প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং অব্যাহত প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করতে পারবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী,বললেন ব্রেন্ট নেইম্যান।
বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহেই অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেজারি সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার পত্রিকাটি লিখেছে, আগামী ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এ বৈঠক হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের পক্ষে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নোবেল বিজয়ী ইউনূসও আলোচনায় অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডি এবং বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের কর্মকর্তারা থাকবেন।
ব্রেন্ট নেইম্যান বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু আর্থিক খাতে গভীর সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি হ্রাস করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করতে চাইছে, সেহেতু আইএমএফ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের অব্যাহত সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়াশিংটন।”
টানা কয়েক বছর ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা বাংলাদেশ যখন আঞ্চলিক অর্থনীতিতে উদীয়মান সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, তখনই করোনাভাইরাস মহামারী এবং ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি ও খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশকে আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজস্ব ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের সার্বিক বিষয়গুলোও স্থান পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকেই দেশের অর্থনীতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্যে কলকারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারেনি।
এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো থেকে কিছু কাজ হাতছাড়া হয়ে গেছে বলেও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের বরাতে জানাচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শিল্প খাতের সংস্কারে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যার মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়টিও রয়েছে। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসও আরো বেশি কাজ পাওয়ার জন্য শ্রম খাতের সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের অনেকের মনে স্বস্তি এনে দিলেও শক্তিশালী প্রতিবেশী এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এখন ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।
দিল্লির অস্বস্তির কারণ হল, বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাব বাড়তে থাকলে তা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্য ও স্বার্থের অনকূলে যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য গতমাসেই দাবি করেছে, বাংলাদেশে সরকার পতনের পেছনে তাদের কোনো হাত নেই।
এদিকে,ভারতের সঙ্গে চলমান কোনো প্রকল্প স্থগিত হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। আজ বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্পে কাজ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশুগঞ্জ ও আখাউড়া সড়কের মতো কিছু প্রকল্পের ঠিকাদার ভারতে চলে গেলেও দ্রুতই ফিরে আসবে ও কাজ শুরু হবে।
ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশের ঋণের অর্থ ছাড় করার বিষয়েও সমস্যা নেই। আগের মতোই এই সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেবে ভারত।
এমএ/ জই