সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৪ দফা জানাজাতেই মানুষের ঢল, হলেন ভালোবাসায় সিক্ত

নিজ গ্রামেই শায়িত আইনজীবী সাইফুল

বিশেষ প্রতিনিধি

চারদফা জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামেই শায়িত হলেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। বুধবার (২৭ নভেম্বর) আসরের নামাজের পর চুনতি ফারাঙ্গা হযরত আব্দুল লতিফ শাহ (রা.) এর মাজার সংলগ্ন মসজিদ মাঠে তার চতুর্থ দফা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোহাগাড়ার চুনতিতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা এবং সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

চতুর্থ দফা জানাজার আগে পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন। এ সময় তিনি ছেলে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আদালত ভবন চত্বরে। সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার শাহপীর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দেখা যায়, ৩য় দফা জানাজা পড়তে দুপুর ২টার আগেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সদরের কর্নেল (অব.) অলি আহমদ স্টেডিয়ামে। অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো মাঠ কানায়-কানায় ভরে যায়। দুপুর ২টার পরে পুলিশ পাহারায় তার মরদেহ মাঠে পৌঁছুলে নেমে আসে শোকের ছায়া। এসময় কাঁদতে দেখা যায় মুসল্লিদের।

দুপুর আড়াইটায় বটতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মওলানা ড. মাহমুদুল হক ওসমানীর ইমামতিতে ৩য় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাইফুলের মরদেহ গ্রামের নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি চুনতিতে। সেখান গিয়ে দেখা মেলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। সাইফুলের পিতা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম ও স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনসহ স্বজনদের বারবার মূর্ছা যেতে দেখা যায়।

স্বজনরা জানান, নিহত সাইফুলের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী আবারো সন্তান-সম্ভবা। সবাই মেয়ে তাজকিয়াকে আদর করছেন, মেয়েটিও অপলক চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। হয়ত সে বুঝতেই পারছে না বাবাকে চিরতরে হারিয়েছে। এই দৃশ্য দেখে কোনো ভাবেই যেন অশ্রু আটকানো যাচ্ছিল না।
এরপর বিকাল পৌনে ৫টায় ওই এলাকার ফারাঙ্গা পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহের (রা.) মাজার মাঠ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে সন্ধ্যায় সাইফুলের কবর জিয়ারত করেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহজাহান চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির সদস্য এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। পরে তারা সাইফুলের বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

প্রসঙ্গত, সাইফুল ইসলাম আলিফ পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তৃতীয়। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী। লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ২০১৮ সাল থেকে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তার অনুসারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আদালতপাড়া থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আইনজীবীরা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসকন সমর্থকদের দায়ী করেছেন।

এনইউ/জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর