শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিন উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী, ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

অবিরাম বৃষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই উপজেলায় ২০ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নদী ভাঙন ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে ফটিকছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের কারণে পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানান উপজেলার পৌরসভা ছাড়া বাকি সব ইউনিয়ন পানির নিচে। অন্তত দেড় লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যা দুর্গতদের আশ্রয় দিতে উপজেলায় ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে দুই হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রতিনিধি আরো জানান, সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বাগানবাজার এলাকায় বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ছে। এর সঙ্গে টানা বর্ষণের কারণে পানি প্রবাহ বেড়েই চলেছে।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ির বানের পানিও নেমে আসছে, যার কারণে হালদা নদীর পানি বেড়েছে। তাতে করে তলিয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের বিভিন্ন অংশ, পাইন্দং, সুন্দরপুর, হারুয়ালছড়ি, ভূজপুর, নারায়ান হাট, দাঁতমারা, বাগান বাজার, সমিতির হাট, ধর্মপুর, নানুপুর, লেলাং, রোসাংগিরিসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন।

পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব ইউনিয়নের আবাদি জমি, মাছের ঘেরসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ন হাট পয়েন্টে হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা বুধবার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

এছাড়া ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার তিন মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত তিন দিন ধরে হালদা নদীর বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বুধবার রাত থেকে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে আবার পানি বাড়ছে।

অতিরিক্ত পানির কারণে ফটিকছড়ি অংশে হালদা নদীর ২২টি পয়েন্টে নদী ভাঙন হয়েছে। পাশাপাশি অনেক স্থানে বাঁধের উপরে পানি প্রবেশ করছে।

সিনথেটিক ব্যাগ বসিয়ে পৌরসভা এলাকায় পানি প্রবেশ কিছুটা কমিয়েছি, তবে ইউনিয়নগুলোতে পানি প্রবেশ করছে।”

ফটিকছড়ি কৃষি অফিসের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও বন্যায় উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৮০ হেক্টর আমন ধানের চারা, ৫০ হেক্টর বীজ তলা, ৮৫০ হেক্টর আউশ ও ৩৫০ হেক্টর শরৎকালীন সবজির জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিকে চাষাবাদ হয়; এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জমি পানির নিচে। সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নে।

এদিকে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফটিকছড়ি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের তিন হাজার ১৭৫ পরিবার, মীরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১২ হাজার ও সীতাকুণ্ডের ছয়টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় মোট ৫০ টন চাল ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় ২৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ১২৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এমএ/ জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর