বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অনিয়ম তদন্তে দু’প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে ২ টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সোহেল মিয়া।
উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানান,অপর দু’টি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
এ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গভর্নিং বড়ি দফায় দফায় বৈঠক করছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে ।
তবে এ ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ১টি প্রতিষ্ঠানের ২২ জন শিক্ষক প্রধানকে অনাস্থা জ্ঞাপন করে তার অপসারণ দাবী করেছেন তারা।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট আলিম (ডিগ্রী) মাদরাসার শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলনে মাঠ রয়েছে।
তারা নানা অভিযোগ তুলে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অপসারণের দাবীতে ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন,বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
অপর দিকে ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবী কিছু শিক্ষক তাদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলছে। যা আদৌ সত্য নয়। তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্যে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে অনিয়মের বেসাতি বিলাচ্ছেন আর শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম থেকে মাঠে নামিয়ে অস্তিরতা ছড়াচ্ছে। ধ্বংস করছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
আর প্রশাসন পক্ষ থেকে থেকে বলা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তাদের কাছে যথানিয়মে অভিযোগ করলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবেন-নিচ্ছেন।
তবে অভিভাবকরা জানিয়েছেন,তারা চান প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস হউক। প্রধানদের বিষয়ে কমিটি ও সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক। শিক্ষার্থীদের দাবী খতিয়ে দেখা হউক। তবে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষকদের অসম্মান না করে সে দিকেও তাদের নজর দেয়ার গুরুত্বরুপ করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়,গত ১ সপ্তাহ ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট আলিম (ডিগ্রী) মাদরাসার, নাইক্ষ্যংছড়ি হাজি এমএ কালাম সরকারী ডিগ্রি কলেজ,বাইশারী স্কুল এন্ড কলেজ ও চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ সবে জড়িয়ে পড়েন কিছু অভিভাবক ও শিক্ষকও। তারা আড়ালে থেকেই সব কলকাড়ি নাড়ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে।
আর তার ই ধারাবাহিকতায় ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট আলিম (ডিগ্রী) মাদরাসার একদল শিক্ষার্থী তাদের অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবী করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালযের সামনে মানববন্ধন সহ বিক্ষোভ সমাবেশ করে তার সাথে দেখা করেন।
একই দাবীতে এ প্রতিষ্ঠানের ২২জন শিক্ষক নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে তার প্রতি অনাস্থা ও পদত্যাগ দাবী করেন। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দেখা করে তাদের অভিযোগও তুলে ধরেন।
এ সময় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মাস্টার তাজিম উদ্দিন,মৌলানা জাকারিয়া মাস্টার ছৈয়দুল বাশার, মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক, মোক্তার আহমদ, মো: ইছহাক, রোখসানা আক্তার , ইজ্জত আলী, গিয়াস উদ্দিন ও সাখাওয়াত হোসেন প্রমূখ ছিলেন।
জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বলেন,ক্লাস বর্জন নয়। প্রতিষ্ঠাসে ফিরে যান। তবে অভিযুক্ত প্রধানের বিষয় বুধবার সকালে সে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বড়ির সভা ডেকে প্রতিষ্ঠানকে সচল করার কথা জানান শিক্ষক -শিক্ষার্থীকে।
এর পর পক্ষদ্বয় উপজেলা চত্বর ত্যাগ করে ফিরে যান ।
এ বিষয় মদিনাতুল উলুম মাদরাসার অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন,কিছু শিক্ষকের উস্কানিকেই এ সব আন্দোলন হচ্ছে। তার শিক্ষার্থীরা এমন হওয়ার কথা নয়।
কেননা তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে গত একযুগ ধরে বান্দরবান জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিরোপা এনে দিয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানে অনেক ভবন করা ব্যবস্থা করেছেন।
তবুও শিক্ষার্থীদের তিনি কিছু বলবেন না। তবে শিক্ষকদের দায়ী করে তিনি বলেন,শিক্ষকরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করায় নিরাপত্তা জনিত কারণ ও অসুস্থতা জনিত কারণে তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ১ মাসের ছুটি নিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার সোহেল মিয়া (একাডেমিক সুপারভাইজার) বলেন,উপজেলায় ৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনিয়মের অভিযোগ উঠায় পৃথক ৪ টি কমিটি গঠন করে তদন্ত করার ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
প্রতিষ্ঠান গুলো হল নাইক্ষ্যংছড়ি হাজি এমএ কালাম সরকারী ডিগ্রি কলেজ,মদিনাতুল উলুম মাদরাসা,চাকঢাল মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা ও বাইশারী স্কুল এন্ড কলেজ।
তিনি আরো বলেন,প্রথমোক্ত ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একটু নাজুক। তবে পুরোপুরি তদন্ত শেষে সবক’টি প্রতিষ্ঠানে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কলেজ ও মদিনাতুল উলুমের বিষয়ে স্ব স্ব গভর্নিং বডি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বাকী তার অধিনস্থ ২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ২ টি কমিটি কাজ করছে। যা দ্রুত শেষ হবে। প্রমান পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
এমএ/ জই