কক্সবাজারের উখিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারি ও ডজন মামলার আসামী পুরাতন রোহিঙ্গা আলমগীর। সম্প্রতি বালুখালী সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি মাদকের চালান ছিনতাই করতে গিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন তিনি। কিন্তু মাদকের ঘটনা আড়াল করতে গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছে এই ইয়াবা গডফাদার। পরিকল্পিত এ মাদক ছিনতাইয়ের সময় দু’গ্রুপের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে মামলার আসামী করা হয়েছে পালংখালীর ১নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার সাধারণ ১০জন মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টার দিকে বালুখালী পানবাজার স্টেশনে মিথ্যা, মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে এক প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, এলাকার সর্বস্তরের অন্তত ৫শতাধিক মানুষ।
এ সময় তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড, হত্যা, মাদক পাচার, জমি দখল, মিথ্যা মামলার হুমকি ও পুরাতন রোহিঙ্গা আলমগীরদের নানান ধরনের অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে কয়েকজনের আর্তনাদে গোটা সমাবেশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর হয়ে স্থানীয় আবদুল খালেক বক্তব্যে বলেন, মাদক লুঠের সময় রোহিঙ্গা চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে পেশাদার মাদক সন্ত্রাসী ও ডজন মামলার আসামী আলমগীর গুরুত্বর আহত হয়েছেন বলে দাবী করেন। তিনি আরো বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বালুখালী সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প জিরু পয়েন্ট এলাকা দিয়ে একটি ইয়াবার চালন দেশে ঢুকতেছে বলে খবর পান পুরাতন রোহিঙ্গা ইয়াবা ডন আলমগীর ও তার প্রধান সহযোগী নুরুল আজাদ আশিক। ওই মাদকের চালানটি ছিনতাই করতে গিয়ে মাদক আমদানিকারক রোহিঙ্গাদের সাথে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আলমগীর। পরদিন সকালে এ ঘটনা আমরা লোকের মূখে শুনতে পাই। কিন্তু মাদক ছিনতাইয়ের সংঘর্ষকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে আলমগীর এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে এলাকার সাধারণ মানুষকে আসামী করে গত ২৭ জানুয়ারি থানায় একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছেন তার স্ত্রী রুমা আক্তার। স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আলম বলেন, এর আগেও তার অবৈধ কর্মকান্ডে বাঁধা দেওয়ায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা ও হত্যা হুমকি দেন এই বার্মায়া আলমগীর। তারই ধারাবাহিকতায় আমিও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলার আসামী হলাম। স্থানীয় সংবাদকর্মী বলেন, তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করায় তারা প্রাণ নাশের হুকমি দেওয়ার কারণে উখিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছিলো স্থানীয় সংবাদকর্মী তারেকুল রহমান। যার নং-৮৭৩। জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশ ও ওই জিডির জের ধরে থাকেও ওই মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে।
আলমগীর দুর্ধর্ষ এক অপরাধী উল্লেখ করে স্থানীয় ভুলু বলেন, আলমগীরের বহুমাত্রিক অপরাধের প্রতিবাদ করেছে বলে এলাকার অনেক মানুষের উপর তার ক্ষোভ রয়েছে। মাদক চোরাকারবি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইয়াবা ছিনতাইকালে আলমগীর হামলার শিকার হয়েছেন। এখন আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন গল্প তৈরি করে পরিবেশন করে এলাকার সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে আমরা এই মামলা প্রত্যাহার চাই। প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানায়, বার্মায়া আলমগীরের নেতৃত্বে মাদক কারবার, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধ সংঘঠিত হয়। প্রায় সময় তার অবৈধ কর্মকান্ডে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এতে সে এলাকাবাসীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ঘটনার দিন মাদক ছিনতাই করতে অপর রোহিঙ্গা চোরাকারবিদের হাতে তিনি আহত হন। এ ঘটনায় মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছেন। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানান, বার্মায়া আলমগীর একজন ভয়ংকর মাদক সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অন্তত ১ ডজন মামলা রয়েছে। যার মধ্যে উখিয়া থানায় অন্তত ৮ টি মামলা রয়েছে। যার নং- উখিয়া থানায় -৬৩/২০, ৩/১৮, ২৬/১৮, ৭০/২২,১৪/২২, ১৩৫/২২, জিআর ৪৫৫/২৩, ৬৪৬/২৩ইং মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. শামিম হোসাইন বলেন, আলমগীর মাদকসহ বহু অপরাধের সাথে জড়িত। জানা গেছে, মাদক সংক্রান্ত একটি ঘটনার জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এলাকার বহু নিরপরাধ মানুষকে ওই মামলায় আসামী করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওসি আরোও বলেন, ঘটনাটি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে আসামী করা হলে তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।