শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা–গভর্নরের বিরুদ্ধে আমেরিকায় পরোয়ানা, পরে স্থগিত

চাটগাঁর চোখ ডেস্ক

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আমেরিকার একটি আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ কোম্পানি স্মিথ কোজেনারেশনের একটি সালিশি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

তবে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।

ওই পোস্টে আনসারি বলেন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক একটি চুক্তি বাতিলের দায়ে স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলা করে।  ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারের সাথে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিল সরকার। এই মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট আদালত অনেকটা এখতিয়ার বহির্ভূত একটি রায় প্রদান করে, যা শুক্রবার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। যদিও বিষয়টির সাময়িক অবসান ঘটেছে।

এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইউএস ডিস্ট্রিক্ট বিচারক কার্ল জে নিকোলস স্মিথ মার্কিন মার্শাল সার্ভিসকে ওই দুজন ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। আমেরিকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ল–৩৬০-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ল–৩৬০ এর বরাতে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ কোম্পানিটি বাংলাদেশের কাছ থেকে ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাটি করেছে।

গত ২১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যান অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২৬ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত চলবে এই সভা। এ ছাড়াও অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী দলে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সাতজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।

এই ঘটনায় বাংলাদেশ মার্কিন আদালতে আপিল করেছে। আপিলে বলা হয়েছে, যে দুজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁরা উভয়েই উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা। তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা থেকে দায়মুক্ত।

আপিলে আরও বলা হয়, বিচারক নিকোলসের আদালতের রায় এখতিয়ারবহির্ভূত ও গ্রেপ্তারের প্রয়োগ অযোগ্য।

এদিকে মামলায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশের অর্থায়নের ‘দুইজন সিনিয়র নেতা’ হিসাবে উল্লেখ করেছে। এছাড়াও মামলার নিষ্পত্তির জন্য তাঁদের জবানবন্দি প্রয়োজন আছে বলে জানায়।

অন্যদিকে নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি আইনি গণমাধ্যম ল৩৬০ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গেও যোগাযোগ করলে তিনিও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এছাড়াও গণমাধ্যমটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডিএম সালাউদ্দিন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গেও মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তারাও কেউ এ বিষয়ে মন্তব্যে করেননি।

গণমাধ্যমটির তরফ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।

এদিকে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আদালতকে জানায়, উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বুধবার হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা হাজির হননি।

উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুজনেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে গিয়েছেন। স্মিথ কোজেনারেশন পাওয়ার প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এই সফরটি হতে পারে জবানবন্দি নেওয়ার একমাত্র সুযোগ।

বিরোধের সূত্রপাত ১৯৯৭ সালে, ওই সময় স্মিথ কোজেনারেশন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। এর পর কোম্পানিটি ওই বছরই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি নিয়ে কোনো মীমাংসা না হওয়ায় ২০০৬ সালে আমেরিকান আদালতে একটি মামলা দায়ের করে স্মিথ কোজেনারেশন।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর