শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

কক্সবাজারে সামাজিক কুপ্রথা এবং জেন্ডার বিষয়ক কর্মশালা সম্পন্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও এফআইভিডিবি এর যৌথ আয়োজনে DFAT-AHP অর্থায়িত সেন্ট্রালিটি অফ প্রোটেকশন ইন প্রোট্রাকটেড ক্রাইসেস (সিপিপিসি) প্রকল্পের উদ্যোগে সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং নীতি নির্ধারণী মহলের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রোববার (২ মার্চ বিকেলে কক্সবাজার শহরের হোটেল ইউনি রিসোর্টে “সামাজিক ও জেন্ডার কু-প্রথা” বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ-দ্দৌজা। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল আউয়াল, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর, রোহিঙ্গা রেসপন্স এন্ড নেক্সাস তাহমিনা হক, চাইল্ড প্রটেকশন ইন ইমার্জেন্সি লিড রোমেনা আক্তার, এবং এফআইভিডিবি’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মহিউদ্দীন সরদার। এছাড়াও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার জিনিয়া পারভীন, সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার সামিউল হক চৌধুরী, জেন্ডার স্পেশালিষ্ট ফাহমিদা জাবিন কান্তা, প্রোগ্রাম সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর খাদিজা তুল কুবরা, চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিষ্ট জনার্দন কর্মকার, মনিটরিং স্পেশালিষ্ট স্পর্না রহমান, গভর্নমেন্ট লিয়াজু স্পেশালিষ্ট আব্দুল জলিল, কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট মাহবুব আলম এবং এফআইভিডিবি থেকে প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মো. সাহেল আহমেদ, টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর-চাইল্ড প্রটেকশন মোহাম্মদ শাহিন, চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার হাজেরা খাতুন, শরিফা খানম ও সৌরভ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
এফআইভিডিবি’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মহিউদ্দিন সরদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর খাদিজা তুল কুবরা, কর্মশালার উদ্দেশ্য ও প্রকল্প কার্যক্রম বর্ণনা করেন সামিউল হক চৌধুরী এবং কর্মশালার মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনা করেন জেন্ডার স্পেশালিষ্ট ফাহমিদা জাবিন কান্তা।

স্বাগত বক্তব্যে তাহমিনা হক বলেন, আমরা আজ এখানে একত্রিত হয়েছি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বিষয় নিয়ে। “ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা ও জেন্ডার বিষয়ে ধারণা পরিবর্তনে আমাদের করণীয়”। আমাদের সমাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত কিছু সামাজিক প্রথা ও বিশ্বাস রয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে নারী, শিশু এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।

আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও, বাস্তবে আমরা এখনো দেখি- বাল্যবিবাহ,নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য, গৃহস্থালি কাজের অসম ভারসাম্য, কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা-
এমন অনেক বিষয় আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান, যা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। আজকের কর্মশালা শুধুমাত্র কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না আমরা চাই, এই কর্মশালা থেকে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি হোক, যা আমাদের সমাজে সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুল আওয়াল বলেন সরকারি ও বেসরকারি যে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করে সবাই মিলে মিশে কাজ করলে মানুষের চিন্তাধারা এবং সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।

মোঃ মহিউদ্দীন সর্দার বলেন, আমরা এই বিষয়ে যতবেশি আলোচনা করব, সমাজ ততবেশি উপকৃত হবে। আসলে প্রচারেই প্রসার অন্তত এতে করে সবার বোধের উন্নয়ন ঘটবে। আর এটাই আমাদের লক্ষ্য। শুধু ডিগ্রি অর্জন করাটাই শিক্ষার বৈশিষ্ট্য নয় বরং আমাদের যে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে তা পারস্পরিক বুঝাপড়া ও বিনিময়ের মাধ্যমে একটি সমাজের দৃশ্যমান পরিবর্তন আনয়নেই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
সমাজে চলমান এই সব কুসংস্কার বন্ধকরণে আমরা সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারি এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্যেই আজকের এই আয়োজন। আজকে যা অর্জন করবো তা আমাদের মননে ধারণ করতে হবে লোক দেখানো লৌকিকতায় আটকে থাকলে চলবে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে, অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ-দ্দৌজা বলেন, সামজিক নিয়মগুলো আসলে পারিবারিক শিক্ষার অংশ। এটা পরিবার ও সমাজ থেকেই অভ্যস্থতায় আসে। আমাদের সমাজে বর্তমানে সামাজিক রীতি আগের চাইতে অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছে। কক্সবাজার যেহেতু পর্যটন এলাকা এখানকার ব্যাপার সারাদেশ থেকে আলাদা। আমাদের সামাজিক সম্প্রীতির অবস্থাটা আগের যায়গায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, গর্ভবতী ও বয়স্কদের যথাযথ সুবিধা ও সম্মান প্রদর্শণ করতে হবে। ইমাম সাহেবদের সমাজে বাড়তি একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে তারা চাইলেই মসজিদে বা প্রতি শুক্রবার নামাযে এই ব্যাপারে মুস্ললিদের সচেতন করতে পারেন।

কর্মশালায় উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারীগণ দলীয় কাজের মাধ্যমে সামাজিক ক্ষতিকর জেন্ডার প্রথা দূরীকরণে কর্মপরিকল্পনা করেন এবং ঐক্যমতে উপস্থিত হন যে, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, পারিবারিক সহিংসতা, মানব পাচার, পরিবারে ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষা ও বিকাশের ক্ষেত্রে সমান, বৈষম্যহীন সুযোগ প্রদান করবেন এবং এই সকল বিষয়ে সচেতনতা তৈরীতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করবেন।

কর্মশালার শেষে সমাপনী বক্তব্যে চাইল্ড প্রটেকশন ইন ইমার্জেন্সি লিড রোমেনা আক্তার সকলের রোযা থাকাবস্থায় মূল্যবান সময় প্রদান ও কর্মশালায় উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তিনি আরোও বলেন আমরা বিশ্বাস করি, যদি সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে একটি ন্যায়সঙ্গত, বৈষম্যহীন এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা সবাই আমাদের এই উদ্যোগে পাশে থাকবেন।

এনইউ /জই

সর্বশেষ

এই বিভাগের আরও খবর