শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি, ধৈর্য ধরার আহ্বান জামায়াতের

বন্যা মোকাবেলাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপি ও জামায়াত সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে ভিন্ন অবস্হান থেকে কথা বলা শুরু করেছেন। বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যপ চাইলেও জামায়াত স্বৈরাচারের প্রতাত্নাদের অপসারন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণের পক্ষে। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এই মুহুর্তে বন্যা মোকাবেলাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

সম্প্রতি বিএনপি নির্বাচনের জন্য তত্বাবধায়ক সরকরকে কোন সময় বেধে দেবেনা বললেও গতকাল ঢাকায় এক আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব এক আলোচনা সভায় বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।

আমরা সবাই মনে করি, এ অন্তর্বর্তী সরকার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা অতি দ্রুত জনগণের সামনে কী করতে চান, সেটা উপস্থাপন করবেন। আমরা আশা করি, একটা রোডম্যাপের মাধ্যমে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

শনিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশের সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। আমরা নির্বাচনের ওপর অনেক জোর দিতে চাই।

তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি রাষ্ট্র সংস্কার করে দেবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ সংস্কার করতে হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে যারা রয়েছে তারা সবাই যোগ্য ব্যক্তি।

অন্যদিকে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের অপসারণ করা না পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে সাতক্ষীরা শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে জেলা জামায়াত আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও শহীদ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের যে প্রেতাত্মারা বসে আছে তাদেরকে অপসারণ না করা পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত দেশ পুনর্গঠন না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই।

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষের ওপর গুম-খুন, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার। দেশ ও জনপদকে মুক্ত করতে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে গেলেন, তারা আমাদের জাতীয় বীর।

এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব শহীদদের বীর হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। জামায়াতের পক্ষ হয়ে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খুনিদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা গণহত্যা পরিচালনা করেছেন তাদের বিচার এদেশের মাটিতে হবে।

ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচারের কার্যক্রম শুরু করেছে, আমরা তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আন্তর্জাতিক আদালতেও ইতোমধ্যেই গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ তার সব দোসরদের নামে মামলা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জুলুম নির্যাতনের পরও জামায়াতের নেতারা ফাঁসির দড়িতে চুম্বন করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের কাছে আপস করেননি, অথচ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

স্বৈরাচারের লোকজন হিন্দু ভাইদের ব্যবহার করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু দেশের ছাত্রজনতা সেটি নস্যাৎ করে দিয়েছে। জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা হিন্দু ভাইদের মন্দির, জমি জায়গা পাহারা দিয়ে শান্তির বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করেছেন।

কিন্তু বিগত দিনে আওয়ামী লীগের লোকজনই হিন্দু ভাইদের ঘরবাড়ি, জায়গা জমি দখল করে লুটপাট ও মন্দির ভাঙচুর নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মুফতি রবিউল বাশারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাদ্দেস আব্দুল খালেক, খুলনা মহানগরের সাবেক আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, খুলনা অঞ্চলের সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, খুলনা জেলা আমির ইমরান হুসাইন, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি শেখ নুরুল হুদা, জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইমামুল ইসলাম, শহর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান।

এ সময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাতক্ষীরার শহীদ আসিফসহ চার শহীদ পরিবারের মাঝে ১ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছেন।

এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংগঠন ও দেশবাসীকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করেছেন তিনি।

শনিবার বিকালে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রধান উপদেষ্টা সবার প্রতি এই অনুরোধ করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় হওয়া এই বৈঠকে দেশ-বিদেশের ৪৪টি এনজিওর কর্তা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের অব্যশই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

মুহাম্মদ ইউনূস বন্যা মোকাবেলায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, “বন্যা মোকাবিলায় সরকার, এনজিওসহ যারা যারা কাজ করছে, তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে জেলা পর্যায়েও বন্যা মোকাবেলার কাজ সমন্বিতভাবে করতে হবে।”

“প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কোটি কোটি মানুষ বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের মহৎ উৎসাহের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে,” সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন শফিকুল।

চলমান বন্যা পরিস্থিতি ১১ জেলাতেই সীমাবদ্ধ আছে বলে তথ্য দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তবে বেড়েছে বানভাসির সংখ্যা এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮।

উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে ভাসছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।

বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আরও বেশি কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করে বন্যাপরবর্তী খাদ্য ও স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান রাখেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “তরুণরা আমাদের জন্য মহৎ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দ্রুত এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।”

তিনি আরও বলেছেন, কেবল বন্যা মোকাবেলায় গুরুত্ব দিলে হবে না, কীভাবে দেশকে বন্যামুক্ত রাখা যায় সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।

বৈঠকে অংশ নেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

তার ভাষ্য- প্রধান উপদেষ্টা মনে করছেন মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানোর জন্য এনজিওগুলো একটি বড় শক্তি।

“সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় আনার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে। দেখা যাচ্ছে কোথাও বেশি সাহায্য যাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছে না। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে না করে সবাই মিলে কাজ করতে পারি।

এমএ/ জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর