মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

বিরতিহীন ভাবে চলছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত। রাতদিন টানা গুলিবর্ষণ, মর্টারশেল সহ বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্ত এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় সীমান্তের কাছাকাছি ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেছে। এছাড়াও সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।এমন এক পরিস্থিতিতে সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আগামীকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সীমান্ত পরিদর্শনে আসছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে গত তিন দিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে ২৬৪জন বিজিপি সদস্য। তাদের নিরস্ত্র করে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আহতদের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২৪জন অস্ত্রধারীকে আটক করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি অত্যাধুনিক অস্ত্র, দুটি গ্রেনেড, রকেট লাঞ্চারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন।অপরদিকে পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে বিজিবি ও স্থানীয়দের ধাওয়ায় পিছু হটলেন ৬৫ রোহিঙ্গা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজারের জেলার তিন উপজেলার সীমান্ত এলাকার ১০ গ্রামের মানুষ আতংকে দিন কাটাচ্ছে। তাদের কেউ ক্ষেত খামার, প্রজেক্টে যেতে পারছে না। এসব এলাকায় অন্তত এক লাখের বেশি বাসিন্দা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তের এপারে বসত ঘরে। এর প্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নিদের্শনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত কাউকে সরানো হয়নি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন।

তিনি জানান, উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। লোকজনকে আনতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সহযোগিতা করছেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শামীম হোসেন বলেন, স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা আতংক বিরাজ করলেও সীমান্ত পরিস্থিতি এখনো অনুকুলে রয়েছে।

 

২৪০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দি।
ডিসি বলেন, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান পরিস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রী ও সীমান্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ ও সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। এরইমধ্যে সীমান্ত লাগোয়া দেশটির সরকারি বাহিনীর তমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। বর্তমানে ঢেকুবনিয়ে বিজিপি ক্যাম্প দখলে নিতে উভয় পক্ষের লড়াই চলছে। তাদের এ সংঘাতে ব্যবহার করা গুলি ও মর্টার শেলের গোলা সীমান্ত অতিক্রম করে এসে পড়ছে বাংলাদেশের ঘুমধুম এলাকার বিভিন্ন লোকালয়ে।এ অবস্থায় সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের নিরাপদে আশ্রয় দিতে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে ঘুমধুমের কোনাকপাড়া, জলপাইতলি ও ভাজাবনিয়া এলাকার বাসিন্দাদের ওই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলায় নাইক্ষ্যংছড়িতে সৈয়দ আলম (৩৮) নামের আরও এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সৈয়দ আলম ওই এলাকার কাদের হোসেনের ছেলে।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর