শেষ পর্যন্ত বাতিল হল চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রার্থিতা। আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে ভোট শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে ইসি তাঁর প্রার্থীতা বাতিল করে। ইসির সচিব জাহাংগীর আলম বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান।ইসি সচিব জানান এমপি মোস্তাফিজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়েছিলেন।এ আসনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্রের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান এবং ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ কবীর লিটন।
প্রচার শুরুর পরদিন গত ১৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুরের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানের সমর্থকরা। এ নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে দুই পক্ষ।
থানায় মজিবের অনুসারীদের মামলা নেওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।
পরে থানার ওসিকে ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দেওয়ার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুরের আচরণ সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান মোস্তাফিজুর। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।এ নিয়ে মারমুখী আচরণ ধাক্কাধাক্কি ও সৃস্ট পরিস্থিতির কারণে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা বাদ প্রতিবাদ হয়।
পরে চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর এ মামলা দায়ের করা হয়।এর পর আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন এমপি মোস্তাফিজ।
বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনায় আলোচিত মোস্তাফিজুর। কয়েক বছর আগে এক নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার দিন সাংবাদিককে হয়রানির পর ওসিকে হুমকি দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন এই সংসদ সদস্য।
পরে বাঁশখালীর ওসি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোস্তাফিজুরের রহমানের মোবাইলে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
দু’জনের ফোনালাপের এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর ‘তার লোকজনের উপর হাত দেওয়া হলে, হাত কেটে ফেলা হবে’ বলে হুমকি দেন।
ফোনালাপের অডিও রেকর্ডে কথাবার্তার একপর্যায়ে এমপিকে বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নে তার লোককে ধরতে পুলিশ কেন পাঠানো হলো তা জানতে চেয়ে এরকম হুমকি দিতে শোনা যায়।
টেলিফোনে মোস্তাফিজুর রহমান ওসিকে বলেন, “আমার কোনো লোকজনের ওপর যদি হাত দেয়… হাত কেটে ফেলবো কিন্তু এটা বলে দিলাম।”
তার বাড়িতে কেনো পুলিশ পাঠানো হয়েছে তাও ওসির কাছে জানতে চান নৌকার প্রার্থী হওয়া মোস্তাফিজুর।
এছাড়া চাম্বলের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকেও কিছু না করার কথা বলতে শোনা যায় তাকে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ঘটনা হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান।
পর্যবেক্ষকদের মতে একরোখা ও বেপরোয়া ধরণের আচরণে তলে তলে এমপি মোস্তাফিজের পায়ের তলার মাটি যে সরে যাচ্ছিল তা তিনি হয়তো বুঝতে পারেন নি,না হয় বুঝেও পাত্তা দেন নি।তিন যদি বুজতে পারতেন অপরাধ করে অনুকম্পা লাভের জায়গা নির্বাচনের মাঠে নেই, তবে তিনি সংযত হতেন।তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ব্যাপারে সজাগ থাকতেন।তাঁর বিরুদ্ধে থাকা বহুপক্ষের ক্ষোভ- অভিমানকে প্রশমিত করতেন।কোন একটা ছোট শক্তিকেও হারাতে চাইতেন না।প্রকৃত অবস্থা না বুঝে জেতানোর উপাদানগুলোকে ছোট করে দেখতেন না।দীর্ঘ সময়ে তার অনেক না করতে পারার জায়গায় যে-সব প্রতিপক্ষ ক্ষেত্র তৈরি করে আসছিলেন সেসব অনুধাবন করে নির্বাচন পর্যন্ত শক্তির পরিবর্তে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এগোতেন।কিন্তু তিনি থাকলেন ওভার কনফিডেন্সের ক্ষতিকর জায়গায়।শেষ পর্যন্ত হারলেন, যেতে হলো অনিবার্য গন্তব্যের দিকে, আলোচিত এমপি মোস্তাফিজকে।