মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক সংঘর্ষ: সীমান্ত জুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে প্রবল গোলাবর্ষণের কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম তুমব্রু এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ভয়ে, আতঙ্কে স্থানীয়রা কেউ ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। যার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রবল হচ্ছে দিন দিন। বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না কেউ।

এই সংঘাত ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ হলেও কখনও কখনও সেখান থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল এপারের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, ফাত্রাঝিরি, ভাজাবনিয়া, উখিয়ার পালংখালী, আঞ্জুমানপাড়া, রহমতের বিল, ধামনখালী, টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও ধানী জমিতে এসে পড়ছে।

‘রাখাইনে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে। অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও কোস্ট গার্ড কড়া সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসন সজাগ রয়েছে। গত দুইদিন সীমান্তের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও শনিবার দুপুর থেকে আবারও শুরু হয় বৃষ্টির মতো গোলাগুলি ও সংঘর্ষ।

শনিবার বিকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ পিলারের কাছাকাছি মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মির সাথে সেদেশের সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাদের ছোড়া গুলি এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। ছোড়া একটি গুলি (বুলেট) তুমব্রু উত্তর পাড়া এলাকার আবু তাহের ড্রাইভারের অটোরিকশা (সিএনজি) তে এসে পড়ে সামনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়।

আবু তাহের প্রতিবেদক কে বলেন, আমি সিএনজি থামিয়ে পানের দোকানে যায়। তখনই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সেদেশের সেনাবাহিনীর বৃষ্টির মতো গোলাগুলি শুরু হয়। একটি গুলি (বুলেট) এসে আমার অটোরিকশা (সিএনজি) তে পড়ে সামনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তবে অক্ষত আছি। আমরা সীমান্তের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় মধ্যেই দৈনন্দিন কার্যক্রম করে যাচ্ছি। সিএনজিচালক আবু তাহেরের বাড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুতে বলে জানা গেছে।

তুমব্রু সীমান্তের কয়েকজন প্রতক্ষ্যদর্শী জানান, অটোরিকশা (সিএনজি) তে পড়া বুলেটটি তুমব্রু রাইট পিলার বরাবর অবস্থিত জান্তা বাহিনীর ক্যাম্প থেকে ছোড়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তারা বলছেন, শনিবার দুপুর আড়াইটায় তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প থেকে ফায়ারিং শুরু হয়। প্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টা ধরে এই ফায়ারিং অব্যাহত ছিল। এরমধ্যে অন্তত ১০টি মর্টারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। গুলিবিনিময় হয়েছে দুই শতাধিক।

সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের জান্তা বাহিনীর প্রায় সবকয়টি ক্যাম্প দখলে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। সীমান্তের ওই এলাকায় এখন মাত্র তিনটি ক্যাম্প দখলে আছে জান্তা বাহিনীর। এগুলো হলো তুমব্রু ৩৪ পিলার রাইট ক্যাম্প, ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প এবং আরেকটির নাম জানা যায়নি। এই ক্যাম্পগুলো দখলে নেয়ার জন্য হামলা শুরু করেছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন (আরাকান আর্মি) সদস্যরা।

স্থানীয়রা বলছেন, এই ক্যাম্পগুলোর অবস্থান সীমান্ত ঘেঁষা। ক্যাম্পগুলোর এপারের সীমান্তে প্রচুর জনবসতি রয়েছে। ক্যাম্পগুলো দখলের জন্য গোলাগুলি হলেই রোহিঙ্গারা সীমান্তের এপারে চলে আসবে। হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ জানান, সীমান্তের ওপারে কয়েকদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে আজকে দুপুর থেকে আবারও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের সাথে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের ছোড়া একটি বুলেট বাংলাদেশের ভূখণ্ড তুমব্রু উত্তর পাড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাতে এসে পড়েছে। সিএনজিটির গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। কেউ হতাহত হয়নি।

তিনি বলেন, এখনই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটবে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ চলতে থাকলে অতীতে অনুপ্রবেশের নজির রয়েছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর