মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পশ্চিম কূল এলাকার বাহাদুল্লাহ’র উঠানে এসে পড়েছে।বাংলাদেশ -মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আবারো গোলাগুলি চলছে।এই গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আতংকে সীমান্ত এলাকার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
সোমবার (২৯-জানুয়ারী) সকাল ৯টা থেকে ৩৪ পিলার রাইট মিয়ানমার বিজিপি ক্যাম্প ও মিয়ানমারের মাইকপোষ্ট দখল নেওয়া বিদ্রোহী আরকান আর্মিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ চলমান রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দানের বরাদে জানাগেছে। এদিকে চলমান সংঘর্ষের মাঝে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারের ভিতর থেকে আকষ্মিক একটি মর্টার শেলের খোল এসে পড়েছে তুমব্রু পশ্চিমকুলের স্থানীয় বাসিন্দা বাহাদুল্লাহ’র বসতবাড়ির উঠানে।এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত শনিবার থেকেই মিয়ানমারের ভিতরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আজ (২৯ জানুয়ারি) আবারও ৩৩ নম্বর পিলার সীমানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিম কুলে মিয়ানমার অভ্যন্তরে সকাল থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা বাহাদুল্লাহ স্ত্রীর খালেদা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ির দরজার সামনে মোবাইল করা অবস্থায় আঙ্গিনার ছোট চম্পা ফুলের গাছের সাথে ধাক্কা লেগে একটা বিকট শব্দ হয়ে উঠানে পড়া মাত্র বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়েছিল মনে করেছিলেন বলেও জানান তিনি। স্থানীয় অনেকেই ধারণা করেছেন মর্টারশেলটি উপরেই বিস্ফোরণ হয়ে খালি খোলটি এসে পড়াতে কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
ত্রিরতন চাকমা বলেন, সকাল থেকে মিয়ানমারের ভিতরে গোলাগুলির কারণে ধুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ গুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯ জানুয়ারি এক দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান
একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন সংঘর্ষ যেহেতু সীমান্তের কাছাকাছি তাই পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
৩৪ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সীমান্তের বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে দায়িত্বরত জোয়ানরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন-টেকনাফ-বান্দরবানের আলীকদম পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)টহল জোরদার করেছে বিজিবি জানিয়েছেন। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল আবছার জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাসহ যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি। গত বছর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির গোলাগুলি ও মর্টার শেল হামলার এক পর্যায়ে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু গ্রামে মর্টার শেল এসে পড়েছিল। এ ছাড়া বেশ কয়েক দফা বাংলাদেশের সীমানায় মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার এসে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
এ ব্যাপারে উখিয়ার সীমান্তবর্তী পালংখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন অন্যান্য দিনের তুললায় একটু কম।তবে স্হানীয়দের সর্তক ভাবে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে রাখাইনের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা শুরু করে। এরপর তিন দিনে তারা রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা দখল করতে সমর্থ হয়। এ লড়াইয়ে মিয়ানমার বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড’-এ রয়েছে আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। এই পরিস্থিতিতে এতদিন ধরে মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকা আরেক গোষ্ঠী ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশনও (পিএনএলও) আলোচনা বাতিল করে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে রাখাইন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমার বাহিনীর এখন আরও পিছু হটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যম নারিনজারা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত শুক্রবার আরাকান আর্মি রাখাইনের বন্দরনগরী পকতাও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ম্রাক উ, মিনবিয়া, কিয়াকতো ও রাথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু করে। শুক্রবার ভোরে কালাদান উপত্যকার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকায় হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। কিয়াকতো এলাকায় অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিপুল গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে মিয়ানমার সেনারা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে মিয়ানমার বাহিনী তাদের অবস্থান থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপ করছে এবং বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করে চলেছে।