অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কার্যক্রম বৈধ এবং এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমনকি একে অবৈধও ঘোষণা করতে পারবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া চালানো যাবে না মর্মে একটি অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এছাড়া অধ্যাদেশে বর্তমান সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয়নি। খসড়ায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত না হওয়া এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করা পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় বহাল থাকবে। শীঘ্রই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ শুক্রবার জানান, অধ্যাদেশের খসড়াটি সমস্ত বিবেচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের পর গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে যান। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় এবং তার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।
এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি। সংবিধানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া আবশ্যক, যদিও বিশেষ পরিস্থিতিতে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। বিএনপি প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে ছিল, তবে এখন দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ এবং অধ্যাদেশ সম্পর্কিত খসড়ায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সব সিদ্ধান্ত আইনানুযায়ী বৈধ গণ্য হবে এবং এর কোনো বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও কার্যধারা সম্পর্কে খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সরকারের গঠনে কোনো ত্রুটি থাকলেও তা কোনো কার্যক্রম অবৈধ করবে না। এছাড়া, সরকার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে পারবে। প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা তাদের পদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা পাবেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারবেন।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণে তাদের দেশের নাগরিকত্ব, বয়স, এবং বিচারিক মাপকাঠির কথা বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বৈধভাবে কাজ করবে এবং সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় দায়িত্ব পালন করবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয় এবং বিলুপ্ত করা হয়।
এনইউ/জই