বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

অসময়ে হায় হায় কাছের মানুষ সরে যায়


বাঁশখালীতে ভোটের হিসাব- নিকাশ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে পরিস্থিতি, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী পরিবারের দুই সদস্য আব্দুল্লাহ কবীর লিটন ও মুজিবুর রহমান সিআইপিকে ঘিরে। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মাঠ কর্মী ও সমর্থকরা দিন দিন জয়ের ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠলেও বিধি ভঙ্গের মামলা, দীর্ঘদিন সাথে থাকা চেয়ারম্যানদের ডিগবাজীসগ নানা কারণে অনেকটা কোনঠাসা মোস্তাফিজ।অভিযোগও অনেকের মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে। তিনি অসহায় দরিদ্রদের প্রতি উদাসীন ছিলেন।অনেক আগে থেকে ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে থাকা প্রার্থীদের কেউ কেউ তলে তলে যেমন জনপ্রিয় হচ্ছিলেন তেমনি নানা ঘটনা ঘটিয়ে  জনপ্রিয়তায় সংকুচিত হচ্ছিলেন মোস্তাফিজ। এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে বেশির ভাগের এমন অভিমত পাওয়া গেছে।

হতদরিদ্র অনেক মানুষ আছেন বাঁশখালীতে যারা “ঈদে চাঁদে”দুর্দিন- দুর্বিপাকে অপেক্ষা করেন কেউ একজনের জন্য। চায় কেউ আসুক তাদের পাশে চাল- ডাল,চনা সেমাই,শীতবস্ত্র, ইদবস্ত্র নিয়ে। আসুক এমপি সাহেব,চেয়ারম্যান সাহেব।নয়তো জনদরদী অন্য কেউ।তাদের এ চাওয়া পূর্ণ করেছেন অন্য কেউ যারা এখন সুফল নিচ্ছেন।

নগরের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার এক ভবনে নিরাপত্তা রক্ষীর দায়িত্ব পালন করেন আজমত।জানতে চাওয়া হলো তার কাছে বাঁশখালীর অবস্থা কি? দুই মিনিটে যা বলল তাতে এমপির পক্ষে কোন কথাই নেই।৬ সদস্যের পরিবার তার- অভাব অনটন।তার ভাষায় অভাব অনটনে, বিপদে আপদে সাধারণ মানুষ অভিভাবক হিসেবে এমপিকে পায়নি। বাকলিয়ায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে জামাল হোসেন, হালিয়া পাড়ায় বাড়ি।তারও একই অভিমত ” আগে তো খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে” তারপর উন্নয়ন। এমপি মানে তো  অভিভাবক।আমাদের এমপি দলীয় সমর্থকদের অভিভাবক। তিনি কি অভিভাবকের ভুমিকায় ছিলেন- পাল্টা প্রশ্ন তার।
চট্টগ্রামে পড়াশোনা করছে বাহারছড়ার তাজুল,তার মতে বাশখালীর যোগাযোগ, পর্যটন  চরম অবহেলার শিকার।এখন যদিও ভোট মৌসুমে প্রতিশ্রুতির শেষ নেই।এমপি কেবল মারধোর, হুমকি ধামকির জন্য আলোচিত।এসব তাঁর জন্য ভাবমূর্তি সংকট তৈরি করেছে।তিনি কেবল নেতাই হয়েছেন,জনপ্রতিনিধি হতে পেরেছেন কম।

এমপিকে নিয়ে এমন নেতিবাচক কথা বার্তার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজ থেকে ফসকে গিয়ে ছবি দিয়ে লিখলেন “৩১ বছর পর নতু গন্তব্যে যাত্রা শুরু করলাম ইনশাল্লাহ”।  সাথে আব্দুল্লাহ কবীর লিটনের লেকজন।তিনি  এমপির আশীর্বাদপুস্ট  কাথরিয়ার চেয়ারম্যান। একইভাবে চাম্বলের চেয়ারম্যানকেও দেখা গেল গন্তব্য পাল্টানোর খেলায়।তিনিও এমপির আশীর্বাদপুষ্ঠ।এবং তাঁকেও দেখা গেল সদলবলে নতুন জায়গায়।
ক্ষোভে এমপি মোস্তাফিজের স্নেহধন্য একজন স্ট্যাটাস দিলেন “সব বেঈমান বাঁশখালীর আওয়ামীলীগে”।
বাঁশখালীর নির্বাচনী মাঠে থাকা পর্যবেক্ষক, মিডিয়া কর্মীদের মতে অনেকটা বেকায়দায় থাকা নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে ছেড়ে তার পাশে থাকা অনেকেই সরে যেতেই পারে।কিন্তু এরা সবাই এমপির সুসময়ের বন্ধু। অনেকর প্রশ্ন তারা মোস্তাফিজের আরো খারাপ সময় আঁচ করতে পেরে কি জায়গা বদল করে নিলেন?যদি তা-ই হয় তাহলে  “অসময়ে হায় হায়”-সেই সত্য মেনে নিয়েই কি নৌকার প্রার্থীকে  ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন ভাগ্য পরীক্ষার খেলায় খেলে যেতে হব? নাকি তার আছে অদেখা কোন চমক? তার প্রবল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর রয়েছে দুরকম সামর্থ্য ও সমর্থন। বাঁশখালীবাসির কাছেও তা অজানা নয়।বিশ্লেষকদের মতে, সাগর নদী পরিবেষ্টিত বাঁশখালীতে নৌকার ঐতিহ্য অনেক পুরনো।কিন্তু এবারের নির্বাচনে বাঁশখালীসহ কোন কোন আসনে নৌকার প্রার্থীর জন্য বয়ে এনেছে কঠিন সময়।দুঃসময়ে সরে যাচ্ছে কাছের অনেকেই।এই সরে যাওয়া মানুষগুলোকে রাজনীতি মনে রাখে না,কিন্তু মানুষ চিনে রাখে।তাদেরকে খারাপ ভাষায় “পল্টিবাজ” বলে। কর্মী সমর্থকদের  অনেকর ধারণা,  দুঃসময় সামাল দিয়ে নৌকার মাঝি হয়তো কোন “চমক” দেখাবেন নয়তো  ঈগল- ট্রাকের গতি দেখবেন অসহায় দর্শকের মতো।

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর