আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল এলাকায় ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ থামার পর নতুন এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সোমবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে কার্জন হল সংলগ্ন সড়কের ফুটপাতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আন্দোলনকারীরা এই কর্মসূচি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হতে চাইলে দোয়েল চত্বরে থাকা বিপুলসংখ্যক পুলিশ তাঁদের সেখানে যেতে বাধা দেয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আগামীকাল (আজ) মঙ্গলবার বেলা তিনটায় আমরা সারা দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করব। আমাদের বৃহত্তর গণ–আন্দোলনে যেতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীরা যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য হলে হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান নাহিদ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আজ অন্যতম মর্মান্তিক দিন। পরিকল্পিতভাবে বহিরাগত ও অছাত্রদের ক্যাম্পাসে এনে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০-২৫ জনের অবস্থা গুরুতর। হামলা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নীরব ভূমিকা দেখা গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এই প্রক্টরকে চান না।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন সহিংসভাবে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করছিল আগে থেকেই। কিন্তু এই আন্দোলন সহিংসভাবে দমন করা যাবে না।
নাহিদের বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা যে যাঁর মতো ফিরে যান।
সোমবার জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় বেশ কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ঢাকা খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদ হয়েছে বরিশাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে।
ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের হামলায় কুমিল্লা রাজশাহী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পাঁচটার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলে সোয়া ৭টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
প্রায় আধাঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে এক শিক্ষক ও চারজন ছাত্রীসহ অন্তত ১০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আহত শিক্ষকের নাম আওলাদ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক।
এছাড়াও এই হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতুসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যা যা হলো
সোমবার সকাল থেকে উত্তপ্ত ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এসময় কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
কোটা আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি পালন করতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহরের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিকে ধরে নিয়ে যায়।
ছাত্রলীগ রাফিকে ট্রেন স্টেশন থেকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। প্রক্টরের উপস্থিতিতে তার ওপর হামলা চালায়।
তখন আন্দোলনরত ছাত্রীদের একটা অংশ প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজন ছাত্রীকে ধাওয়া দেয়।
প্রতিবাদে কোটা আন্দোলনকারীদের ছাত্রদের একটা অংশ ক্যাম্পাসে মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানান আমাদের চবি প্রতিনিধি।
তালাত রাফি মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কোটা বাতিলের দাবিতে তার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একজন অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীর সমালোচনা করেছিলেন।
এদিকে বিকেলে চট্টগ্রামের ষোলশহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে।
এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কুয়েট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সরব ছিল খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পাঁচটার দিকে পরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (কুয়েট) খুলনার বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবরোধ করেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হামি চত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তাঁরা।
পরে ওই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটসহ শহরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক দিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস থাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তাই খুলনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছাত্রলীগের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
এর কিছুক্ষণ পরে ঢাকা-খুলনা-মোংলা সড়কও এক ঘণ্টার মতো অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ আখ্যা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা পৌনে ১টা থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই কর্মসূচির কিছুক্ষণ পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের অন্তত চারজন আহত হয়েছে।হামলার পর কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর ওপর সোমবার সন্ধ্যায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনায় প্রায় ঘণ্টাখানেক ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কোটা আন্দোলনকারীরা।
এমএ/ জই