বিশেষ প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম) ▪️
সারা দেশের মত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, দীঘি, লেকে, সমুদ্র উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো অতিথি পাখি। সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সাত্তার দিঘিতে হাজারো অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত চারপাশ। কখনো এক সাথে পানিতে ডুব দিয়ে নিস্তরঙ্গ দিঘিতে ঢেউ তোলা আবার কখনো ঝাঁক বেধে চার পাশে উড়ে উড়ে চক্কর দেয়া আবার কখনো ভেসে বেড়ানো। পাখিদের এমন কলতান উপভোগ করার জন্য স্থানীয় সকল বয়সী মানুষ দিঘির পাড়ে বিকেল উপভোগ করার জন্য আসেন।

স্থানীয় যুবক মো. রানা বলেন, আমরা ছোটকাল থেকে দেখে আসছি প্রতি বছর শীতের মৌসুমে অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এই দীঘিতে আসে। স্থানীয়রা তাদের আগমন উপভোগ করে। কোন প্রকার ক্ষতি করা মুরব্বিদের নিষেধ আছে বলে কেউ এদের শিকার কিংবা বিরক্ত করতে পারেনা। এরা নিজেদের মত করে থাকে আবার মৌসুম শেষ হলে চলে যায়।
খাসখামা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্বীনপ্রিয় বড়ুয়া জানান,’আমি এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি এক দশকের বেশি হতে চলল। লোকমুখে শোনা প্রায় তিন দশক ধরে এই দিঘিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিরা আসে। এই পাখি সাধারণত যেখানে সেখানে অবস্থান করেনা। যেসব স্থানকে নিরাপদ মনে করে সেখানেই তারা থাকে। আমার দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি এদের বিচরণ পর্যবেক্ষণ করি। পরিবেশটাকে আপন করে নিয়েছে বলে এরা প্রতি মৌসুমে ছুটে আসে।

জানা যায় উপজেলার কেইপিজেড লেক, বিভিন্ন সুরতবিবির দীঘি, মনু মিয়ার দীঘি, গুজুরা দীঘি, উপকূল জুড়ে দেখা মিলছে অতিথি পাখির অবাদ বিচরণ। এদেএ মধ্যে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, গাং কবুতর, বনহুর, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখপখিম, সারস, কাইমা, শ্রাইক, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড়া, সাগর কৈতর, সি-গালসহ অসংখ্য পরিযায়ী পাখি।
উপজেলার ষোলকাটা গ্রামের মোহাম্মদ হাশেম বলেন, এক সময় মনুমিয়ার দিঘিতে দেখা মিলত এখন আগের মত দেখা যায়না। অল্প কিছু আসে মানুষের ভীড়, আনাগোনা দেখলেই চলে যায়। ছোট বেলায় এসব পাখির পাশাপাশি দেশীয় ডাহুক, বক, সারস, পানকৌড়ি সহ কত পাখি ছিল। আজকাল সেসব চোখে পড়েনা। মানুষ সব কিছু উজাড় করে দিচ্ছে।
বেশিরভাগ জলাশয় মৎস্য চাষের আওতায় আসায় সেসব আধার জাল দিয়ে ঘেরাও থাকায় অতিথি পাখিরা গুটিকয়েক জায়গায় তাদের নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে নিয়েছেন। খাসখামার সাত্তার দিঘি, কেইপিজেড লেক, উপকূলীয় এলাকা তাদের অন্যতম।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, বিগত বছর গুলোর তুলনায় অতিথি পাখির সংখ্যা কমে আসছে। দিন দিন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত জলাশয় গুলো ভরাট হচ্ছে। এরা শুধু পরিবেশের বন্ধু নয়, অতিথি বৎসল বাঙ্গালীর কাছে এরা অতিথিও বটে! কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অসচেতন শিকারির পাশাপাশি সৌখিন শিকারীরাও পরিযায়ী পাখির বাস্তুসংস্থান রোধের জন্য দায়ী। সমাজের সকলস্থরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বন্যপ্রানী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।