কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকজন নিজ বাড়ীতে ফিরে এসেছেন।
একই দিন সকাল সাড়ে১১টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে পরিস্থিতি আবারো ও অশান্ত হয়ে উঠছে। মিয়ানমারের টেঁকিবুনিয়া অংশ থেকে দেখা যায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী।স্হানীয়রা বলছেন সীমান্তবর্তী মিয়ানমার বিজিপির কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কারা এই আগুন দিয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।তমব্রু গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন
সীমান্তে বিজিপি সদস্যদের বিতাড়িত করে তাদের ঘাঁটিতে আরাবান আর্মির শক্ত অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিজেরদের অবস্থান জানান দিতে রাতের বেলা তারা গুলি বর্ষণ করে, দিনে পাহাড়ে নির্মিত বাংকারে অবস্থান নেয়, যা সীমান্তের এপার থেকেও দেখা যায়। সোমবার ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে সঙ্গে কিছু গুলির শব্দও ভেসে এসেছে।
ঘুমধুমের জলপাই তলী গ্রামের নুর মোহাম্মদ বলেন আজকে গোলাগুলির শব্দ শুনা যায়নি। তাই মাঠে কাজ করতে এসেছি।একই গ্রামের আবুল কালাম বলেছেন দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষের কারনে উখিয়ায় মেয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম।আজ সবাই চলে আসি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির সীমান্ত পরিদর্শনঃ
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আন্জুমান পাড়া সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা।দিকে উখিয়ার পালংখালী ও নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন।এসময় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কোন হুমকি নেই। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই।চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, সীমান্তের চলমান পরিস্থিতিতে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর প্রেক্ষিতে উত্তর ঘুমধুমের দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলা যাবে না।মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের কবে নাগাদ পাঠাবো হবে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, তাদেরকে পাঠানো ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যে সহসাই ফলাফল পাবো বলে আশা করছি।পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ৩৩০ বিজিপি সহ অন্যান্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে এটা চুড়ান্ত হবে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবি দেখেন। আমরা বিজিবিকে সহযোগিতা করছি। অস্ত্রধারী ২৩ জনকে আটক করে মামলা দিয়েছে। অন্য কোন ভাবে অপরাধি অনুপ্রবেশ হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানবীর হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদ ও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শামীম হোসেন সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।অন্যদিকে টেকনাফের নাফ নদীর ওপার থেকে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ। দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাস করা বাংলাদেশিদের। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি বলেন নাফ নদীর ওপার থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
২২ মিয়ানমার নাগরিককে তিনদিনের রিমান্ড:
উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ কালে অস্ত্রসহ ২৩ জন মিয়ানমার নাগরিকদের আটক করেছে।অস্ত্রসহ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী দেশটির ২২নাগরিককে তিনদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে ধরে এদেশে পালিয়ে আসেন।
উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত থেকে অস্ত্রসহ আটকের পর বিজিবির দায়ের করার মামলার শুনানী ছিল সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী)। সেই মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আজ দুপুরে শুনানী শেষে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক শ্রীজ্ঞান তঞ্চ্যাজ্ঞার আদালত ২২ জনের বিরুদ্ধে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একজন অসুস্থ থাকায় তাকে আদালতে আনা হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন- গেল ৯ ফেব্রুয়ারী রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশের পর ৩৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের পালংখালী বিওপির নায়েক সুবেদার মো. শহিদুল ইসলাম উখিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। সে মামলা অধিকতর তদন্ত ও কেনো অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলো তা জানার জন্য আটকদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানী শেষে ২২ জনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একজন অসুস্থ থাকায় তাকে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়নি।
অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) করা মামলায় শনিবার বিকালে গ্রেপ্তার ২৩ জনকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেক আসামীর জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আজ শুনানীর দিন ধার্য্য রেখেছিলেন।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে উখিয়া থানায় বিজিবি বাদী হয়ে মামলাটি করে। অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের ১২টি অস্ত্রও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২৩ জনই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক বলে জানান পুলিশ সুপার।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যের পাশাপাশি অস্ত্রধারী এসব রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছিল। পরে ৯ ফেব্রয়ারি বিজিবি বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করে এদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
নাফনদীতে সর্বোচ্চ সতর্ক বিজিবিঃ
মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে যাতে কোন রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে নাফনদীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ উপলক্ষে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) সকালে টেকনাফের দমদমিয়ায় নাফনদী সীমান্তে স্পীডবোট যোগে জালিয়ারদ্বীপে টহল বাড়িয়েছে বিজিবি।
রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানো হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নাফনদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি কোনো লোকজন যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল থেকে দমদমিয়ার নাফনদী সীমান্তে বিজিবির তিনটি স্পীড বোটের টহল অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে মিয়ানমারের মংডু থেকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে অনেক রোহিঙ্গা। তবে একজন রোহিঙ্গাও যাতে সীমান্ত ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু আমরা নতুন করে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। আজকে পর্যন্ত ১৩৭ জনকে প্রতিহত করা হয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় এই দিন সীমান্ত শান্ত ছিল।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে এবং উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির চলমান তুমুল লড়াই ও গোলাগুলির শব্দে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেনাসহ ৩৩০ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।