১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের পণ্যবাহী কোনো জাহাজ বাংলাদেশের কোনো বন্দরে নোঙর করার অনুমতি পেত না। পাকিস্তানি পণ্য অন্যদেশের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসত। তবে এবার পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কন্টেনার আনা নেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রথমবার নতুন এই পরিবহনসেবায় পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে জাহাজে করে সরাসরি কন্টেনারে পণ্য আনা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের একটি জাহাজে বোঝাই করে পাকিস্তান থেকে এসেছে এসব কন্টেনার। তবে কী পণ্য বাংলাদেশে আনা হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, করাচি বন্দর থেকে আসা উক্ত জাহাজ ৩৭০টি কন্টেনার খালাস করে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে এসেছে ২৯৭টি। বাকি ৭৩টি এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, পাকিস্তান থেকে আসা কন্টেবারগুলোতে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। সেদেশের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।
এর মধ্যে জাহাজটিতে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। এটি টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোট ১১৫ কন্টেনারে এসেছে এটি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ৪৬ কন্টেনারে আনা হয়েছে এটি। এছাড়া ৩৫ কন্টেনারে চুনাপাথর এবং ৬ কন্টেনারে ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে।
পাশাপাশি ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কন্টেনার এবং পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও রং রয়েছে ২৮ কন্টেনারে। একটি কন্টেনারে গাড়ির যন্ত্রাংশও রয়েছে। এসব পণ্যের আমদানিকারক হলো- আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও ৪২ কন্টেনার পেঁয়াজ (৬১১ টন) ও ১৪ কন্টেনার আলু (২০৩ টন) আমদানি করা হয়েছে। এসব খাদ্যপণ্য এনেছে ঢাকার হাফিজ করপোরেশন ও এম আর ট্রেডিংস এবং চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর।
চটগ্রামের খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আগে পাকিস্তানের করাচি থেকে চট্টগ্রামমুখী কন্টেনার প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে আনা হতো। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে তা তুলে দেয়া হতো। তবে এখন সরাসরি করাচি থেকে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার পরিবহন করতে পারবে। এতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে।
এদিকে পাকিস্তান ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা ৭৩ কন্টেনারে রয়েছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি পণ্য। শুধু একটি কন্টেনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন। আরব আমিরাতের ট্রুবেল মার্কেটিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এই পণ্য এনেছে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউস সাবির ট্রেডার্স।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, জাহাজটি কন্টেনারগুলো নামিয়ে মঙ্গলবার বন্দর ত্যাগ করেছে। আমদানিকারকেরা এখন এসব পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এনইউ/জই