কাল ১০ই মাঘ। প্রতি বাংলা সনের মাঘ মাসের এই তারিখে বিগত ১১৭ ধরে পালিত হয়ে আসছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলি গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহ ছুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বার্ষিক ওরস শরীফ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি মাইজভান্ডার দরবার শরীফে আগামীকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) মহাসমারোহে পালতি হবে ১১৮তম ওরস শরীফ।
বিশেষ এই দিনটি ঘিরে গত দু’দিন থেকেই ভক্ত আশেকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার ও আশেপাশের এলাকা।
জিকির, কাওয়ালী ও মিলাদ মাহফিলের ধ্বনিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
ওরসের আগে ও পরে অন্তত ৭ দিন ধরে চলবে এই উৎসব।
ওরসের প্রধান দিবস উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও ও ভারত, মিয়ানমার, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা মাইজভাণ্ডার দরবারে আসতে শুরু করেছেন।
আগামীকাল বুধবার প্রধান দিবসের দিন স্ব স্ব মঞ্জিলে কেন্দ্রীয় মিলাদ মাহ্ফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মঞ্জিলের প্রধানগণ।
ওরসকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ওরস উপলক্ষে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ১০৫ সদস্য বিশিষ্ট পুরুষ মহিলা আনসার টিম আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও মঞ্জিল ভিত্তিক একাধিক কমিটি, উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন মঞ্জিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মাইজভাণ্ডার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন শাহছুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, মাইজভাণ্ডার দরবারের প্রাণ পুরুষ গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী হযরত মওলানা শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মানুষের মনে খোদা–প্রেম জাগ্রত করার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার আল্লাহ প্রদত্ত আধ্যাত্মিক শক্তির পরশে মানুষ আজ আলোর পথের পথিক।
আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ডা. সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভাণ্ডারী ওরস শরীফে সার্বক্ষণিক শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রাখা, আশেক ভক্তগণের যাতায়াত, ইবাদত-বন্দেগী, হাদিয়া চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল স্বেচ্ছাসেবী খাদেমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ওরসে গাউসিয়া হক মন্জিলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে। বুধবার বা’দ ফজর রওজা শরীফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সকাল ৮টায় রওজা শরীফে খতমে কোরআন, খতমে গাউসিয়া, খতমে খাজেগান, তাওয়াল্লোদে গাউসিয়া পাঠ ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। রাত ১০টায় মিলাদ মাহ্ফিল ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর প্র–প্রপৌত্র, গাউসিয়া হক মন্জিলের সাজ্জাদানশীন, শাহ্সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.)।
ভক্ত আশেকদের যাতায়ত নির্বিঘ্ন করতে গাউসিয়া হক মন্জিল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা নাজিরহাট ঝংকার মোড় হতে মাইজভাণ্ডার দরবারের পুরো এলাকাজুড়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এস জেড এইচ এম ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে নগরের মুরাদপুর থেকে মাইজভাণ্ডার শরিফ শাহী গেইট পর্যন্ত বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।
এদিকে প্রতিবারের ন্যায় ওরস উপলক্ষে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। মেলায় পোশাক, রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দা, ছুরি, বটি, বেত সামগ্রী, বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি, হাঁড়ি পাতিলসহ ঘরে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ বড় বড় সাইজের জাপানি মুলা বিক্রি যা ভাণ্ডারী মূলা নামে খ্যাত।