অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।বিস্ময়কর দামে হতবাক ক্রেতারা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে যায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। শনিবার সকালে খাতুনগঞ্জে দেখা যায়, অধিকাংশ আড়তের সামনে ‘পেঁয়াজ নেই’ লেখা কাগজ ঝুলছে। আড়ত এবং পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঝোলানো তালিকায় পেঁয়াজের দাম লেখা নেই।
শনিবার সকাল থেকে নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজ কিনতে ভিড় করেন খাতুনগঞ্জে। কিন্তু আড়তের পর আড়ত, পাইকারি দোকানের পর দোকান ঘুরেও কিনতে পারছিলেন না পেঁয়াজ। ‘গতকালও (শুক্রবার) এখানে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আজ (শনিবার) ১০-১৫টি দোকানে গেলাম, কোথাও ২১০ টাকা, কোথাও ২২০ টাকা। আড়তে পেঁয়াজ নেই। ভারত মাত্র শুক্রবার থেকে রফতানি বন্ধ করল। একদিনে এত পেঁয়াজ গেল কোথায় ? এটা আড়তদার আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি।’
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন ‘পেঁয়াজ থাকলে সেগুলো তো আর আড়তদারেরা খেয়ে ফেলেনি। পেঁয়াজ তো লুকিয়ে রাখারও জিনিস নয়। ঘটনা হচ্ছে, গত ২০-২৫ দিন ধরে খাতুনগঞ্জে ভারতের পেঁয়াজ কম এসেছে। আমরা দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছিলাম না।’‘এজন্য আড়তে ভারতের পেঁয়াজ বেশি ছিল না। যা ছিল, সেগুলো রফতানি বন্ধের ঘোষণার পর গতকালই (শুক্রবার) প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। আর যেগুলো ছিল, সেগুলো আজ (শনিবার) কেউ ১৫০ টাকা, কেউ ২০০ টাকায় বিক্রি করছিল।’শত, শত খুচরা বিক্রেতা যখন খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ কেনার আশায় ঘুরছিলেন, তখনই দুপুর দেড়টার দিকে সেখানে পৌঁছান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম।
অভিযানে যাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা প্রথমে বিভিন্ন আড়তে ঘুরে ঘুরে পেঁয়াজ উধাও হয়ে যাবার চিত্র দেখেন। কয়েকটি আড়ত ও প্রতিষ্ঠানে ২১০ থেকে ২২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রির প্রমাণও পান।হঠাৎ পেঁয়াজ উধাও এবং দাম বেড়ে যাবার কারণ জানতে চাইলে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়ান আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতাদের কেউ কেউ। কিন্তু দাম বেড়ে যাবার যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে ব্যর্থ হন বিক্রেতারা। কেউ কেউ আমদানিকারকের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন।
এ অবস্থায় তিনটি আড়তকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর যেসব আড়তে পেঁয়াজ ছিল, সেগুলো খুচরা ক্রেতাদের কাছে ১২০ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। তখন শত, শত খুচরা বিক্রেতার লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা, তা-ই করছেন। এখন ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন কীভাবে লাভ করবেন পাইকরি ব্যবসায়ীরা।ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ হঠাৎ করে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়ে খাতুনগঞ্জে এসেছি। এখানে বাজার তদারক করে দেখলাম, আড়তে পেঁয়াজের পরিমাণ খুব কম। কেউ কেউ ৮-১০ বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে বসে আছে। সেগুলো ২০০ টাকা কিংবা তার চেয়ে বেশি দাম চাচ্ছে।’‘অথচ একই পেঁয়াজ একদিন আগে ১০০ টাকা কম দামে বিক্রি করেছে। এজন্য আমরা তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছি এবং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আড়ত থেকে ১২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য করেছি।
এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।’
আড়তদারদের মতে ,‘এভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমাদের কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হলো। কিন্তু এতে মানুষের কি কোনো লাভ হবে? খুচরা বিক্রেতারা ঠিকই ২৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করবে। উনারা কি গ্রামগঞ্জে, খুচরা দোকানে গিয়ে তদারক করতে পারবেন? বাস্তবে এভাবে পেঁয়াজের বাজার ঠিক করা যাবে না।’‘দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে, যদিও এখনই মণপ্রতি ৬ হাজার টাকা দাম চাচ্ছে। আদৌ সেটা এলে বাজারে দাম কমবে কি না জানি না। তবে ভারত যদি রফতানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে, তাহলে দাম কমবে। অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে এই মুহূর্তে বাজার স্থিতিশীল করা যাবে না।’
সামাজিক মাধ্যমও সরব পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে।অনেকেই ক্ষুব্ধ।লিখেছেন, পিঁয়াজের দাম বেড়েছে এটা তো নতুন কোন সমস্যা নয় অতীতে ও অনেকবার পিঁয়াজের দাম তিনশো টাকা পর্যন্ত উঠেছিল মূল্য বৃদ্ধি শুধু পিঁয়াজের নয় অনেক কিছুর ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রব্য মূল্যর উর্ধ্ব গতি নিয়ে খোদ উপরওয়ালা যখন নিরবে থাকেন সেখানে সাধারণ মানুষের হৈচৈ আফসোস আর হা-হুতাশ করে কি হবে সবই মেনে নিতে হবে, না মেনে উপায় নেই কারণ এসবের কোন প্রতিকার হয়না যাঁরা প্রতিকার করবেন তাদের মুখের বুলি আর বিভিন্ন অজুহাতে সবই ভেস্তে যায় আর মাঝখান থেকে ফায়দা ভোগ করে যাচ্ছে কিছু সুযোগ সন্ধানী সুবিধা ভোগীরা। যখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় তখন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের কোন সীমা থাকে না। অতি সাধারণ মানুষের অভাব অনটনের সংসারে যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের অভাবের তাড়নায় অভাবের সংসারে ঝগড়া ফ্যাসাদ সংসারে লেগেই থাকে।