কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারীদের হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার যুবক ফারুকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে কক্সবাজার সদরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আখতার জাবেদের আদালত এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত ) মো. মছিউর রহমান।
আসামি মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২২) চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নের চুনতি এলাকার বাসিন্দা। তিনি পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় থাকেন।
মছিউর রহমান বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নারীদের হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার ( ১৫ সেপ্টেম্বর ) আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার বিকালে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
পরিদর্শক বলেন, গ্রেফতার আসামি এখন কারাগারে রয়েছে। পরবর্তীতে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সমুদ্রসৈকতে নারীদের হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ভুক্তভোগী একজন বাদী হয়ে মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তিনটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোনো নারীকে একা পেলে কারো পোশাক পছন্দ না হলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান। এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
প্রথম ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি। একপর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক। ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই ‘তরুণী’ উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।
আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে দেখা যায়।
সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে তরুণীকে উঠবস করানো সেই যুবক।
এ সময় ওই তরুণী যুবককে দেখিয়ে বলছিলেন, উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।
এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এমএ/ জই