ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার; নিজেদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ঠিক করে একটি অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা, পদত্যাগ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ের বিধান হিসেবে এই অধ্যাদেশ জারি হচ্ছে।এই অধ্যাদেশ কোন প্রেক্ষাপটে জারি হচ্ছে, তা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন ও গণহত্যা চালানোর ফলশ্রুতিতে সমগ্র দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা উত্তাল গণবিক্ষোভ করে।
“এবং আন্দোলনের এক পর্যায়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ২১ শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ৫ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন।”
এর পরদিন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা তুলে ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলা, জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখা এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বিষয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে স্পেশাল রেফারেন্স নম্বর- ০১/২০২৪ দ্বারা মতামত প্রদান করেছে যে, ‘রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণকে শপথ পাঠ করাতে পারবেন’।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ‘ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি অনুসারে’ সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় সর্বস্তরের জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছা ও পরম অভিপ্রায়ের প্রেক্ষিতে, গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্র সংস্কার আকাঙ্ক্ষা পূরণের ও রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৮ অগাস্ট তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে গেলে বা অধিবেশন চলমান না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ অধ্যাদেশ জারি করবেন।
সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন।”
জারি হওয়ার সময় থেকে ‘অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে।
এমএ/ জই