বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব

থমকে আছে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম

নয়ন চৌধুরী, উত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

দেশের তৃতীয় আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার অবস্থিত চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। কৃত্রিম প্রজনন ও ভ্রুণ স্থানান্তর (এআইইটি) প্রকল্পের মাধ্যমে হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৯ একর জমির উপর স্থাপিত হয়েছে বিশালাকার এ প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয়।

জানা যায়, দেশিয় রেড কাউ (আরসিসি) জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ভালো মানের ষাঁড় হতে সিমেন উৎপাদন করে তৃণমূল পর্যায়ে খামারিদের দেশি গাভীকে প্রজনন করানোর উদ্দেশ্য হাটহাজারীতে স্থাপিত হয়েছে তৃতীয় আঞ্চলিক কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাগার কাম বুল স্টেশন। যা চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম। মূলত প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশিয় জাত ধরে রাখতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে রয়েছে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য আধুনিক কার্যালয়। রয়েছে সিমেন সংগ্রহের পর যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করার ল্যাবসহ নানা যন্ত্রপাতি। বাছাইকৃত ষাঁড় রক্ষণাবেক্ষণে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল বিশাল দশটি শেড। প্রতি শেডে থাকবে দশটি করে ষাঁড়। সিমেন উৎপাদন বা সংগ্রহের যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা হবে এসব শেডে।

জাতীয় প্রজনন নীতিমালা অনুসারে দেশিয় জাতের (আরসিসি) গাভীকে একই জাতের ষাঁড়ের বীজ দিয়ে প্রজনন করানো বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ প্রকল্পে। তাই প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে যাছাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে বাছাইকৃত রেড কাউ (আরসিসি) ষাঁড় নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, দেশিয় জাতের আরসিসি জাতের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য স্থাপন করা প্রতিষ্ঠানে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পর পর অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যাছাই-বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে সরকারি দুগ্ধ ও গবাদিজাত উন্নয়ন খামার হতে নয়টি ষাঁড় নেয়া হয়েছে। বাছাইকৃত ষাঁড়দের নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে। খালি জায়গায় ষাঁড়ের পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহে চাষ করা হচ্ছে উন্নতমানের ঘাস, ভুট্টা। একটি শেডে দেখা গেছে নয়টি ষাঁড় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। তাদের দেখভাল করছেন কয়েকজন কর্মচারী। বাকি নয়টি শেড খালি পড়ে আছে। শেডের সন্নিকটে আছে খড় রাখার গুদাম।

এদিকে অফিস ঘুরে দেখা যায়, সাজানো গোছানো পৃথক পৃথক কক্ষ। তবে চেয়ার খালি পড়ে আছে। ল্যাব কক্ষে বাক্সবন্দি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। জানা গেছে, বাক্সবন্দি অন্তত দুই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আনা হয়েছে। তবে এসব যন্ত্রপাতি কার্যক্রম পরিচালনার দ্বিতীয় পর্যায়ের। প্রথম পর্যায়ের যেসব যন্ত্রপাতি লাগবে তা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পার হলেও এখনো আসেনি। ফলে যে উদ্দেশ্যে এ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় তা থমকে আছে। প্রাথমিক যন্ত্রপাতি বলতে ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহে যে সব যন্ত্রপাতি লাগবে সেগুলো কে বোঝানো হয়েছে। প্রথমে সিমেন সংগ্রহ করতে হবে তারপর সিমেন্সের গুণগত মান পরীক্ষা, ধারণ ক্ষমতা, পরিমাণ, পেকেটজাত প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। সিমেন সংগ্রহের যন্ত্রপাতি না থাকায় অন্যান্য কিছু থাকলেও কার্যক্রম থমকে আছে। তাই প্রকল্প পুরোদমে চালু করতে প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিকল্প নাই। সেসব যন্ত্রপাতি প্রেরণে ইতিমধ্যে চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছেন বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাবিল ফারাবি। তবে কবে নাগাদ আসতে পারে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে ১ জন উপ-পরিচালক, ১ জন সায়েন্টিফিক অফিসার, ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ১ জন অফিস সহকারীর পদ থাকলেও সবগুলি পদ শূন্য।
ইতোমধ্যে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৫ জনকে কর্মস্থলে পাওয়া গেলেও বাকি ৬ জন রয়েছেন ডেপুটিশনে। নিয়োগের পর কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও খুব দ্রুত উচ্চমহলে সুপারিশের মধ্য দিয়ে যে যার পছন্দমত কর্মস্থলে চলে যান। কারণ হিসেবে জানা যায়, যে বেতন ভাতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয় ১ জন ছাড়া তারা কেউ হাটহাজারী উপজেলা কিংবা চট্টগ্রাম জেলার কেউ নন। দূরের জেলা থেকে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে সে বেতনে তাদের নিজের ব্যয়ভার মিটিয়ে যাতায়াত খরচ এবং পরিবার চালানো খুবই কষ্টকর। যদি হাটহাজারী বা পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফটিকছড়ি কিংবা রাউজান এলাকা থেকে নিয়োগ দেয়া হত তাহলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হত, অপরদিকে কর্মস্থলে প্রতিদিন উপস্থিত থাকতেন। দূর-দূরান্তের অজুহাত দেখিয়ে ডেপুটেশনে যেতে হতো না।
নিয়োগ পাওয়া ১১ জন কর্মচারীর মধ্যে ১ জন চট্টগ্রামের কাউখালী উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে, ২৫/৩০ জনের জনবলের প্রয়োজন হবে। অফিস সহকারী, গাড়ি চালক, দাড়োয়ানসহ বিভিন্ন পদের লোক নিয়োগ দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে স্থানীয়দের মূল্যায়ন না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলেন, অন্যান্য উপজেলা কিংবা জেলায় কোনো প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দিতে স্থানীয়দের মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু হাটহাজারীতে এর ব্যতিক্রম। উপজেলায় শত শত শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতানুযায়ী নিয়োগ দিলে বেকারের সংখ্যা কমে যাবে। বর্তমানে ছবি তোলার নাম দিয়ে অনেকে প্রধান ফটক দিয়ে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দিতে গেলে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। যদি স্থানীয় জনবল থাকে তাহলে এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে কৃত্রিম প্রজনন প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহজামান খাঁন তুহিন জানান, প্রাথমিক যন্ত্রপাতির বিষয়ে প্রকল্পের সাথে যারা জড়িত উনারাই বলতে পারবেন। সামনে নতুন করে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। পূর্বে স্থানীয়দের কেন বাদ দিল বা কিভাবে কী করল সেটা জানা নেই, তবে এবার অবশ্যই স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর