কক্সবাজার – চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী বিশেষ ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার ( ৩০ মে) থেকে কক্সবাজার – চট্টগ্রাম রুটে বিশেষ ট্রেন আর চলাচল করবেনা। ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকটের কারণে রেল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২০২৩ সালের পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে রেল যাতায়াত শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন এ রুটে চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে দাবি ওঠে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে রেল চালু করার।
এর প্রেক্ষিতে গত ঈদুল ফিতরের সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ১৫ দিনের জন্য এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করে। পরে যাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে সেটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন করে সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট দেখিয়ে ৩০ মে থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানি।
তিনি জানান,চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বিশেষ ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ষোলশহর, জানালিহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে এবং যাত্রী পরিবহণ করে। মোট ১১টি বগিতে আসন রয়েছে ৬০০ এর মতো। প্রতিদিনই যাত্রীতে ঠাসা থাকে ট্রেন। যাত্রীদের চাহিদা রয়েছে বেশি।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকটের কথা জানানো হয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন বুধবার পর্যন্ত চলবে। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বাতিল করা হলো।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম বলেন, পূর্বাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এটা বন্ধ রাখা হচ্ছে। মূলত ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকটের কারণ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত।
তবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে যাত্রীরা৷
ফাহমিদা নবী নামে এক যাত্রী বলেন, আমরা চায় না চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হোক। কারণ দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ট্রেন চলবে। বিশেষ ট্রেন চলাচল করায় আমরা বেশ উপকৃত হয়েছি। চট্টগ্রাম – কক্সবাজার রুটে বাস ভাড়া যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেশি হচ্ছে। তার মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বাস ভাড়া আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে।
যাত্রী সেলিম উদ্দিন বলেন, ট্রেনের মাধ্যমে সহজ এবং নিরাপদ ভ্রমণ করতে চায়। কিন্তু হুট করে বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ করে দিবে এটা মেনে নিতে পারছি না। এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হলে পর্যটক ও স্থানীয়দের ভোগান্তি পোহাতে হবে।
মাল্টিপার্টি এডভোকেসি ফোরাম ( এমএএফ) এর সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ বদরী বলেন-
চট্টগ্রাম – কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিলে জনগণ সেটি ভালভাবে নিবেনা। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল এই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল। এখন বিশেষ ট্রেন চালুর পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই এ রুটে প্রতিদিনই ট্রেন চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।
গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত ১০১ কিলোমিটার নতুন রেললাইন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা-কক্সাবাজার আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন এ রুটে চালু করা হয়।
চাটগাঁর চোখ/ এইচডি