাস ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিক কথাগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় : এর আগে বেলা ১১টার দিকে বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিলের রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেয়া হয়। সেই সঙ্গে অভিযোগপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
গত ২১ নভেম্বর এ মামলায় খালাস চেয়ে করা আসামির আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে।
২০০৪ সালে রাজধানী বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২৪ জন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ৪ শতাধিক।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
শুনানির বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেছিলেন, এই মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি (তারেক রহমানসহ অন্যরা) করা হয়েছে, সেটি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমে দেওয়া হয়নি, সরাসরি জজ আদালতে দায়ের করে। সেজন্য এই অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের নজির আছে যে, যদি দেখা যায় পুরো মামলায় অভিযোগ কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়নি ও যথাযথভাবে তদন্ত হয়নি, সেক্ষেত্রে সব আসামি খালাস পেলে যারা আপিল করেননি, ওই রায়ের সুবিধা তারাও পেতে পারেন। তারেক রহমান ও কায়কোবাদসহ কয়েকজন আপিল করতে পারেননি। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান ও কায়কোবাদসহ তাদের নির্দোষ সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
শুনানিতে তিন আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে অধিকতর যে তদন্ত হয়েছে, সেটির আইনগত ভিত্তি নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা প্রদান করা হয়েছে। এই মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে শুনানিতে তুলে ধরেছেন। এসব দিক বিবেচনায় আসামিদের খালাসের আরজি জানিয়েছেন।
এনইউ/জই